মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে অনিয়মের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সবকিছু তদন্ত হবে। এমপি জানি না, চিনি না, রিক্রুটিং এজেন্সি চিনি। দায়ী হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো নিয়ে চক্র গঠন করে ব্যাপক অনিয়ম ও হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এ বাণিজ্যের সঙ্গে চারজন সংসদ সদস্যের (এমপি) সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁদের বিষয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। মালয়েশিয়া শ্রমবাজার পরিস্থিতি নিয়ে আজ রোববার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান বলেন, যে বা যাঁরা দোষী সাব্যস্ত হবেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলবে। সরকার কাজ করে যাচ্ছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে গঠিত চক্রের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সিন্ডিকেটে (চক্র) বিশ্বাস করি না। যে দেশ কর্মী নেবে, তারা যদি তাদের পছন্দের রিক্রুটিং এজেন্সি দিয়ে কর্মী নিতে চায়, সেটা তাদের বিষয়। সরকার চায়, সবার মাধ্যমে কর্মীরা বিদেশে যাক।’ তবে মালয়েশিয়াকে এজেন্সি বাছাইয়ের সুযোগ দিলে আবারও চক্র হবে কি না, প্রথম আলোর এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী নির্দিষ্ট করে কোনো উত্তর দেননি।
শেষ দিকে কর্মীদের ছাড়পত্র অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, যখন ছাড়পত্র চাওয়া হয়েছে, তখনই দেওয়া হয়েছে। কর্মীদের উড়োজাহাজ টিকিট নিশ্চিত করতে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিমানের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ২৩টি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় কোনো গাফিলতি করেনি। এ ছাড়া কর্মীদের মালয়েশিয়ায় যাওয়া নিশ্চিত করতে সময় এক সপ্তাহ বাড়াতে দেশটির সরকারকে অনুরোধ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। এখনো তাদের পাঠাতে সরকার কাজ করছে।
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর আগে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিতে হয় রিক্রুটিং এজেন্সির।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার শ্রমবাজার চালুর পর মালয়েশিয়ায় যেতে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৬ কর্মীর অনুমোদন নেয় ১০১টি এজেন্সি। এর মধ্যে সব কর্মীর জন্য মালয়েশিয়া থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তাই বিএমইটি থেকে শেষ পর্যন্ত সব এজেন্সি মিলে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ কর্মীর ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন। আর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশটিতে যেতে পারেননি ১৬ হাজার ৯৭০ কর্মী।
তদন্ত কমিটি গঠন
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম খুঁজে বের করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অতিরিক্ত সচিব (কর্মসংস্থান) নূর মো. মাহবুবুল হককে প্রধান করে আজ রোববার ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতেও কাজ করবে এ কমিটি। এ ছাড়া যে কেউ চাইলে এই তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ করতে পারবেন। সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার বেশি টাকা নেওয়া হলে তা জানাতে পারবেন কর্মী। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে সুপারিশ করবে তদন্ত কমিটি।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মালয়েশিয়া যেসব কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে, তাদের নামে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি। ছাড়পত্র পেয়েও যাঁরা যেতে পারেননি, তাঁদের টাকা রিক্রুটিং এজেন্সি ফেরত দেবে। বায়রা এটার দায়িত্ব নিয়েছে। আর যদি কর্মীদের টাকা ফেরত দেওয়া না হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাজ না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, কর্মীদের নিতে দেশটির বিমানবন্দরে আসেন নিয়োগকর্তা। গত কয়েক মাসে কোনো কর্মীকে নিতে না আসার ঘটনা ঘটেনি। আগে যে পাঁচ হাজার কর্মী কাজ পাননি, তাঁদের কাজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।