৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আইনি নোটিশ
দেশের স্বার্থে এ কে আব্দুল মোমেনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগে আইনি নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
নোটিশ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আব্দুল মোমেনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। এতে ব্যর্থ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইনি নোটিশটি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. এরশাদ হোসেন রাশেদ। তিনি রেজিস্ট্রি ডাকযোগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঠিকানায় আজ রোববার নোটিশটি পাঠান।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, নোটিশদাতা (এরশাদ হোসেন) ১৯ আগস্ট বিকেলে কয়েকটি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারেন, যেকোনো উপায়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নোটিশে বলা হয়, ১৮ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’ এ কথা বলার মধ্য দিয়ে আব্দুল মোমেন শপথ ভঙ্গ করেছেন। সংবিধান লঙ্ঘনের পাশাপাশি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে বলেন, তিনি ভারতে গিয়ে বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ‘যা যা করা দরকার’ তা-ই করার অনুরোধ করেছেন।
পরদিন শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমি বলেছি, আমরা চাই শেখ হাসিনার স্থিতিশীলতা থাকুক। এই ব্যাপারে আপনারা (ভারত) সাহায্য করলে আমরা খুব খুশি হব।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যে দেশের রাজনীতিতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। অনেকে বলেছেন, এটা দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের জেরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তাঁদের বিদেশে বন্ধু আছে, কোনো প্রভু নেই। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস বাংলাদেশের জনগণ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান দাবি করেছেন, আব্দুল মোমেন দলের কেউ নন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর জায়গা থেকে সরে আসেননি। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেই বক্তব্য তিনি আবার নিশ্চিত করেছেন। সুতরাং বলতে হবে, যারা অন্যের আনুকূল্যে টিকে থাকে, তাদের এ দেশের সরকারে থাকার কোনো অধিকার নেই।
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে ভারতকে অনুরোধ করার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য দেশের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের দায় সরকার এড়াতে পারে না।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে মোমেনের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানায়নি।তবে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, মোমেনের মন্তব্য ভারতের জন্য ‘বিব্রতকর ও বিড়ম্বনার’।