এক যুগেও সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত শেষ না হওয়ায় সাংবাদিকদের ক্ষোভ
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার এক যুগ পরেও এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তে ব্যর্থতার পাশাপাশি বিচার নিয়ে আইনমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যে ক্ষোভ ও হতাশার কথা জানিয়েছেন সহকর্মীরা।
সহকর্মীরা বলছেন, ‘সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার ঘটনায় সঠিকভাবে দোষী নির্ণয়ে তদন্তের জন্য প্রয়োজনে ৫০ বছর সময় দিতে হবে’— আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এই বক্তব্য ‘উপহাস’ ও ‘মশকরার’ শামিল।
সাগর-রুনির ১২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) চত্বরে এক প্রতিবাদ সমাবেশে সহকর্মীরা এসব কথা বলেন।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাগর ও রুনি। সাগর সে সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত আদালতে জমা দেওয়ার তারিখ ১০৫ বার পিছিয়েছে। মামলাটি এখন তদন্ত করছে র্যাব।
ডিআরইউ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বিএফইউজে—বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যার বিচার হবে কেন? এর আগে আরও সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়নি। সাংবাদিক হত্যার বিচার হবে না, কোনো দিন হবে না। বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর (আসাদুজ্জামান খান) কাছে বহুবার গিয়েছি, বহুবার বলেছি—একটা সাংবাদিক হত্যার কারণগুলো কী, কেন বিচার হচ্ছে না, কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্লু উদ্ঘাটন করতে পারছে না, সেই বিষয়গুলো খুঁজে বের করতে আপনি একটি বিশেষ সেল গঠন করে দেন। অনেকবার রিকোয়েস্ট (অনুরোধ) করেছি। কিন্তু সেটি আর হয়নি।’
ওমর ফারুক বলেন, ‘উনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) কথা শোনেন, তেমন কোনো কথা বলেন না। হাঁ, হুঁ ইত্যাদি বলেই তিনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) শেষ করেন। আইনমন্ত্রী যেটা বলেছেন, ৫০ বছর লাগতে পারে, এ ধরনের মশকরা উনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) করেন না। এই দিক দিয়ে ওনার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) সুবিধা আছে। আইনমন্ত্রী যদি এটা বলে থাকেন, এটা জঘন্য মশকরা করেছেন। বিচার করবেন না, বলে দেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে মশকরা করেন কেন?’
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘আমি কখনোই কোনো সাংবাদিক হত্যার বিচার হতে দেখিনি। হত্যাকাণ্ড হয় তদন্ত শেষ হয় না, কিছুই হয় না। আইনমন্ত্রী সাহেব, আপনি ৫০ বছরের কথা (বিচার পেতে) বলেছেন। আপনি মশকরা করছেন। সাগর-রুনি হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের বিষয়টি কোথায় আটকে গেল, এখানে কিন্তু কী? এই কিন্তুটাই আমাদের বের করতে হবে।’
সাগর সরওয়ারের সহকর্মী মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রাশেদ আহমেদ বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যার প্রতিবাদ করতে করতে এক যুগ পেরিয়ে গেল। হত্যার রহস্যই উদ্ঘাটিত হলো না। এখানে প্রশাসনের ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু বলার নেই। সাংবাদিক হত্যার বিচার পেতে আর কত ধৈর্য ধরতে হবে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, প্রয়োজনে ৫০ বছর সময় দিতে হবে। এটা কোনো কথা হলো? একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী কি এটা বলতে পারেন? আমাদের কথা হলো, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই হত্যার তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে হবে এবং বিচার করতে হবে।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী বলেন, ‘আইনমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে হাসব নাকি কাঁদব, সেটাই বুঝতে পারছি না। এখন আদালতের প্রতি অনুরোধ হচ্ছে, তদন্তের সময়সীমা যেন আর বাড়ানো না হয়।’
প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ডিআরইউর সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী বলেন, সাগর-রুনি হত্যার বিচার পেতে কেন এক যুগ অপেক্ষা করতে হবে? কেন আপনারা খুনি চিহ্নিত করতে পারছেন না, কেন বিচার করতে পারছেন না, সেটা অন্তত জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শেখ মামুনুর রশীদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহীদুল ইসলাম, ডিআরইউর সাবেক সভাপতি শফিকুল করিম, মোরসালিন নোমানী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম তপু, নুরুল ইসলাম হাসিব প্রমুখ।