চা–শ্রমিকদের মজুরি বাড়ল ৫০ টাকা
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চা–বাগানমালিকদের বৈঠকে শ্রমিকদের ন্যূনতম দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এত দিন ১২০ টাকা মজুরিতে কাজ করেছিলেন তাঁরা। সে হিসাবে শ্রমিকের দৈনিক মজুরি বেড়েছে ৫০ টাকা। এর সঙ্গে প্লাকিং বোনাস (বাড়তি পাতা তোলার জন্য অর্থ), উৎসব ভাতা, ভবিষ্য তহবিলসহ অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা আনুপাতিক হারে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শ্রমিকদের বার্ষিক ছুটি ও অসুস্থতাজনিত ছুটিও বাড়বে।
দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করেছিলেন চা–শ্রমিকেরা। চা–বাগানগুলোতে চলছিল ধর্মঘট। এই প্রেক্ষাপটে আজ শনিবার বিকেলে চা–বাগানমালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চা–বাগানমালিক এম শাহ আলমের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস সাংবাদিকদের কাছে সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন।
আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘চা–শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মজুরি নির্ধারণের পাশাপাশি বার্ষিক ছুটি, বেতনসহ উৎসব ছুটি আনুপাতিক হারে বাড়বে। অসুস্থতা ছুটি বাড়ানো হবে। চিকিৎসা ব্যয়ের চাঁদা মালিকপক্ষ বহন করবে। ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তার চাঁদা আনুপাতিক হারে বাড়বে।’
এ ছাড়া ভর্তুকি মূল্যে রেশন সুবিধা বাড়ানো হবে। চিকিৎসাসুবিধা, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের পেনশন, চা–শ্রমিকদের পোষ্যদের শিক্ষা বাবদ ব্যয়, রক্ষণাবেক্ষণ, গোচারণভূমি বাবদ ব্যয়, বিনা মূল্যে বসতবাড়ি ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ শ্রমিককল্যাণ কর্মসূচি এবং বাসাবাড়িতে উৎপাদন বাড়বে। সবকিছু মিলিয়ে দৈনিক মজুরি সাড়ে চার শ থেকে পাঁচ শ টাকার মতো পড়বে।
প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে শ্রমিকদের কাজে ফিরতে বলেছেন বলে জানান মুখ্য সচিব। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন চা–শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলে মজুরি বাড়াবেন, সেটা উনি করেছেন। আগামীকাল থেকে চা–শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বলেছেন তিনি। শিগগিরই চা–শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন।’
প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের চা–শ্রমিকদের দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার। প্রধানমন্ত্রী মালিকপক্ষের সাথে আলোচনা করে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেছেন। এ ছাড়া রেশন, চিকিৎসা, ঘরসহ অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা বাড়ানোর জন্য বলেছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের চা–শ্রমিকেরা আগামীকাল থেকে কাজে যোগদান করবে।’
গণভবনে বৈঠকে উপস্থিত একজন চা–বাগানমালিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দুই পক্ষের কথাই খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। তিনি শ্রমিকদের প্রতি যেমন সহানুভূতিশীল ছিলেন, তেমনি মালিকেরা যেসব সুযোগ–সুবিধা শ্রমিকদের দেন, সেসব শোনার পরে বলেছেন, এত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, তা কেন প্রচার করা হচ্ছে না?’
শ্রমিকদের কী কী সুযোগ–সুবিধা দেওয়া হয়, সেগুলো তুলে ধরেছেন ওই বাগানমালিক। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসে একজন শ্রমিককে ২ টাকা কেজি দরে ৪৬ কেজি চাল দিই। যে স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা দেওয়া হয়, সেটির বাজারমূল্য সাড়ে সাত হাজার টাকা। এ ছাড়া তাদের থাকার জন্য পরিবারপ্রতি দেড় হাজার বর্গফুট জমিতে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। চা–শিল্পে ১৯৪৮ সাল থেকেই শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যক্রম রয়েছে।’
মজুরি বাড়ানোর দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি এবং ১৩ আগস্ট থেকে সারা দেশের চা–বাগানগুলোয় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট করেছিলেন শ্রমিকেরা। দাবি আদায়ে গত কয়েক দিন উত্তাল ছিল চা–বাগানগুলো। আন্দোলন সফল করতে শ্রমিকদের সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করতে দেখা গেছে।