সরকারের কণ্ঠস্বর আরও জোরালো হতে হবে: আনু মুহাম্মদ

অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস: পর্যালোচনা, প্রস্তাব, মতবিনিময়’ শিরোনামে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। নাটমন্ডল মিলনায়তন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ছবি : শুভ্র কান্তি দাশ

অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে কিছু দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড এবং মন্দির, মাজারে হামলার বিষয়ে সরকারের কণ্ঠস্বর আরও জোরালো হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন। দুই মাসেও জুলাই আন্দোলনে শহীদের তালিকা প্রণয়ন ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে না পারায় তিনি সরকারের সমালোচনা করেন।

আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমণ্ডলে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস: পর্যালোচনা, প্রস্তাব, মতবিনিময়’ শিরোনামে এক আলোচনায় এসব কথা বলেন আনু মুহাম্মদ। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির ব্যানারে এ আয়োজন করা হয়।

শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের আশু করণীয় হিসেবে ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন মানবাধিকার কর্মী মাহা মির্জা। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ, নিহত ও আহতদের তালিকা প্রকাশ এবং পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া; হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আমলা, পুলিশ, দলীয় সন্ত্রাসীসহ সবার বিচার নিশ্চিত করা; গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা প্রকাশ এবং জনমতের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করা; অবিলম্বে দলগত সহিংসতা ও হত্যা বন্ধ করা; মন্দির, মাজার, মসজিদ, শিল্পকর্মসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলা বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া; সবার জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া এবং পাহাড় ও সমতলের মানুষদের অধিকার নিশ্চিত করা।

এই ১৩ দফার প্রতিটি দফা উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, এসব দাবি বাস্তবায়ন কঠিন কিছু নয়। তাঁরা এটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেবেন। সরকারের ছয় মাস কিংবা প্রয়োজন হলে আরও সময় নিয়ে এসব দাবি পর্যালোচনা করা হবে। সরকারের সংস্কার কমিশনগুলো গঠনে সময়ক্ষেপণের সমালোচনাও করেন তিনি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিপ্লবী সরকার নয়। তাদের ম্যান্ডেটের সীমাবদ্ধতা আছে। তাদের মূল কাজ হচ্ছে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে একটা স্বভাবিক সরকারে ফিরে যাওয়ার পথ করে দেওয়া। এর আগে সংবিধান সংশোধনে একটা সম্মেলন (কনভেনশন) করতে হবে। মানুষের মতামতের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব তৈরি করতে হবে।

জুলাই আন্দোলনের পরও নারীরা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। তিনি বলেন, নারীদের নানা ধরনের ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। সরকার ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বা অজুহাত দিয়ে দায়িত্ব এড়াতে পারবে না। এ ছাড়া জুলাই আন্দোলনের আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না, এ খবর আহত করে।

মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান বলেন, জুলাই আন্দোলনে বৈষম্যহীন সমাজের দাবি ছিল। সমতলের মতো পাহাড়েও এটা নিশ্চিত করতে হবে।

গত ৫ আগস্টের পর ৬০-৭০টি মাজার ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সুফি সাধক কাজী জাবের আহমেদ। তিনি নিজেও আক্রান্ত হয়েছেন বলে দাবি করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়র নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক রেজওয়ানা স্নিগ্ধা বলেন, জুলাই আন্দোলনে ডানে-বাঁয়ে কে ছিল, সেই প্রশ্ন ওঠেনি। তখন মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, পাহাড়ি, মাদ্রাসার ছাত্র—সবাই একসঙ্গে আন্দোলন করেছে। দুই মাসের মধ্যে এখন নানা ট্যাগ দেওয়া শুরু হয়েছে। এটা কেন, প্রশ্ন তোলেন তিনি।

পাহাড়ি ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের আমলে আমি গত ১০ বছরে মাত্র চারবার বাড়ি গেছি। পাহাড়ে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফ্যাসিবাদের পতনের পরও বাড়ি যেতে পারিনি।’

পোশাক কারখানার পরিস্থিতি তুলে ধরে পোশাককর্মী সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের বেতন পাননি। অক্টোবরে এসে বলা হচ্ছে, কারখানার অবস্থা ভালো নয়। বিনা বেতনে এক মাসের ছুটি নেন। তিনি বলেন, ‘এখন আমি বেতনের দাবিতে রাস্তায় নামলে ট্যাগ দেওয়া হবে। ষড়যন্ত্রকারী বলা হবে।’