দূষিত বায়ুতে থাকলে বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়ে

বায়ুদূষণ প্রতিরোধে আইনকানুন আরও কঠোর করা দরকার বলে মনে করেন গবেষকেরাফাইল ছবি

দূষিত বায়ু স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন দূষিত বায়ুর মধ্যে থাকলে বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়ে। বায়ুতে থাকা বেশি পরিমাণ সালফার ডাই–অক্সাইড বিষণ্নতার প্রধান কারণ।

চীনের হারবিন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং যুক্তরাজ্যের ক্রানফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সের বিজ্ঞানীরা এই গবেষণা করেছেন। গবেষণাটি গত মাসে প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ারের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইকোটেকনোলজি সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষকেরা দাবি করেছেন, বিষণ্নতার সঙ্গে বায়ুদূষণের সম্পর্ক উন্মোচন একেবারে নতুন বিষয়।

নতুন এই তথ্য বাংলাদেশের জন্য, বিশেষ করে ঢাকা শহরের মানুষের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্য–বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে বিষণ্নতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি ঢাকা শহর এখন বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষে থাকা শহরগুলোর মধ্যে একটি। ঢাকা শহরের মানুষের মধ্যে বিষণ্নতা বাড়ছে কি না, তা নতুন গবেষণার বিষয় হতে পারে।

প্রবন্ধের শুরুতে গবেষকেরা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী রোগের বোঝা বড় হওয়ার পেছনে বায়ুদূষণের ভূমিকা আছে। বছরে প্রায় ৪২ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু হয় বায়ুদূষণের কারণে। দূষিত বায়ু হৃদ্‌রোগ, স্নায়ুরোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও কিডনি রোগের কারণ। কিন্তু এর সঙ্গে বিষণ্নতার সম্পর্কের বিষয় আগে কেউ লক্ষ করেননি।

২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চীনের ২৮টি প্রদেশের গ্রাম ও শহরে পাঁচটি জরিপ হয়। জরিপে ১২ হাজার ৩৮৯ জন মানুষের তথ্য নেওয়া হয়। এসব মানুষের বয়স ছিল ৪৫ বছর বা তার বেশি। গবেষকেরা এসব মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার ঝুঁকি পরিমাপ করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার বায়ুতে দূষণ সৃষ্টিকারী ছয়টি গ্যাস ও বস্তুকণার পরিমাণ পরিমাপ করেন। এগুলো হচ্ছে কার্বন মনোক্সাইড, ট্রাই–অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইড, সালফার ডাই–অক্সাইড, সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম ১০ এবং অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম ২.৫।

গবেষকেরা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন পিএম ২.৫, পিএম ১০, কার্বন মনোক্সাইড এবং সালফার ডাই–অক্সাইডের সংস্পর্শে দীর্ঘদিন বা দীর্ঘ সময় থাকলে বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়ে। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি বাড়ায় সালফার ডাই–অক্সাইড। এসব গ্যাস ও সূক্ষ্ম বস্তুর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সম্মিলিত বিরূপ প্রভাবও আছে।

প্রবন্ধের শেষ দিকে গবেষকেরা বলছেন, বায়ুদূষণ প্রতিরোধে আইনকানুন আরও কঠোর করা দরকার, যাতে বায়ুর মান উন্নত হয়, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছেন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চীনের মানুষের ওপর করা গবেষণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ বিষণ্নতায় আক্রান্ত মানুষ অনেক। ঢাকার মতো বড় শহরে বায়ুদূষণও মারাত্মক। এই দূষণ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যে কী প্রভাব ফেলছে, তা অনুসন্ধান করা বা তা নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার।’