আরও এক মাস বন্ধ থাকতে পারে সামিটের এলএনজি টার্মিনাল

কক্সবাজারের মহেশখালীতে সামিটের ভাসমান টার্মিনালফাইল ছবি

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল আছে। এর মধ্যে সামিটের টার্মিনালটি ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এটি থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ আছে আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে। এটি চালু হতে আরও এক মাস লাগতে পারে। এর ফলে চলমান গ্যাস–সংকট শিগগিরই কাটছে না।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সামিট জানিয়েছে, সমুদ্রের অবস্থা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মাসের শেষ দিকে টার্মিনালের ডিটিএম প্লাগটি পুনঃস্থাপন ও পুনঃসংযোগ দিতে পারবে। এরপর আগামী মাসের মাঝামাঝি এলএনজি সরবরাহ শুরুর জন্য এটি তৈরি হবে।

এ নিয়ে টার্মিনাল চালুর তারিখ কয়েক দফা পেছাল। গত ১১ জুলাই এটি চালুর কথা ছিল। এরপর বলা হয় জুলাইয়ের শেষ দিকে চালু হতে পারে। সবশেষ আগস্টের শুরুতে চালুর কথা বলা হয়েছিল জ্বালানি বিভাগ থেকে।

গত ২৭ মে রিমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সামিটের টার্মিনাল। এরপর এটি মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। মেরামত শেষে দেশে ফেরার পর গ্যাস সরবরাহ চালুর আগেই আবার দুর্ঘটনায় পড়ে সামিটের টার্মিনাল। এখন এটি মেরামতে নতুন করে একটি দক্ষ জাহাজ ও দল আসছে।

দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। দিনে সর্বোচ্চ সরবরাহ করা হয় ৩০০ থেকে ৩১০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত। এর মধ্যে এলএনজি থেকে আসে ১১০ কোটি ঘনফুট। একটি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় এখন মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনাল থেকে দিনে এলএনজি সরবরাহ হচ্ছে ৬০ কোটি ঘনফুট। দিনে মোট গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে ২৬০ কোটি ঘনফুট। এতে শিল্পকারখানাসহ বিভিন্ন খাতে গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে সামিট জানিয়েছে, ১১ জুলাই সমুদ্রের তলদেশে ডিসকানেক্টেবল টারেট মুরিং (ডিটিএম) প্লাগ ও ল্যান্ডিং প্যাডের সঙ্গে টার্মিনালটি নোঙর করার প্রস্তুতির সময় আকস্মিকভাবে ডিটিএম বয়া মেসেঞ্জার লাইনে জটলা বাঁধে, মেসেঞ্জার লাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় ডুবুরিরা এ জটলা খুঁজে পান। ক্ষতিগ্রস্ত মেসেঞ্জার লাইনটি সমুদ্রের তলদেশ থেকে উদ্ধারের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে অধিকতর পর্যবেক্ষণের জন্য গভীর সমুদ্রে ডুব দিতে পারদর্শী, এমন ডুবুরি ও ডাইভিং সাপোর্ট ভেসেল (ডিএসভি) প্রয়োজন।

জুলাইয়ে সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি লিমিটেড নরওয়েভিত্তিক বিশ্বখ্যাত দুই মেরিটাইম প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাকগ্রেগর’ ও ‘ক্যান সিস্টেম’ এবং সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘শেলফ সাবসি’কে নিযুক্ত করেছে। যাতে সামিটের ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটের (এফএসআরইউ) সমুদ্রের তলদেশে থাকা ল্যান্ডিং প্যাডের ডিসকানেক্টেবল টারেট মুরিং (ডিটিএম) প্লাগ ত্রুটিমুক্ত করে নিরাপদে মুরিং করতে পারে। এর আগে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গভীর সমুদ্রের ডুবুরি দল কর্তৃক ত্রুটি চিহ্নিত করলেও সমুদ্রের তীরবর্তী এলাকায় প্রতিকূল আবহাওয়া ও পানির তলদেশ দৃশ্যমান না হওয়ায় মেরামতের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।

বিজ্ঞপ্তি বলছে, জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে টার্মিনালটি পুনঃসংযোগ দিতে হলে ডিটিএম প্লাগটি ল্যান্ডিং প্যাডের (সমুদ্রপৃষ্ঠে অবস্থিত) মধ্যবর্তী স্থানে পুনরায় স্থাপন করতে হবে। এ জন্য অ্যাংকর হ্যান্ডেলিং টাগ (এএইচটি) কোরাল প্রস্তুত করা হলেও সেটি ডিটিএম পুনঃস্থাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ করতে পারেনি। এই ডিটিএম সরাতে আরও বেশি শক্তিশালী ও সক্ষম ক্রেন আনার জন্য সামিট ইতিমধ্যে ‘ওরিয়েন্টাল ড্রাগন’ নামের একটি ডাইভিং সাপোর্ট ভেহিকলের (ডিএসভি) সঙ্গে চুক্তি করেছে, যেটি সিঙ্গাপুর থেকে ২২ আগস্ট মহেশখালীতে পৌঁছাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।