ডায়াবেটিস প্রতিরোধে রক্তের শর্করা মাপার গুরুত্ব ও করণীয়

বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ, যা ২০৪৫ সালের মধ্যে বেড়ে ২ কোটি ২০ লাখে পৌঁছাতে পারে। এ ধরনের বাস্তবতায় আরও সতর্কতা এবং ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় বিজ্ঞানসম্মত উপায় অবলম্বন করা দরকার। তাই এর নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা দিয়েছেন কিছু পরামর্শ।

ডায়াবেটিস: প্রকোপ ও জটিলতা

ডায়াবেটিস রোগীরা নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগতে পারেন। যেমন হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, অন্ধত্ব এবং স্নায়ুর সমস্যায় আক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস প্রজননক্ষমতাও হ্রাস করতে পারে এবং সাধারণ জীবনমানকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। কিডনি বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান মো. নজরুল ইসলামের মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের ৫০ শতাংশের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। এসব জটিলতা এড়াতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে তিনটি বিষয় বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে—ভোজন, ভ্রমণ ও ওজন। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চললেই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। ঢাকা মেডিকেল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বলেন, ‘সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া, মানসিক চাপ কমানো এবং পর্যাপ্ত ঘুম ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।’

রক্তের শর্করা পরীক্ষা কেন জরুরি

ডায়াবেটিসের প্রকোপ এবং এর জটিলতা মোকাবিলা করতে রক্তের শর্করা পরীক্ষা একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ। বয়স ৩০ বছর পার হলেই নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা করা উচিত। কারণ, ডায়াবেটিস প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা গেলে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘ডায়াবেটিস রোগীকে নিজের রক্তের শর্করা মাপার কৌশল শিখতে হবে। এতে দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় এবং রোগের ঝুঁকি কমানো যায়।’

নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ মনিটরিং

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষদের জন্য রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। রক্তের গ্লুকোজের নিয়মিত পরীক্ষা করার মাধ্যমে দেখা যায়, জীবনযাত্রার পরিবর্তনগুলো কীভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। পাশাপাশি এটি কীভাবে ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সাহায্য করে।

সুতরাং নিয়মিত গ্লুকোজ মনিটরিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ‘গ্লুকোমিটার’। বাজারে নানা মানের ও ব্র্যান্ডের গ্লুকোমিটার পাওয়া যায়। যা মানসম্মত না হলে সঠিক ফলাফল না-ও পেতে পারেন। আবার এর ‘স্ট্রিপ’ (যেটিতে রক্ত ফেলা হয়) সহজলভ্য কি না, সেটা জেনে নেওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের যাচাই করা দরকার, যে গ্লুকোমিটারটি তিনি ব্যবহার করছেন সেটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মান যাচাই প্রক্রিয়ায় উত্তীর্ণ কি না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, বাজারে গ্লুকোজ মাপার ডিভাইসের মধ্যে অন্যতম ‘জি-ওয়ান অ্যাডভান্স ব্লাড গ্লুকোজ মনিটরিং ডিভাইস’। শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের এই ডিভাইসটি দক্ষিণ কোরিয়ার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি এবং ইউএস-এফডিএ অনুমোদিত।

জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনতে হবে। গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক তানজিনা হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘রোগীকে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ, ওষুধ যথাসময়ে গ্রহণ এবং প্রয়োজনে ইনসুলিন নিতে হবে। ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা শুধু ব্যক্তির নয়, পরিবার ও সমাজের দায়িত্বও। ডায়াবেটিস থেকে সুরক্ষিত থাকতে প্রয়োজন সচেতনতা ও সঠিক উদ্যোগ।’

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস মূলত মনে করিয়ে দেয় সুস্বাস্থ্য এবং রোগমুক্ত জীবন নিশ্চিত করতে রক্তের শর্করা নিয়মিত পরিমাপ করা এবং সঠিক ডিভাইস ব্যবহার করা কতটা জরুরি। আর জি-ওয়ান অ্যাডভান্সের মতো নির্ভরযোগ্য ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে সহজে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, যা জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করবে।