ছেলে বলেছিল, ‘বাবাকে আর কিছু করতে দেবে না’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইকরামুল হক সাজিদ। তাঁকে নিয়ে আয়োজিত স্মরণসভায় কথা বলেন বাবা জিয়াউল হক

‘সাজিদ ছিল একজন আদর্শ ছেলে। আমাদের বাবা-ছেলের সম্পর্ক ছিল চমৎকার। পরিবারের প্রতি কোনো চাওয়া ছিল না সাজিদের। নিজেই টিউশনি করে চলছে, পরিবারকেও সাহায্য করত। দ্রুত চাকরি খোঁজার আগ্রহ ছিল।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী ইকরামুল হক সাজিদ। তাঁকে নিয়ে আজ সোমবার তাঁর বিভাগ অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন এক স্মরণসভার আয়োজন করে। সেখানেই ছেলেকে নিয়ে কথাগুলো বলেন জিয়াউল হক।

আজ ছিল এই বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির প্রথম সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা। ইকরামুল বেঁচে থাকলে তিনিও পরীক্ষায় বসতেন। তবে তিনি না থাকলেও বন্ধুরা তাঁকে ঠিকই মনে করেছেন। তাঁর উদ্দেশে পরীক্ষার হলে একটি বেঞ্চের ওপর জাতীয় পতাকা বিছিয়ে তার ওপর ফুল রেখে সহপাঠীরা তাঁকে স্মরণ করে ও শ্রদ্ধা জানায়। ফুলের পাশেই রাখা ছিল একটি পরীক্ষার খাতা। পরীক্ষা শেষে বেলা দুইটায় বিভাগের সম্মেলনকক্ষে স্মরণসভা শুরু হয়।

সহপাঠীরা বলেন, আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট মিরপুরে গুলিবিদ্ধ হন ইকরামুল। রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় দশম দিন মারা যান তিনি। বাবা, মা ও একমাত্র বোনের সঙ্গে মিরপুরে থাকতেন ইকরামুল।

ছবি ক্যাপশন: পরীক্ষার হলে একটি বেঞ্চের ওপর জাতীয় পতাকা বিছিয়ে তার ওপর ফুল রেখে সহপাঠীরা তাঁকে স্মরণ করে ও শ্রদ্ধা জানায়। ফুলের পাশেই রাখা ছিল একটি পরীক্ষার খাতা
ছবি: দীপু মালাকার

ইকরামুলের বাবা জিয়াউল হক বলেন, ছেলে বলেছিল, তাঁকে আর কিছু করতে দেবে না। কিন্তু সেই সুযোগ আর হলো না।

সভায় ইকরামুলের পরিবারের সদস্যদের কাছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও আগামী দিনে ইকরামুলের পরিবারের পাশে থাকারও দাবি জানানো হয়।

স্মরণসভায় ইকরামুলের সহপাঠী রনি মিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই ইকরামুলের সঙ্গে দীর্ঘ ছয় বছর মিরপুর থেকে বাসে আসা-যাওয়া করছেন তিনি। সব সময় মানুষের সহায়তায় এগিয়ে যেত। চেষ্টা করত মানুষকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে।

বিভাগের চেয়ারম্যান শামসুন নাহার বলেন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের অসংখ্য শিক্ষার্থী থাকায় সব শিক্ষার্থীকে চেনা সহজ হয়ে ওঠে না। তবে সাজিদকে সব শিক্ষক চিনত। কারণ, সে সব সময় তার সহপাঠী ও অন্যদের নিয়ে শিক্ষকদের কাছে আসত। যার যা সমস্যা, তা শিক্ষকদের সামনে সাজিদই উপস্থাপন করত। তার মধ্যে নেতৃত্বের গুণ ছিল। সে যে আন্দোলনে থাকবে, এটা জানা কথা। সব সময় প্রতিবাদী থাকত সাজিদ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রেজাউল করিম ইকরামুলের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। উপাচার্য বলেন, ‘ইকরামুলের পরিবারের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা। আন্দোলনে আরও যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের পাশেও আমরা সব সময় রয়েছি। আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছি আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য।’

সভায় সাজিদের মা-বোন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন মঞ্জুর মুর্শেদসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।