একবার মেয়েকে নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে এসেছিলেন বাবা। শান্তিনগরে যাবেন, রিকশা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। হাঁটতে হাঁটতে প্রেসক্লাবের সামনে পর্যন্ত চলে এলেন বাবা–মেয়ে। তখন সেখানে কিছু ভ্রাম্যমাণ ফাস্ট ফুডের দোকান বসত। মেয়ে তখন বাবার কাছে ফ্রুটস সালাদ খাওয়ার আবদার করেছিলেন। বাবা খাওয়ালেন। সালাদটা খাওয়ার পর মেয়ের চোখে–মুখে যে খুশিটা দেখেছিলেন, এমন খুশি আর কখনোই হতে দেখেননি বাবা জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত মীর রবিউজ্জামান। এখনো সেই কথা মনে পড়লে তাঁর চোখে পানি চলে আসে। তাঁর মেয়ে গ্রামীণফোনের বিপণন বিভাগের পরিচালক ফারহা নাজ জামানের মতে, সেই সালাদের মতো স্বাদ আর কখনোই তিনি পাননি।
‘কথা হোক: বাবা-মেয়ের গল্প শুনি’ আয়োজনে মীর রবিউজ্জামান ও ফারহা নাজ জামান গল্পে গল্পে এসব কথা বললেন। প্রথম আলো ডটকমের সহযোগিতায় জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) ‘সেলিব্রেটিং ডটার্স’ ক্যাম্পেইনের আওতায় বিশেষ এ উদ্যোগের দ্বিতীয় পর্ব আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
বাবার সম্পর্কে বলতে গিয়ে ফারহা জানালেন, সেই স্কুলজীবনের শুরুর দিন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে পড়ার সময় পর্যন্ত মেয়েকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নামিয়ে দিয়ে যেতেন বাবা। প্রথম যখন তিনি একা দেশের বাইরে যাচ্ছিলেন, বিমানে বসে বাবা পাশে নেই দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন। তাই বড় হয়ে এখনো অপরিচিত কোনো জায়গায় যেতে গেলে বাবার শরণাপন্ন হন তিনি।
আর বাবাও বলেন, ‘মেয়ে আমাকে ডাকুক, এতে আমার ভীষণ ভালো লাগে।’ সে কারণেই হয়তো এখনো দেশের বাইরে গেলে মেয়ে ফারহা উড়োজাহাজে বসে শেষ কলটা বাবা মীর রবিউজ্জামানকেই দেন।
মা–বাবা দুজনই ক্রীড়াবিদ, মেয়ে সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে করপোরেট চাকরি করছেন। কখনো বাবা বা মায়ের মতো হওয়ার চেষ্টা করেছেন কি না? দর্শক সারি থেকে এমন প্রশ্নের জবাবে ফারহা বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমার মা–বাবা ক্রীড়াঙ্গনে অনেক সফল ছিলেন। যদি আমি এই পেশাটা বেছে নিতাম, তাহলে এটা আমার জন্য অনেক চাপের হতো। এটা ভেবেই আমি সেখানে যাইনি।’
কথাগুলো বলার সময় পাশ থেকে বাবা জানান, তাঁর মেয়ে স্কুলজীবনে টেবিল টেনিসে জাতীয় পর্যায়ে রানার্সআপ হয়েছিলেন।
ফারহার এত দূর আসার পেছনে মা–বাবা উভয়ের অবদানই স্বীকার করেন তিনি। কারণ, ছোটবেলায় তাঁর ঘুম ভাঙত গান শুনে। সেই গানের ধরন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম হতো। বিশেষ দিনে বিশেষ গান, আর অন্য দিনে পরিবারের যে কারও পছন্দের গান। যেটি ফারহার যোগাযোগের দক্ষতাকে বাড়িয়েছে। পাশাপাশি চা, পুডিং ও ডিমভাজা—রান্নার এই প্রাথমিক শিক্ষাটা তাঁর বাবার কাছ থেকেই শিখেছেন ফারহা।
গল্পের শেষ দিকে এসে ফারহা জানান, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তাঁর মনে হতো তাঁর বাবা বোধ হয় তাঁকে বোঝেন না। কিন্তু এক সময়ে এসে তিনি বুঝতে পেরেছেন, তাঁর বাবা পৃথিবীর সেরা একজন বাবা। তাঁর ও মায়ের অবদানেই তিনি আজকের এই অবস্থানে এসেছেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ফারহা ও তাঁর বাবাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান প্রথম আলোর ইংরেজি বিভাগের প্রধান আয়েশা কবির এবং প্রথমা প্রকাশনের সমন্বয়ক মেরিনা ইয়াসমিন। এরপর দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন সংগীতবিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘ইয়াং স্টার সিজন টু’র তিন ফাইনালিস্ট দীপান্বিতা শীল সিঁথি, আদিবা কামাল ও অংকিতা মল্লিক। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন অনুষ্ঠানটির সমন্বয়ক সাইদুজ্জামান রওশন।
‘সেলিব্রেটিং ডটার্স’ ক্যাম্পেইনের এই বিশেষ উদ্যোগে বাবা–মেয়ের অব্যক্ত কথাগুলো প্রকাশ করতে পরস্পরকে চিঠি লেখার ‘কথা হোক’ নামের আয়োজনে পাঠকও অংশ নিতে পারবেন।
পাঠক তাঁর কন্যা/বাবার উদ্দেশে লেখা চিঠি celebratingdaughters.pro এই ওয়েব ঠিকানায় জমা দিতে পারবেন অথবা [email protected]– এই ঠিকানায় ই–মেইল করতে পারবেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিঠি পাঠানো যাবে। বাছাই করা চিঠি নিয়ে প্রকাশিত হবে বই। এ ছাড়া সেরা চিঠি লেখকদের জন্য বিশেষ পুরস্কারও থাকছে।