উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
এই বক্তব্যে অটল থাকলে তাঁর রাষ্ট্রপতি থাকার যোগ্যতা আছে কি না, উপদেষ্টামণ্ডলী ভেবে দেখবেন
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে ‘মিথ্যাচার’ বলেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, এটা হচ্ছে রাষ্ট্রপতির শপথ লঙ্ঘনের শামিল। তিনি যদি তাঁর বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে তাঁর রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না, সেটি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখতে হবে।
আজ সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং এটা হচ্ছে ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল। কারণ, তিনি নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।’
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় কী আছে, সে বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে আপিল বিভাগের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই উপদেশমূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে জানতে চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন যিনি প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবং অন্য বিচারপতিরা মিলে একটি মতামত দেন। সেই মতামতের প্রথম লাইনটি হচ্ছে, দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন...। তারপর অন্যান্য কথা। রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, এসব কথা। এই রেফারেন্সে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতির স্বাক্ষর আছে।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই যে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এই মতামতের ভিত্তিতে একটি নোট আমরা মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে প্রেরণ করি। রাষ্ট্রপতি এই অভিমত দেখেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। এরপর তিনি নিজেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্রপতি ৫ আগস্ট রাতে নিজের ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাঁর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন। এরপর একের পর এক কার্যাবলির মধ্য দিয়ে এটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত, তিনি পুরো জাতির কাছে নিশ্চিত এবং পুনর্বার নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন। এখন প্রায় আড়াই মাস পর যদি উনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দেননি, এটা একধরনের স্ববিরোধিতা হয়, এটি ওনার শপথ লঙ্ঘন হয় এবং এ পদে থাকার আর ওনার যোগ্যতা আছে কি না, সে সম্পর্কে প্রশ্ন আসে।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, আপনার যদি শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা না থাকে বা আপনি যদি গুরুতর অসদাচরণ করেন, তখন রাষ্ট্রপতি হিসেবে আপনি থাকতে পারেন কি না, সেটা নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ সংবিধানে রয়েছে।’
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘এত কিছুর পর উনি (রাষ্ট্রপতি) এটা কীভাবে বলতে পারেন, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার, ওনার বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তিনি এটি গ্রহণ করেছেন। এখন তাঁর স্ববিরোধী কথাবার্তা বলার কোনো রকম সুযোগ নেই। যদি তিনি এই বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে ওনার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না, সেটা আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখতে হবে। এটি উপদেষ্টামণ্ডলীতে আলোচনা হতে পারে। বিষয়টি আলোচনা হওয়ার মতো মনে হচ্ছে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র সরকারের কাছে আছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপতির দপ্তরে থাকার কথা। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, এটি নিয়ে আদালতেও প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। এটি ওনার কাজ। উনি নিজেই বলেছেন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তিনি গ্রহণ করেছেন। এখন উনি যদি বলেন নেই, তাহলে পদত্যাগপত্র কী করেছেন, ওনাকেই জিজ্ঞাসা করেন।’
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘যদি আপনি আপনার নিজের কথা, পুরো জাতির সামনে বলা কথা স্ববিরোধিতা, সেটা তো অসদাচরণের পর্যায়ে পড়ে। তখন এই প্রশ্ন আসে, আপনার আসলে মানসিক সক্ষমতা আছে কি না, রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে। এ প্রশ্নগুলো আসতে পারে। এই প্রশ্নগুলো আসার সুযোগ তিনি তৈরি করে দিয়েছেন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ বিভিন্ন জায়গায় যখন দেখি, পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তিরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ-আয়োজন করছে, তখন হঠাৎ করে তিনি (রাষ্ট্রপতি) আড়াই মাস পর এমন কথা বললেন কেন, সেটা নিয়ে সমাজে প্রশ্ন আসতে পারে, প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক।’