আরাভ–কাণ্ডে পুলিশের সাবেক বড় কর্মকর্তার নাম শুনি, মুখে আনতে পারি না: আসিফ নজরুল
ঢাকায় পুলিশ হত্যার আসামি রবিউল ইসলাম দুবাইয়ে আরাভ খান নামে সোনার বড় ব্যবসায়ী বনে গিয়েছেন। এ নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনার মধ্যে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, এই ঘটনায় পুলিশের সাবেক একজন বড় কর্মকর্তার নাম শোনা যাচ্ছে। কিন্তু ভয়ে সেই নাম তাঁরা মুখে আনতে পারছেন না।
এ কথা বলে দেশে বাক্স্বাধীনতার কী অবস্থা, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, ‘দেশে দিনের পর দিন ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ছে। আর দিনমজুরের ছেলে সোনা দিয়ে লোগো বানায়। তা–ও মাত্র ৪-৫ বছরে। কী পরিমাণ টাকা লুটপাট। এটা কি তাঁর টাকা? আমরা পুলিশের সাবেক একজন বড় কর্মকর্তার নাম শুনি। তাঁর নাম আমরা নিতে পারছি না। সবাই জানি আমরা। পুলিশের নাম, কিন্তু আমরা নিতে পারি না—এই বাক্স্বাধীনতা আমাদের সংবিধানে বলা আছে?’
গত বুধবার রাতে দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুকে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন হয়। সেখানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদনজগতের বেশ কয়েকজন তারকা উপস্থিত হয়েছিলেন।
গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যমতে, আরাভ জুয়েলার্স নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আরাভ খানের আসল নাম রবিউল ইসলাম। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তাঁর বাড়ি। তিনি সোহাগ মোল্লা, হৃদয় শেখ, আপন—এ রকম কয়েকটি নামে পরিচিত। ২০১৮ সালের ৭ জুলাই ঢাকায় পুলিশের একজন পরিদর্শক মামুন এমরান খান খুন হন। সেই খুনের আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি। ডিবি বলছে, দেশ থেকে পালিয়ে রবিউল ইসলাম প্রথমে ভারতে যান। সেখানে আরাভ খান নামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে দুবাই চলে যান। এখন তিনি দুবাইয়ের বড় সোনা ব্যবসায়ী।
আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন উপলক্ষে ৬০ কেজি সোনা দিয়ে বানানো হয় বাজপাখির আদলে লোগো, যা তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।
সদ্য আত্মপ্রকাশ করা সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (সিপিডিএস) নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে ‘সংবিধানে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেন আসিফ নজরুল। সেমিনারে মূল বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা কি এরশাদ সরকারের সময় স্লোগান দিইনি যে এরশাদের চামড়া তুলে নেব আমরা? খালেদা জিয়ার আমলে স্লোগান হয় নাই যে খালেদা জিয়ার চামড়া তুলে নেব আমরা? এখন প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, পুলিশ কমিশনারের চামড়া তুলে নেব আমরা বলে দেখেন না, কী অবস্থা হয়।’
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, এ দেশের জনগণের ভোটাধিকার মানা হয়নি দেখে দেশ ভেঙে এই দেশ গঠন করা হয়েছে। ’৭২–এর সংবিধানের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে প্রকৃত জনপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা থাকবে। অবাধ নির্বাচন হবে। সাচ্চা জনপ্রতিনিধিরা দেশ শাসন করবে দেশের কল্যাণের জন্য। কোনো দুর্নীতিবাজকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য নয়, বৈষম্য করার জন্য নয়, ব্যাংকের টাকা লুটপাট, সম্পদ পাচার করার জন্য নয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য নয়।
সেমিনারে আলোচনায় সাবেক রাষ্ট্রদূত সাকিব আলী বলেন, দেশের জনগণ যেন ক্ষমতায়িত না হয়, সেই প্রবণতা আমাদের শাসনব্যবস্থায় সব সময় রয়েছে।
দেশে যখন যারা ক্ষমতায়, সংবিধানে কী আছে না আছে, সেটা তাদের কাছে সব সময় অপ্রাসঙ্গিক থেকেছে বলে মনে করেন আইনজ্ঞ ইকতেদার আহমেদ। তিনি বলেন, সংবিধানে প্রত্যক্ষ ভোটের কথা বলা হয়েছে। আমাদের দশম সংসদ নির্বাচনে সবাই কি প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছে?
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডিএসের সভাপতি মোস্তফা কামাল মজুমদার ও সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির নির্বাহী সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী। এ সময় আরও বক্তব্য দেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল লতিফ।