এক দিনে ২০১ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে
ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। ২৪ ঘণ্টায় ২০১ জন ডেঙ্গু রোগী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে কক্সবাজার জেলায়। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হলো ২০।
গণমাধ্যমে পাঠানো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের সর্বশেষ ডেঙ্গু পরিস্থিতির তথ্যে বলা হয়েছে, গতকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে আজ সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে ২০১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৯ জন ভর্তি হয়েছে রাজধানীর ৪৭টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে। বাকি ৫২ জন ভর্তি হয়েছে দেশের বিভিন্ন সরকারি জেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ডেঙ্গুর জীবাণু মানুষের শরীরে আসে এডিস মশার মাধ্যমে। বর্ষায় বাসাবাড়িতে পানি জমে এই মশার বংশবিস্তার বেশি ঘটে। ২০০০ সালে বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গুর বড় ধরনের প্রকোপ দেখা দেয়। মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরের বছরগুলোতে এর প্রকোপ খুব বেশি না হলেও ২০১৯ সালে তা ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ওই বছর দেশে ডেঙ্গুতে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু এবং লক্ষাধিক মানুষ এতে আক্রান্ত হয়।
প্রতিবছরের মতো এ বছর বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা রাজধানীতে মশা জরিপ করেছিল। জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছিল, গত বছরের চেয়ে এ বছর একই সময়ে রাজধানীতে এডিস মশার লার্ভা বেশি দেখা গেছে। এরপর কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলেছিলেন, এ বছর বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ার ঝুঁকি আছে। তাঁরা এ–ও বলেছিলেন যে বৃষ্টি যদি থেমে থেমে হয় অর্থাৎ এক দিন বৃষ্টির পর কয়েক দিন হলো না, আবার এক দিন হলো, তাহলে মশা বাড়বে।
জানুয়ারি মাস থেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্তের তথ্য দিয়ে চলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুম। জানুয়ারি থেকে মে—এই পাঁচ মাসে ৩৫২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। জুন মাসে ভর্তি হয়েছিল ৭৩৭ জন। এ মাসে একজন ডেঙ্গুতে মারা যায়। পরের মাসে অর্থাৎ জুলাই মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৫৭১ জনে। এই মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ৯ জনের। আর চলতি মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩৩ জন। এ মাসে এ পর্যন্ত মারা গেছে ১০ জন।
কক্সবাজারে মৃত্যুও বেশি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে যে একজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে, তাঁর মৃত্যু হয়েছে কক্সবাজার জেলায়। এ নিয়ে কক্সবাজার জেলায় এ বছর ডেঙ্গুতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজধানী ঢাকায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর ৩৮টি জেলায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকাতে। এ পর্যন্ত ঢাকায় ৪ হাজার ৬৯২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯৩২ জন রোগী। গতকালও ভর্তি ছিল ৫৬ জন। তবে এ বছর এই হাসপাতালে কোনো ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়নি।
ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে দেশের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের জেলা কক্সবাজারে। এ জেলায় এ পর্যন্ত ৫৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি আছে ৬০ জন, সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছে ৪৮৩ জন আর মারা গেছে ১১ জন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মশা বৃদ্ধি বা ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির জন্য যে পরিবেশ দরকার, সেই পরিবেশ এখন দেশে বিদ্যমান।’ তিনি আরও বলেন, এই সময় কোনো জ্বরকে অবহেলা করা চলবে না। জ্বর হলেই বিশেষ করে শিশু এবং একাধিক রোগে ভোগা বয়স্কদের জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।