উপাচার্যের বাসভবনের সামনে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মোনাজাত, উপাচার্য বললেন, মানসিক অস্থিরতা

সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মোনাজাত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীছবি: সংগৃহীত

সহকর্মীর স্ত্রীর জানাজায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান ও দুই সহ–উপাচার্য অংশ না নেওয়ার অভিযোগ তুলে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে মোনাজাত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী।

এ ঘটনার বিষয়ে উপাচার্য বলেছেন, ‘তিনি (বাহালুল) মানসিক অস্থিরতার মধ্যে আছেন। তাঁর একটু রেস্টের (বিশ্রাম) দরকার কি না, সেটা পরিবার দেখছে।’

কয়েক দিন আগে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামের স্ত্রী মারা যান। তাঁর জানাজায় উপাচার্য ও দুই সহ-উপাচার্য অংশ নেননি। আজ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে মনিরুলের স্ত্রীর আত্মার মাগফিরাতের জন্য মিলাদের আয়োজন করা হয়।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের ৪০-৫০ জন সহকর্মী সঙ্গে নিয়ে উপাচার্যের ভবন প্রাঙ্গণে মোনাজাত করেন বাহালুল হক চৌধুরী। একপর্যায়ে উপাচার্যের ভবনের সামনে বক্তব্য দেন তিনি। এ সময় বাহালুল বলেন, ‘ভিসি-প্রোভিসি কেউ জানাজায় যাননি। ও আল্লাহ, তুমি দেখো। আল্লাহ গো, এই এতিম বাচ্চা নিয়ে আমি আসছি। কিচ্ছু চাই না, কোনো দাবি-দাওয়া নাই। জানাজায় আসার দরকার নাই, আমি আপনার (উপাচার্য) চাকরি করব না।’

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন আগে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামের স্ত্রী মারা যান। তাঁর জানাজায় উপাচার্য ও দুই সহ-উপাচার্য অংশ নেননি। আজ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে মনিরুলের স্ত্রীর আত্মার মাগফিরাতের জন্য মিলাদের আয়োজন করা হয়। জানাজায় উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যদের না যাওয়া অনেকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে সহকর্মীদের নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। তবে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেননি। বাসভবনের সামনে মনিরুলের স্ত্রীর আত্মার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সবাই চলে যান।

(মোনাজাতের) বিষয়টি আমি শুনেছি। ওই সময় আমি নামাজে ছিলাম। তাঁরা দোয়া-টোয়া করে চলে গেছেন। পরে তাঁর (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক) পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে জানানো হলো, কয়েক দিন ধরে তিনি খুব স্ট্রেসফুল মাইন্ডে আছেন।
মো. আখতারুজ্জামান, উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, দুপুরের দিকে হঠাৎ করে সবাইকে ডেকে উপাচার্যের ভবনের সামনে নিয়ে আসেন বাহালুল হক চৌধুরী। পরে সেখানে সবাইকে নিয়ে মোনাজাত করেন তিনি। বাহালুল হক চৌধুরী কয়েক দিন ধরে অসুস্থ। তিনি ইতিমধ্যে ছুটির জন্য আবেদন করেছেন।

এই মোনাজাতের বিষয়ে জানতে বাহালুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মোনাজাত করতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

জানতে চাইলে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘(মোনাজাতের) বিষয়টি আমি শুনেছি। ওই সময় আমি নামাজে ছিলাম। তাঁরা দোয়া-টোয়া করে চলে গেছেন। পরে তাঁর (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক) পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে জানানো হলো, কয়েক দিন ধরে তিনি খুব স্ট্রেসফুল মাইন্ডে আছেন। তিনি মানসিক অস্থিরতার মধ্যে আছেন। তাঁর একটু রেস্টের (বিশ্রাম) দরকার কি না, সেটা পরিবার দেখছে।’

মনিরুলের স্ত্রীর জানাজায় না যাওয়ার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘ওটা বুঝতে পারছি না, ওটা কোন বিষয় বলতে পারছি না।’

গত বছরের শেষ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অস্বচ্ছতা ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তখন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে চিঠির জবাবও দেওয়া হয়। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের কর্মকাণ্ডে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্প্রচার করা হয়। এতে সামাজিকভাবে হেয় হওয়ায় বাহালুল হক মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে জানান তাঁর কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।