খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ যে হটলাইন নম্বরে জানাবেন
সাধারণ জনগণের জন্য নিরাপদ খাদ্য–সম্পর্কিত তথ্য জানা কিংবা খাদ্যের মান নিয়ে যেকোনো অভিযোগ জানানোর সুযোগ একেবারে সীমিত। এ অবস্থার বদলানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে টোল ফ্রি হটলাইন চালু করেছে সংস্থাটি।
১৬১৫৫—এই নম্বরে ফোন করে খাদ্য–সম্পর্কিত যেকোনো পরামর্শ বা অভিযোগ জানানো যাচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এ নম্বর খোলা থাকছে। ২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবসে এ হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে।
‘জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য’—এ রূপকল্প সামনে রেখে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এ বিভাগের দায়িত্ব হচ্ছে খাদ্যের বিশুদ্ধতা ও বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করা। গঠনের আট বছর হতে চললেও কর্তৃপক্ষ কতটা সক্রিয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
১৬১৫৫—এই নম্বরে ফোন করে খাদ্য–সম্পর্কিত যেকোনো পরামর্শ বা অভিযোগ জানানো যাচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এই নম্বর খোলা থাকছে। ২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবসে এ হটলাইন নম্বরটি চালু করা হয়েছে।
নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি দেশের সব মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জনগণের সঙ্গে সংস্থার সরাসরি যোগাযোগের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। যে কেউ যেন দেশের যেকোনো জায়গা থেকে এ–সংক্রান্ত তথ্য জানতে কিংবা অভিযোগ ও পরামর্শ জানাতে পারেন, সে জন্য হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে।অমিতাভ মণ্ডল, অতিরিক্ত পরিচালক, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
এ পরিস্থিতিতে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০২১ সালের ১ জুলাই শুরু হওয়া ৪ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রকল্পটির অধীন হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে।
প্রকল্পের পরিচালক ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক অমিতাভ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি দেশের সব মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জনগণের সঙ্গে সংস্থার সরাসরি যোগাযোগের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। যে কেউ যেন দেশের যেকোনো জায়গা থেকে এ–সংক্রান্ত তথ্য জানতে কিংবা অভিযোগ ও পরামর্শ জানাতে পারেন, সে জন্য হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ১৬১৫৫ হটলাইন নম্বরের কল সেন্টারে দুই পালায় ছয়জন দায়িত্ব পালন করেন। কল সেন্টারে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের নিরাপদ খাদ্যসংক্রান্ত তথ্যের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কল সেন্টারের জন্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে ১৫ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা হয়েছে। কোনো সেবাপ্রত্যাশী ফোন দিয়ে বিশেষ কোনো তথ্য জানতে চাইলে এই প্যানেলের সদস্যরা সেটার উত্তর দিচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ৫টা ৪৫ মিনিটে ১৬১৫৫ হটলাইন নম্বরে ফোন করা হলে ওপর প্রান্ত থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নারীকণ্ঠের নির্দেশনা আসে। এরপর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একজন প্রতিনিধি ফোন ধরেন। কোনো তথ্য জানতে, নাকি অভিযোগ জানাতে ফোন করা হয়েছে, তা জানতে চান। হটলাইনে নম্বরে ফোন করা থেকে প্রতিনিধির ফোন ধরা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ায় সময় লাগে মাত্র ৪৫ সেকেন্ডের মতো।
হটলাইনে ফোন করে অভিযোগ জানানোর পরবর্তী প্রক্রিয়া কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে অমিতাভ মণ্ডল বলেন, এখন পর্যন্ত হটলাইনে নিরাপদ খাদ্যসংশ্লিষ্ট চারটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকার একটি ও ঢাকার বাইরের তিনটি। অভিযোগগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি সরেজমিন দেখে ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন দেবেন। অভিযোগের অগ্রগতির বিষয়ে অভিযোগকারীকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের হয়ে কল সেন্টারটি পরিচালনা করছে টেলিকনসাল্ট গ্রুপ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব বিজনেস কমিউনিকেশনস মোহাম্মদ ওয়াজী উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, হটলাইন নম্বরটি সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা বেশ কম। কল সেন্টারে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়েই বেশি ফোন আসছে। কিছু অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে।
হটলাইনের বিষয়ে মানুষকে জানাতে টেলিভিশন, পত্রিকাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। হটলাইন নম্বরসংবলিত স্টিকার ছাপানো হচ্ছে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের অধীন এ হটলাইন চালু ছাড়াও খাদ্যে ভেজাল রোধে ভ্রাম্যমাণ গবেষণাগার (মোবাইল ল্যাবরেটরি) চালু, খাদ্যের নমুনা বিশ্লেষণের জন্য সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে ছোট আকারের একটি গবেষণাগার স্থাপন, অংশীজন এবং সংশ্লিষ্ট খাদ্য ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ, দেশের খাদ্য স্থাপনা, রেস্তোরাঁ ও বাজারের হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ ও নজরদারির জন্য তথ্যভান্ডার তৈরি এবং বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।