কাঁচা মরিচের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। আমদানির খবরে দাম কিছুটা কমেছিল। কিন্তু এখন দাম আবার বাড়তি। এভাবে দাম বাড়ার কারণ কী?
মো. ফারুক শিবলী: যশোর, নওগাঁ, সরিষাবাড়ী (জামালপুর), বগুড়া—এসব এলাকার মোকাম থেকে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারে কাঁচা মরিচ আসে। এসব এলাকা থেকে ব্যাপারীরা কাঁচা মরিচ নিয়ে আসেন। তাঁদের আনা কাঁচা মরিচ এখানকার আড়তদারেরা কমিশনের ভিত্তিতে বিক্রি করেন। দেশে এবার সব মিলিয়ে কাঁচা মরিচের ফলন কম হয়েছে। এ কারণে বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। মূলত, এ কারণেই কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। গত সোমবার আমদানির খবরে বাজারে কাঁচা মরিচ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছিলেন ব্যাপারীরা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁরা আবার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪০০ টাকা দরে আড়তে সরবরাহ করা হয়েছে।
আড়তে এখন দেশি কাঁচা মরিচের সরবরাহ কেমন? বাজারে আমদানি করা কাঁচা মরিচ কতটা আসছে?
ফারুক শিবলী: খরা ও অতিবৃষ্টির কারণে এ বছর বহু মরিচগাছ নষ্ট হয়েছে। তাই দেশি মরিচের ফলন কম। তাই বাজারে দেশি কাঁচা মরিচ কম। আমদানি করা কাঁচা মরিচ বাজারে এলেও তার পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। আড়তে দেশি কাঁচা মরিচের চাহিদা সব সময় বেশি থাকে। চাহিদার ১০ ভাগের ১ ভাগ কাঁচা মরিচও এখন বাজারে আসে না। সব মিলিয়ে বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ পরিস্থিতি ভালো নয়।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে এখন প্রতিদিন কত কেজি কাঁচা মরিচের চাহিদা রয়েছে? আর কতটুকু কাঁচা মরিচ আপনারা পাচ্ছেন?
ফারুক শিবলী: আগে বাজারে আনুমানিক এক লাখ কেজি কাঁচা মরিচ সরবরাহ হতো। প্রতিদিন অন্তত ১০ ট্রাক কাঁচা মরিচ নিয়ে বাজারে আসতেন ব্যাপারীরা। প্রতিটি ট্রাকে প্রায় ১০ হাজার কেজি কাঁচা মরিচ থাকত। তখন বাজারে কাঁচা মরিচের দাম ছিল কেজিপ্রতি ২০ টাকা বা তার আশপাশে। তবে গতকাল বাজারে কাঁচা মরিচ এসেছে মাত্র ১০ হাজার কেজি। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি আমদানি করা কাঁচা মরিচ।
দেশি কাঁচা মরিচের জোগান কি এতটাই কমে গেল যে আমদানিতে যেতে হলো?
ফারুক শিবলী: এবার ফলন খুব কম হয়েছে। তীব্র দাবদাহে মরিচগাছ নষ্ট হয়েছে। বৃষ্টিতেও কাঁচা মরিচের গাছ নষ্ট হয়েছে। ফলে চাহিদা মেটানোর মতো কাঁচা মরিচ দেশে এখন নেই। এ কারণে ভোক্তার চাহিদার কথা ভেবেই সরকার কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
ভোক্তাসাধারণ ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আড়তে পাইকারি পর্যায়ে সিন্ডিকেট করে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এ অভিযোগের ব্যাপারে কী বলবেন?
ফারুক শিবলী: আগেই বলেছি, রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদারেরা ব্যাপারীদের সরবরাহ করা সবজি কমিশনের ভিত্তিতে বিক্রি করেন। সুতরাং, পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। মূলত, ব্যাপারীরা আর যেসব ব্যবসায়ী ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি করেন, দাম নির্ধারণের বিষয়টি তাঁদের হাতেই থাকে। বাজারে যে পরিমাণ পণ্য বিক্রি হয়, তার ওপর কমিশন পান আড়তদারেরা।
কাঁচা মরিচের দাম স্বাভাবিক হতে কত সময় লাগতে পারে?
ফারুক শিবলী: বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ যথেষ্ট বাড়লে দাম কমে আসবে। এ জন্য দেশে পর্যাপ্ত কাঁচা মরিচের উৎপাদন দরকার। তখন আর আমদানি করতে হবে না। কৃষকেরাও ন্যায্য মূল্য পাবেন। অসাধু ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়ানোর সুযোগ পাবেন না। দেশে পর্যাপ্ত কাঁচা মরিচ উৎপাদনের জন্য কৃষকদের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। আবহাওয়া প্রতিকূল হলে কৃষকদের সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়া উচিত। যখন কম দামে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছিল, তখন কিন্তু চাহিদার তুলনায় জোগান অনেক বেশি ছিল। তখন অনেক কাঁচা মরিচ নষ্ট পর্যন্ত হয়েছে। অথচ এখন বাজারে যথেষ্ট কাঁচা মরিচ নেই। আবার এখন আমদানির পরও কিন্তু মোকাম পর্যায়ে কাঁচা মরিচের দাম কমছে না। সে ক্ষেত্রে যাঁরা কাঁচা মরিচ আমদানি করেন, দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে তাঁদের তদারকির আওতায় আনা দরকার। আমদানি ও শুল্ক খরচের পর দাম কত হবে, তা সরকারকে ঠিক করে দিতে হবে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
ফারুক শিবলী: আপনাকেও ধন্যবাদ।