তরুণদের অধিকার আছে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার: ফরহাদ মজহার

কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার ‘বাংলাদেশের ছাত্র বিপ্লব: ২০০৭-২৪: শিক্ষাব্যবস্থা ও রাষ্ট্র সংস্কার করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। ঢাকা, ২১ সেপ্টেম্বরছবি: দীপু মালাকার

তরুণদের মাধ্যমে প্রকাশিত জনগণের প্রত্যাশা বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলো মেটাতে না পারলে নতুন রাজনৈতিক দল প্রয়োজন বলে মনে করেন কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, তরুণদের অধিকার আছে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার।

‘বাংলাদেশের ছাত্র বিপ্লব: ২০০৭-২৪: শিক্ষাব্যবস্থা ও রাষ্ট্র সংস্কার করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরহাদ মজহার এ কথাগুলো বলেন। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস।

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এই গণ-অভ্যুত্থান একটা জায়গায় গিয়ে ঠেকে গিয়েছে। এই গণ-অভ্যুত্থানকে পূর্ণ করার জন্য অবশ্যই তরুণদের একটা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার প্রয়োজন হতে পারে। এটাই দাঁড়াবে, আমরা চাই বা না চাই।’

নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার অধিকার তরুণদের আছে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, তরুণদের মধ্য দিয়ে জনগণের যে ইচ্ছা প্রকাশিত হয়েছে, তা যদি রাজনৈতিক দলগুলো মেটাতে পারে, অবশ্যই তরুণদের আলাদা রাজনৈতিক দল লাগবে না। আর যদি ধারণ করতে (রাজনৈতিক দলগুলো) না পারে, তাহলে তরুণদের অবশ্যই একটা নতুন রাজনৈতিক দল লাগবে।

তরুণদের উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, একবার দল করব, একবার করব না—এই বিভ্রান্তিতে ভোগা ভুল। যদি দল করতে চান, অবশ্যই দল করবেন। কেন দল করবেন, সেটা সঠিকভাবে জনগণকে বোঝাতে হবে।

রাজনীতির মূল যে বিষয়গুলো সমাজে এসে গেছে, সেটাকে জোর করে পিছিয়ে দেওয়া যাবে না উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, সরকার নির্বাচন ও গণপরিষদ নির্বাচন মূল তর্কের বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলো যদি গণপরিষদ নির্বাচন চায়, তাহলে তাদের লক্ষ্য হবে নতুন বাংলাদেশ গঠন, পুরোনো সংবিধান ফেলে দেওয়া। অন্তর্বর্তী সরকার যদি সেটা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর সেই কর্তব্য বর্তাবে।

নির্বাচন দেশের জন্য কোনো সমাধান নয় বলেও মনে করেন ফরহাদ মজহার। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সিস্টেমকে রেখে এখানে-ওখানে দু-একটা সংস্কার করে আবারও আওয়ামী লীগের মতো ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছেন। এটা কিন্তু তরুণেরা গ্রহণ করবেন না।

পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, তা খুব সহজেই সমাধান করা সম্ভব হতো বলে মনে করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অধিবাসীর, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার যে অধিকার, এটা তো মানতে হবে। ওরা তো আমাদের রাষ্ট্রের অন্তর্গত, বাইরের নয়। তাহলে তারা কেমন বাংলাদেশ রাষ্ট্র চায়, তাকে তো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’ তিনি বলেন, এটা তো রাজনৈতিক সংকট। তাদের রাজনৈতিক সংলাপে আনতেই হবে। আর কোনো বিকল্প নেই।

পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করা খুব সহজ মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘ভারত নানাভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর মধ্যে বাইরের উসকানি আছে। বাইরের উসকানিকে আমরা আগুনের মধ্যে তেল দিচ্ছি।’

অন্তর্বর্তী সরকার শুরুতেই সব শ্রেণি-পেশা ও গোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে আলাপ করলে পার্বত্য চট্টগ্রাম, আনসার বিদ্রোহ ও শ্রমিক বিদ্রোহের মতো ঘটনাগুলো ঘটত না বলেও মনে করেন ফরহাদ মজহার।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও শক্তিকে বৈধতা দেওয়ার নির্বাচনে না যাওয়ার দীর্ঘ আপসহীন অবস্থান না নিলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সম্ভব হতো না বলে মনে করেন ফরহাদ মজহার। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত ছিল প্রথমে তাঁকে গিয়ে অভিনন্দন জানানো।’

রাষ্ট্র ও সরকারকে আলাদাভাবে বুঝতে পারতে হবে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, এটা না পারলে পুলিশ মনে করবে সে রাষ্ট্রের কর্মচারী নয়, সরকারের কর্মচারী। ফলে সে আওয়ামী লীগের (সরকারের থাকলে) নির্দেশ শুনবে। আমলারা ভাববেন যে তাঁর কাজ রাষ্ট্রের সেবা করা নয়, আওয়ামী লীগের সেবা করা। যদি বিএনপি ক্ষমতায় যায়, তাদের সেবা করবে।

নো ভ্যাট অন এডুকেশনের মুখপাত্র ফারুক আহমাদের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন প্রমুখ।