সবাইকে বাঁচাতে গিয়ে ভেসে যাওয়া ফরহাদের কবর হলো না নিজ গ্রামে

মেয়েকে কোলে নিয়ে দাঁড়ানো ফরহাদ খানের এ ছবি এখন কেবলই স্মৃতি। শুক্রবার সকালে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয় তাঁরছবি: সংগৃহীত।

বন্যার তীব্রতা বাড়তে থাকলে মা, স্ত্রী, সন্তানসহ স্বজনদের একে একে মিরসরাইয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিচ্ছিলেন ফরহাদ খান (৪০)। সব শেষে চাচাতো বোনসহ আরও কয়েকজন পানিবন্দী স্বজনকে উদ্ধার করে আনতে সাঁতরে গিয়েছিলেন বাড়ির এলাকায়। ততক্ষণে পানির স্রোত আরও বেড়ে যাওয়ায় গন্তব্যে যেতে পারেননি তিনি। বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। পানির স্রোতে ভেসে যান ফরহাদ।

গত শুক্রবার সকাল আটটার দিকে পানির স্রোতে ভেসে যাওয়া ফরহাদের মৃতদেহ উদ্ধার হয় সেদিনই দুপুরে। নিজ গ্রাম পানিতে ডুবে থাকায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করাও সম্ভব হয়নি তাঁকে। সব প্রক্রিয়া সেরে শুক্রবার দিবাগত রাত একটায় মিরসরাই উপজেলার পূর্ব হিঙ্গুলী এলাকায় নানার বাড়িতে কবর দেওয়া হয় ফরহাদ খানকে।

পেশায় খামারি ফরহাদ খান ফেনী জেলা সদরের কালিদহ ইউনিয়নের চিলোনিয়া গ্রামের মৃত সিদ্দিক আহমদের ছেলে। গতকাল শনিবার সকালে মিরসরাই উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামে ফরহাদের নানাবাড়ি গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। ফরহাদ মারা যাওয়ার আগে পরিবারের লোকজন ও স্বজনদের উদ্ধার করে এ বাড়িতে এনে রেখেছিলেন।

ফরহাদ খানের মামা বেলায়েত হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করলে ফরহাদ নিজের পরিবারসহ আত্মীয়স্বজনকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসতে মরিয়া ছিলেন। প্রায় সবাইকে নিয়ে আসার পর এক চাচাতো বোন ও আরও কয়েকজন আত্মীয় আটকা পড়ে আছে শুনে আবারও বাড়ির এলাকায় গিয়েছিলেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটায়ও তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখন জানিয়েছিলেন নৌকার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। কে জানত নৌকা ছাড়া সাঁতরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন তিনি। গত কয়েক দিনে পরিবারের লোকজনসহ অনেক স্বজনকে উদ্ধার করে এনেছেন। সবাইকে নিরাপদে পৌঁছে দিয়ে ছেলেটাই চলে গেল।

ফরহাদ খানের ফুফাতো ভাই জহুরুল হক বলেন, ‘আমাদের আত্মীয়ের মধ্যে ফরহাদ ছিলেন সৎ ও সাহসী। বাড়িতে গরু আর মুরগির খামার ছিল তাঁর। তিন ভাইয়ের মধ্যে ফরহাদ ছিলেন বড়। মা, স্ত্রী আর ছোট এক ছেলে ও দুটি মেয়ে নিয়ে ছিল তাঁর সুখের সংসার। এই বন্যার পানি সব কেড়ে নিয়ে গেল।’