গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে একে অপরের প্রতি সহনশীল হতে হবে বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করব আর সহনশীল হব না—এটিকে গণতন্ত্রের চর্চা বলা যাবে না।
জাতীয় শোক দিবস-২০২৩ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকালে সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত আলোচনা সভা, দোয়া ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। একাত্তরকে স্বীকার করে নিয়ে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে স্বীকার করে এবং সংবিধান মেনে রাজনীতি করতে অসুবিধা নেই। এই জাতি রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্যই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। এরপর ৩ নভেম্বরে হত্যাকাণ্ড ঘটে। যাতে এই জাতি নেতৃত্বশূন্য হয় এবং এই জাতি আস্তে আস্তে ধ্বংস হয়ে যায়। এ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু মানুষকে শ্রদ্ধা করতেন এবং মানুষের প্রতি তাঁর প্রচণ্ড সহানুভূতি ছিল উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে মানতে হবে, দেশের সংবিধানকেও মানতে হবে।
সভায় আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, বঙ্গবন্ধু একমাত্র বাঙালি পুরুষ, যাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ একত্র হয়েছিল। কী কারণে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল, এর ওপর গবেষণা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় কুশীলব কারা, কোন কোন কুশীলবেরা এর পেছনে ছিল, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ও এই জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল—এর স্বরূপ উদ্ঘাটন করা প্রয়োজন। তবে কোনো প্রতিহিংসা থেকে নয়, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারে এবং সাবধানতা অবলম্বন করতে পারে।
আপিল বিভাগের বিচারপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে ছিল, সেসব কুশীলবকে খুঁজে বের করার জন্য কমিশন গঠন করতে হবে।
আলোচনা হলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের চর্চা একেবারেই কম হচ্ছে বলে উল্লেখ করে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। তিনি বলেন, ‘আমরা যে যেখানে যে দায়িত্ব পালন করছি, সেই দায়িত্বে থেকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী যদি বঙ্গবন্ধুর চর্চা করি, তখনই বলতে পারব বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চর্চা করছি।’
বিচারপতি ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ এমনটি উল্লেখ করে আলোচনা সভায় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘এই সংবিধান হলো আমাদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক দলিল। বঙ্গবন্ধুর যে রাষ্ট্রদর্শন, রাজনৈতিক দর্শন, সামাজিক দর্শন—সব দর্শনের প্রতিফলন ঘটেছে এই সংবিধানে।’ তিনি বলেন, ইদানীং সুষ্ঠু নির্বাচন, বিদেশি প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত—এসব নিয়ে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, গণতন্ত্র চাই। বঙ্গবন্ধুর শোষিতের গণতন্ত্র কী? শুধু ভোট দেওয়াই একমাত্র গণতন্ত্র না। ভোট দিয়ে রাজা ও মন্ত্রীর পরিবর্তনই গণতন্ত্র না। যে গণতন্ত্র মানুষের ভাতের নিশ্চয়তা, বেকারের চাকরির সংস্থান ও দেশের মানুষের সার্বিক মুক্তি ঘটাতে না পারে—বঙ্গবন্ধু সে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম আরও বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত হবে না, যে ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির উন্মেষ ঘটে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এমন হবে না, শুধু ভোট দিয়েই এখানে জঙ্গিবাদের উত্থান হবে। সংবিধান রক্ষার যে শপথ নিয়েছি, সে অবস্থায় থেকে মুক্তিযুদ্ধের আবহ ও প্রেক্ষাপট, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ—সবকিছু মাথায় নিয়ে বিচারিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।
আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। এই ষড়যন্ত্র ধারাবাহিকভাবে চলছে। এখনো চলছে ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই।…সারা পৃথিবীতে নির্বাচন হয়, কেউ তাকিয়েও দেখে না। নির্বাচন ঘিরে নজর বাংলাদেশের দিকে কেন?
সভায় অন্যদের মধ্যে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান, বিচারপতি জে বি এম হাসান, বিচারপতি ফরিদ আহমেদ, বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল, বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী, বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহ বক্তব্য দেন।