সিলেটে বৃষ্টি-ঢলে পানি, এক ট্রাকে চার পরিবারের আশ্রয়

গরু-ছাগলসহ ৪টি পরিবার সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে একটি ট্রাকে আশ্রয় নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে জৈন্তাপুরের বিরাইমারা এলাকায়
ছবি: আনিস মাহমুদ

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

গতকাল বুধবার রাতে ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় জৈন্তাপুরের বিরাইমারা গ্রামের চার পরিবারের ১৫ জন সদস্য রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা একটি ট্রাকে আশ্রয় নিয়েছেন।

সরেজমিনে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিরাইমারা এলাকায় দেখা যায়, সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের জৈন্তাপুরে রাস্তার পাশে ১০টি ট্রাক দাঁড় (পার্কিং) করিয়ে রাখা। এর মধ্যে একটি ট্রাকে শামিয়ানা টাঙানো। ওই ট্রাকে অবস্থান করছিলেন নারী–শিশুসহ ১৫ জন। ট্রাকের নিচে বাধা পাঁচটি ছাগল। পাশে বাঁধা রয়েছে একটি গরু।

ট্রাক থেকে নেমে কিছু সময় পরপর রাস্তার পাশের পরিবেশ বোঝার চেষ্টা করছিলেন বড়রা। সঙ্গে ট্রাকের নিচে থাকা ছাগলগুলোকে খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করছিলেন।

গভীর রাতে ঘরে পানি উঠতে শুরু করেছিল। এরপর সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে একটি ট্রাকে শামিয়ানা টাঙিয়ে আশ্রয় নেয় ৪টি পরিবার। বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের জৈন্তাপুরের বিরাইমারা এলাকায়
ছবি: আনিস মাহমুদ

এর একটি ট্রাকে গতকাল রাতে আশ্রয় নেওয়া বিরাইমারা গ্রামের ওয়াহিদ মিয়া (৫৫) বলেন, ট্রাকে এখন পর্যন্ত তাঁরা চার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে ঘরে পানি উঠতে শুরু করেছিল। এরপর ভোর চারটার দিকে ঘরে আর থাকা যাচ্ছিল না। পরে গরু-ছাগলসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে অবস্থান নেন। সেখানে একটি ট্রাকে রাতেই শামিয়ানা টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এরপর আরও তিনটি পরিবার তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে।

একই গ্রামের কালু মিয়া (৪৮) বলেন, এমন পরিস্থিতি আগে হয়নি। হঠাৎ পানি বেড়ে গিয়েছিল। এরপর পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে সড়কেই রাত কাটিয়েছেন। সকালে ভাত রান্না করে সবাই কিছু কিছু খেয়েছেন। পানি না নামলে তাঁদের কী অবস্থা হবে, বুঝতে পারছেন না। ট্রাকে অবস্থান নেওয়া মরিয়ম বেগম (৪৫) বলেন, ঢলের পানিতে ঘরে থাকা হাঁস-মুরগি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

ট্রাকের নিচে বাধা পাঁচটি ছাগল। পাশে বাঁধা রয়েছে একটি গরু। সেগুলোকে খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করছিলেন এই ব্যক্তি
ছবি: আনিস মাহমুদ

বিল্লাল হোসেন (৫০) নামের একজন বলেন, তাঁরা মূলত পাথরশ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান। ঘরে যা ছিল, অনেকের সেগুলো বন্যার পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। খাওয়ার তেমন কিছু নেই। বন্যা পরিস্থিতিতে পরিবার নিয়ে কীভাবে কাটাবেন, সেটি নিয়ে চিন্তিত তাঁরা।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে সিলেটে ৭০৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটি গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। ২০২৩ সালের মে মাসে সিলেটে ৩৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। তবে এর আগের বছর ২০২২ সালের মে মাসে ৮৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। ওই বছর সিলেটে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল।