ট্রেনের দরজা থেকে পড়ে মেঘনায় নিখোঁজ তরুণের ২ দিনেও সন্ধান মেলেনি
যাওয়ার কথা ছিল মালয়েশিয়ায়। ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বাবার সঙ্গে ট্রেনে করে ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলসেতু অতিক্রমের সময় ট্রেনের দরজা থেকে মেঘনা নদীতে পড়ে নিখোঁজ হন। দুর্ঘটনার পর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও তানভির মিয়া (২২) নামের সেই তরুণের সন্ধান মেলেনি। এ অবস্থায় আজ রোববার দুপুরে নদীতে ডুবুরিদের তল্লাশি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
নিখোঁজ তানভির মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দেবগ্রামের মেরাজ মিয়ার ছেলে। গত শুক্রবার বিকেলে আন্তনগর ‘উপকূল এক্সপ্রেস’ ট্রেনে বাড়িতে ফেরার পথে ট্রেনের দরজা থেকে মেঘনা নদীতে পড়ে নিখোঁজ হন। এর পর থেকে ভৈরব নৌ থানা-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন।
উদ্ধারকর্মীরা ধারণা করছেন, ট্রেন থেকে পড়ে পানিতে ডুবে তানভিরের মৃত্যু হয়। তাঁরা এখন লাশ ভেসে ওঠার অপেক্ষার সময় পার করছেন। এতে ক্ষোভ ও হতাশা দুই-ই বাড়ছে তানভিরের স্বজনদের মধ্যে। তানভিরের বাবা মেরাজ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা-ছেলে একলগে ঢাকায় গেলাম। আবার একলগে ফিরছিলাম। আমি বাড়ি আইলাম। ছেলে মেঘনায়। দুই দিন হইয়া গেল। ছেলেরে খুঁজে বের করতে পারল না কেউ। এই দুঃখ কই রাখি!’
আজ উদ্ধারকাজের সর্বশেষ অবস্থা জানতে কিশোরগঞ্জ জেলার নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রেজা দুর্ঘটনাস্থলে আসেন। ফায়ার সার্ভিসের তিনজন ডুবুরি নদীতে তল্লাশি চালিয়ে সন্ধান পাননি। এ অবস্থায় আজ দুপুর ১২টার পর থেকে ডুবুরিদের তল্লাশি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। উদ্ধারকর্মীরা তানভিরের সন্ধান না পাওয়ার মূল কারণ হিসেবে দুর্ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত স্রোতের কথা বলছেন।
আজ দুপুর দেড়টার দিকে মেঘনা নদীতে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, নদীতে উদ্ধার তৎপরতা নেই। স্বজনেরাও নেই। শুধু নৌ-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নৌকায় করে মাঝ নদীতে অবস্থান করছেন।
ভৈরব নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান দুর্ঘটনার পর থেকে নৌ-পুলিশের উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নানা প্রক্রিয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান পাইনি। আমরা প্রায় নিশ্চিত, ট্রেন থেকে পড়া ওই তরুণের মৃত্যু হয়েছে। সাধারণত পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে লাশ ভেসে ওঠে। দুর্ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা হতে চলল। এখন ভেসে ওঠার সময়। সব নৌ-থানাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কোথাও লাশ ভেসে উঠলে আমরা জানতে পারব।’
ফায়ার সার্ভিসের দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভৈরব নদী ফায়ার সার্ভিস ইউনিটের স্টেশন মাস্টার নুরুল কবির সরকার। তিনি বলেন, ‘আমরা নদীতে আছি। লাশ ভেসে ওঠার অপেক্ষা করছি।’
এদিকে দুর্ঘটনার পর ৩০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ভৈরব সেতুর ২ নম্বর পিলারের কাছে এক ব্যক্তি ভাসছেন। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের দাবি, ওই ব্যক্তিটি তানভির। ট্রেন থেকে পড়ে প্রথমে পিলারের সঙ্গে ধাক্কা খান, পরে নদীতে পড়েন।