অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল শুনানি ১০ নভেম্বর
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা পৃথক দুটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ১০ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন চেম্বার আদালত। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক আজ রোববার শুনানির এ দিন ধার্য করেন।
এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপিল শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে মামলার পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরির জন্য অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। শুনানি নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের করা এই আবেদন আজ রোববার মঞ্জুর করেছেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। শুনানি নিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে বিচারিক আদালতের দেওয়া অর্থদণ্ডের আদেশ স্থগিত করেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিশেষ জজ আদালত-৫ রায় দেন। রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছর হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। এই আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ২০১৯ সালে আপিল বিভাগে পৃথক দুটি লিভ টু আপিল করেন খালেদা জিয়া।
এদিকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৬ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ড মওকুফ করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে করা আপিল শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক তৈরির জন্য অনুমতি চেয়ে খালেদা জিয়া আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিলটি আজ আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। হাইকোর্টে ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া আপিলটি করেন।
হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও আইনজীবী কায়সার কামাল। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জাকির হোসেন ভূইয়া ও মো. মাকসুদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার।
অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায় এবং সাজা বৃদ্ধি করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার ২০১৯ সালে করা পৃথক দুটি লিভ টু আপিল আজ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে কার্যতালিকায় ৬ ও ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। আদালত আবেদন দুটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ১০ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করেছেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী কায়সার কামাল। পরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের দণ্ড মওকুফ করা হয়েছে, সে জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। বিএনপি চেয়ারপারসন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আদালতের প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল। তাই মামলা দুটি আইনগতভাবে আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে তিনি আইনজীবীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এ জন্য জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসনের করা আপিল হাইকোর্টে এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের (বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট) বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে করা পৃথক লিভ টু আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
হাইকোর্টে আপিল শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক তৈরি করতে হয় উল্লেখ করে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আদালতের অনুমতি নিয়ে নিজেরা পেপারবুক তৈরি (আপিলকারীর খরচে) করে আপিল শুনানির জন্য আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট আবেদন মঞ্জুর করে পেপারবুক প্রস্তুত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। দ্রুত পেপারবুক তৈরি করে আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হবে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায় এবং সাজা বৃদ্ধি করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা পৃথক লিভ টু আপিল দুটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ১০ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করেছেন চেম্বার আদালত।