বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ
ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ৪৩% শনাক্তের বাইরে
দেশে প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম।
বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ রোগ শনাক্তকরণের বাইরে থেকে যাচ্ছে। দেশে ১০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় এই ডায়াবেটিসে। নীরব ঘাতক এই আজীবনের অসুখ প্রতিরোধযোগ্য। সুস্থ থাকতে নিয়ন্ত্রিত ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
আজ ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘ডায়াবেটিস: সুস্বাস্থ্যই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’ দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংস্থা নানা আয়োজন করেছে।
গত বছর প্রকাশিত ডায়াবেটিস চিকিৎসার জাতীয় নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, দেশে প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। রোগটিতে ২০ থেকে ৮০ বছর বয়সী ১৪ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ ভুগছেন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম। বর্তমান ধারায় চলতে থাকলে ২০৪৫ সালে দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা হবে ২ কোটি ২৩ লাখ।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের রোগ নির্ণয় হচ্ছে না। এই সংস্থার যে চিত্র, তাতে দেখা যায়, রোগটি বাংলাদেশে ঊর্ধ্বমুখী।
■ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। ■ নিয়মিত ব্যায়াম করা, সুষম খাদ্য ও ইনসুলিন গ্রহণ করা, সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
মানুষের শরীরে ইনসুলিন নামের একধরনের হরমোনের অভাব হলে রুক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই অবস্থাকেই ডায়াবেটিস বলা হয়। রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য না। তবে নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ থাকা যায়।
ডায়াবেটিস সাধারণত দুই ধরনের হয়; টাইপ–১ ও টাইপ–২। চিকিৎসকেরা জানান, মূলত ৩০ বছরের কম বয়সীদের টাইপ–১ ডায়াবেটিস হয়। এ ধরনের রোগীর সংখ্যা দেশে কম। তবে টাইপ–২ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এ দেশে বেশি।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি জানিয়েছে, বাংলাদেশে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার ৬ থেকে ১৪ শতাংশ। এ ছাড়া গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের টাইপ–২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি, প্রায় ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া গর্ভকালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে শিশুদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
গতকাল বুধবার ডায়াবেটিক সমিতি রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে বলা হয়, অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাবার খেলে, শারীরিক পরিশ্রম ও নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে, মাত্রাতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিওর, অন্ধত্ব ও অঙ্গচ্ছেদের মতো মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী ঝুঁকি থাকে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা, সুষম খাদ্য খাওয়া, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণ করা, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতার জন্য সবারই নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। এ ছাড়া যেসব গর্ভবতী নারীর ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের যত্ন ও চিকিৎসায় বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডায়াবেটিক সমিতির পরিচালক (প্রকাশনা ও গণসংযোগ) ফরিদ কবিরের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান, মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের সিইও সাহেলা নাসরিন, বারডেমের এন্ডোক্রোইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠান, ডাক্তার অরুপ রতন চৌধুরীসহ অন্যরা।