পুলিশের ছররা গুলি: দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকিতে অনেকেই
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে সরকারের নির্দেশে দেশের ভেতরে সব ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিল। এ কারণে প্রথম আলো ডটকমে কোনো সংবাদ বা লেখা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। যদিও এ কয়েক দিনে নানা ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সংঘাত–সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১৮৭ জন। সংকট নিরসনে সরকারও একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ সময়ে ছাপা পত্রিকা নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য উল্লেখযোগ্য সংবাদ ও লেখাগুলো অনলাইনে প্রকাশ করা হলো। এই প্রতিবেদনটি ২১ জুলাই রোববার প্রকাশিত হয়েছে।
১৬ বছরের কিশোর মোহাম্মদ মোবিন মাল চিরদিনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। তার দুই চোখে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলি লেগেছিল। অস্ত্রোপচার শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গুলির আঘাতে চোখ এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে মোবিন আর চোখে দেখতে পারবে না। মায়ের চিন্তা, এই দৃষ্টি হারানো ছেলের ভার কে বয়ে বেড়াবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে মৃত্যুর পাশাপাশি সারা দেশে বহু মানুষ নানাভাবে গুরুতর আহত হচ্ছে। অনেকে আহত হচ্ছেন পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে বা আত্মরক্ষায় পুলিশ ছররা গুলি ছোড়ে। এমনই ঘটনার শিকার মোহাম্মদ মোবিন।
চোখে ছররা গুলির আঘাত নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ৪১ জন। তাঁদের মধ্যে তিনজনের দুই চোখে ছররা গুলি লেগেছে।
মোহাম্মদ মোবিনের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যায়। সে রাজধানীর উত্তরার রাজলক্ষ্মী মার্কেটে একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করত। এখন সে ঢাকা মেডিকেলের চক্ষু বিভাগে চিকিৎসাধীন। তার দুই চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চোখে ছররা গুলি লাগা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল শনিবার ছিল সারা দেশে কারফিউ কার্যকর হওয়ার প্রথম দিন। তারপরও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে চোখে ছররা গুলির আঘাত নিয়ে চারজন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়। গতকাল বিকেল পর্যন্ত এই বিভাগে ছররা গুলি লাগা ৪১ জন রোগী ভর্তি ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চক্ষু বিভাগের এক অধ্যাপক প্রথম আলোকে জানান, তিনজনের দুই চোখে ছররা গুলি লেগেছে। ২১ জনের চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তবে অধিকাংশেরই দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
গতকাল বিকেল মোহাম্মদ মোবিনের শয্যার পাশে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তার ভাই নাজমুল হুদার। তিনি জানান, ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) উত্তরা এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় মোহাম্মদ মোবিন রাস্তা পার হচ্ছিল। ওই সময় তার দুই চোখে, মাথায়, কানে, মুখে ছররা গুলি লাগে। নাজমুল হুদা বলেন, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মোবিন আর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে না।