‘এক দিনের ভ্রমণে’ বেছে নিতে পারেন ঢাকার কাছের যে রিসোর্টগুলো

ইচ্ছা থাকলেও দূরত্ব ও সময়ের কারণেই যান্ত্রিক শহর ছেড়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে যেতে পারেন না অনেকে। তবে ব্যস্ত সময় থেকে শুধু ‘এক দিন’ বের করতে পারলেই সেই অপূর্ণতা অনেকাংশে পূরণ হবে। ঢাকার কাছেই রয়েছে সবুজের ছায়াঘেরা, শান্ত–নিরিবিলি এমন কিছু রিসোর্ট, যেগুলোতে একা বা বন্ধু-স্বজনদের নিয়ে দিতে পারেন ‘ডে ট্যুর’ বা এক দিনের ভ্রমণ।

১. ছুটি রিসোর্ট

এটির অবস্থান গাজীপুরের সুকুন্দি গ্রামে। ভাওয়াল রাজবাড়ী ও ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানসংলগ্ন এই রিসোর্টে প্রাধান্য পেয়েছে প্রকৃতি। গ্রামীণ আবহে তৈরি রিসোর্টটিতে রয়েছে ছনের তৈরি ঘর, পিকনিক স্পট, সুইমিংপুল, মাছ ধরার ব্যবস্থা, শিশুদের খেলার জায়গাসহ নানা কিছু। পরিবেশবান্ধব ও প্রকৃতির কাছাকাছি এই রিসোর্টে ‘ডে ট্রিপ’–এরও ব্যবস্থা রয়েছে। নৌভ্রমণ এবং সংরক্ষিত বনে তাঁবু টানানোর সুযোগ যোগ করে বাড়তি আনন্দ। এ ছাড়া পূর্ণিমারাতে জোছনা উপভোগ করার জন্যও এই রিসোর্টে রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

২. জলেশ্বরী রিসোর্ট

গাজীপুরের মনোরম পরিবেশে অবস্থিত জলেশ্বরী রিসোর্ট শহরের কোলাহল থেকে মুক্তির অন্যতম জায়গা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বিশাল আকারের পুকুর, সুইমিংপুল এবং বড় খেলার মাঠ পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দিন কাটানোর জন্য আদর্শ। এখানে শিশুদের জন্য রয়েছে খেলার জায়গা। তাই বড়দের পাশাপাশি পরিবারের ছোটরাও হারিয়ে যেতে পারবে বিনোদনের রাজ্যে।

৩. ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা

ঢাকা থেকে ৩১ মাইল দূরে গাজীপুরের নলজানি গ্রামে ভাওয়াল রিসোর্টের অবস্থান। শালবনের ভেতরে সবুজের ছায়াঘেরা এই রিসোর্টে রয়েছে বিশাল সুইমিংপুল, যা এখানকার মূল আকর্ষণ। এখানে ৬২টি ‘ফ্যামিলি ভিলা’সহ রয়েছে জিমনেসিয়াম, স্পা, সাইক্লিং, বারবিকিউসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। সবুজে বেষ্টিত নান্দনিক এই রিসোর্ট ছুটি কাটানোর জন্য চমৎকার একটি জায়গা।

৪. নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট

গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে অবস্থিত নক্ষত্রবাড়িতে রয়েছে সুইমিংপুল, ওয়াটার বাংলো, কটেজ, হোটেল বিল্ডিং, ডাইনিং ও কনফারেন্স হল। নক্ষত্রবাড়ির মূল আকর্ষণ হলো বাঁশ ও কাঠ দিয়ে গড়ে তোলা ১১টি কটেজ বা ‘ওয়াটার বাংলো’। এখানে বোটিং এবং মাছ ধরার ব্যবস্থা রয়েছে। রিসোর্টটিতে প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক উপাদান প্রাধান্য পেয়েছে। শহর থেকে দূরে সবুজের মধ্যে প্রকৃতির কাছাকাছি কিছু সময় কাটাতে চলে যেতে পারেন নক্ষত্রবাড়িতে।

৫. ঢালি’স আম্বার নিবাস

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে প্রায় ২০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে ঢালি’স আম্বার নিবাস। ছুটি কাটানোর জন্য প্রকৃতির কাছাকাছি অনিন্দ্যসুন্দর এই রিসোর্ট হতে পারে আপনার গন্তব্য। এখানে রয়েছে ২৬ হাজার বর্গফুটের একটি সুবিশাল সুইমিংপুল। এ ছাড়া এখানে শুধু নারীদের জন্য আলাদা সুইমিংপুল রয়েছে। আরও রয়েছে কটেজ, বোটিং, মাছ ধরার ব্যবস্থা, শিশুদের খেলার জায়গাসহ নানা কিছু।

৬. রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট

গাজীপুরের ভবানীপুরে সবুজে ঘেরা শালবনের মধ্যে রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে রয়েছে অনেকগুলো কটেজ। প্রতিটি কটেজের ছাদে রয়েছে ‘ওয়াচ টাওয়ার’, যেখান থেকে সবুজ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এ ছাড়া লেকে মাছ ধরা, সাইকেল চালানোসহ বাগান ঘুরে দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকার কাছেই গ্রামীণ প্রকৃতির আবেশ পেতে চাইলে রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট হতে পারে আপনার পছন্দের গন্তব্য।

৭. মাওয়া রিসোর্ট

রাজধানী থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দূরে মুন্সিগঞ্জে এই রিসোর্টের অবস্থান। সবুজে ঘেরা এই রিসোর্টে খুব কম খরচেই ঘুরে আসা যায়। এখানে বোটিংসহ অবসর কাটানোর জন্য রয়েছে নানা ব্যবস্থা।

৮. জিওন রিসোর্ট

ঢাকা থেকে খুব কাছে আমিনবাজারে জিওন রিসোর্ট অবস্থিত। এখানে রয়েছে একটি সুইমিংপুল, শিশুদের খেলার জায়গা ও একটি মিনি চিড়িয়াখানা। ডে ট্রিপ অথবা রাতে অবস্থানের জন্য বেছে নিতে পারেন জিওন রিসোর্ট।

৯. ভিলেজ হলিডে রিসোর্ট

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী আবহ নিয়ে গড়ে উঠেছে এই রিসোর্ট। এখানে ‘ডে ট্যুর’ করলে গ্রাম্য পরিবেশে মিশে যেতে পারবেন। গাজীপুর কাপাসিয়ায় অবস্থিত এ রিসোর্টের অন্যতম আকর্ষণ হলো মাটির ঘর, দেশি খাবারের ব্যবস্থা এবং গ্রামীণ খেলা। যান্ত্রিক শহরে থেকে শৈশবে গ্রামের উঠানের খেলাগুলো যাঁদের মনে পড়ে, তাঁরা সুযোগ পাবেন পুনরায় সেই অভিজ্ঞতা নেওয়ার।

১০. ঢাকা রিসোর্ট

ঢাকার খুব কাছেই মানিকগঞ্জে অবস্থিত এই রিসোর্ট খোলা পরিবেশ ও পরিষেবার জন্য জনপ্রিয়। এখানে রয়েছে বড়দের জন্য ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার মাঠ। রয়েছে পুকুরের ধারে বসার ব্যবস্থা, দেশি-বিদেশি খাবার এবং ছোটদের খেলার জায়গা।

মনে রাখা জরুরি

এক দিনের ভ্রমণে গেলে কিছু বিষয় মনে রাখার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ইন্টারসিটি কার রেন্টাল পরিষেবা ‘গাড়িবুক’-এর ব্র্যান্ড ম্যানেজার পার্থ বিশ্বাস। তিনি জানান, ডে ট্যুরের পরিকল্পনাতে অবশ্যই এমন রিসোর্ট বাছাই করতে হবে, যেখানে যেতে ঢাকা থেকে ২-৩ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না। ভ্রমণের আগেই রিসোর্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে বুকিং নিশ্চিত করুন। পাশাপাশি আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নেওয়া এবং যাত্রাপথ ও যাতায়াতের জন্য প্রাইভেট কার বা নির্দিষ্ট নিরাপদ পরিবহনের ব্যবস্থা করে রাখুন। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় সামগ্রী অবশ্যই নিজের সঙ্গে নিতে ভুলবেন না।