বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষ আসামের সংস্কৃতির জন্য হুমকি: মুখ্যমন্ত্রী
ভারতের আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষ আসামের সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্য একটি হুমকি। সে কারণে রাজ্যে অতীতে তিনি বেশ কয়েক শ মাদ্রাসা বন্ধ করেছেন, ভবিষ্যতে বাকিগুলো বন্ধ করবেন। কর্ণাটক রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচারে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্ণাটকের বেলগাঁওয়ে এক নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিশ্বশর্মা বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে মানুষ আসামে আসেন। এটা আসামের সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্য একটি হুমকি। আমি ৬০০ মাদ্রাসা বন্ধ করে দিয়েছি এবং আমি চেষ্টা করছি সব মাদ্রাসা বন্ধ করে দিতে। কারণ, আমাদের মাদ্রাসার প্রয়োজন নেই। আমাদের স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন রয়েছে।’
আসাম সরকার গত কয়েক বছরে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত মাদ্রাসা বন্ধ করে দিয়েছে এবং এখনো দিচ্ছে। বর্তমানে বেসরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এবং মূলত জাকাতের টাকায় চলা মাদ্রাসা বন্ধ করার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে শনিবার যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দেশের মধ্যে প্রথম ১২৫ কিলোমিটার ডিজেল পাইপলাইন উদ্বোধন করবেন, তখন পূর্ব ভারতে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতার বাংলাদেশ নিয়ে এই মন্তব্য প্রকাশ্যে এসেছে। ভারতের সব জাতীয় স্তরের পত্রিকাই খবরটি গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে।
ভারতের এক সাবেক পররাষ্ট্রসচিব এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্ণাটক রাজ্যে নির্বাচনের জন্য আবেগতাড়িত মন্তব্য বিজেপির নেতাদের করতে হবে। এটা হয়তো আজকের ভারতে বাস্তব। কিন্তু যখন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একটি ঐতিহাসিক পাইপলাইন উদ্বোধন করতে চলেছেন, তার ঠিক দুই দিন আগে এ ধরনের মন্তব্য একেবারেই কাঙ্ক্ষিত ছিল না।’
বেলগাঁওয়ের ওই গণসমাবেশে কংগ্রেস দলকেও আক্রমণ করে বিশ্বশর্মা বলেন, ‘একসময় দিল্লির শাসকেরা মন্দির ভাঙার কথা বলতেন; কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনে আমি মন্দির নির্মাণের কথা বলছি। এটাই হচ্ছে নতুন ভারত এবং এই নতুন ভারতকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। কংগ্রেস আজ নতুন মোগলদের প্রতিনিধিত্ব করছে।’
ভারতের ইতিহাসে মুসলমান সমাজ এবং ইসলামের ভূমিকার কথা তুলে ধরার জন্য কংগ্রেস ও কমিউনিস্টদের একযোগে আক্রমণ করে হিমন্ত বিশ্বশর্মা আরও বলেন, ‘কংগ্রেস ও কমিউনিস্টরা দেখিয়েছেন যে ভারতের ইতিহাস শুধু বাবর, আওরঙ্গজেব ও শাহজাহানের ইতিহাস। আমি বলতে চাই, ভারতের ইতিহাস তাদের ইতিহাস নয়, ভারতের ইতিহাস ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ, গুরু গোবিন্দ সিংয়ের ইতিহাস।’
ওই জনসভায় ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর ধ্যানধারণা ব্যক্ত করেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী। ২০২১ সালে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতের ইতিহাস নিয়ে ধারাবাহিকভাবে মন্তব্য করছেন বিশ্বশর্মা।