প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে উদার দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অবকাঠামো, উৎপাদন, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগের জন্য ভারতের বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানান তিনি।
আজ বুধবার সকালে দিল্লির মৌর্য শেরাটন হোটেলে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সমাবেশে বক্তৃতায় শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) ও ভারতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে।
চার দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী গত সোমবার দিল্লিতে এসেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের অবকাঠামো, প্রকল্প, শিল্পকারখানা, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে সম্ভাব্য বিনিয়োগ বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করব। ভারতীয় বিনিয়োগকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো কম সময়ে, সাশ্রয়ী ব্যয় ও স্বল্প সম্পদে উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয়ের নিশ্চয়তাসহ বাই-ব্যাক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন করতে পারে।’ তিনি জানান, এ অঞ্চলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সবচেয়ে উদার বিনিয়োগের ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশে বিস্তৃত সুযোগ-সুবিধা, আকর্ষণীয় প্রণোদনানীতি ও ধারাবাহিক সংস্কারপ্রক্রিয়ার সুযোগ রয়েছে।
দুই দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠন আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমানে শিল্প, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বহুমুখীকরণের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য মোংলা ও মিরসরাইতে দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে। আমি আজ এখানে উপস্থিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সেখানে বিনিয়োগ করার জন্য অনুরোধ করব।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এটি বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের সদিচ্ছাকে কাজে লাগানোর পথকে আরও প্রশস্ত করবে এবং এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনবে। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা তাঁদের পণ্য শুধু ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতেই নয়, নেপাল, ভুটান এবং দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও রপ্তানি করতে সক্ষম হবেন। তিনি বলেন, ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের বাংলাদেশের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার এবং এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বল্প খরচ এবং বিশাল ভোক্তা ভিত্তির সুবিধা নেওয়ার সময় এসেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিল্পের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে এবং আমাদের কৌশলগত অবস্থানের পূর্ণ সুবিধা নিতে তারা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।’
হাজারো ভারতীয় এখন বাংলাদেশে কাজ করছেন
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ও বাণিজ্য অংশীদার। বাংলাদেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পর্যটক ও চিকিৎসার জন্য রোগী আসেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাজার হাজার ভারতীয় নাগরিক এখন বাংলাদেশে কাজ করছেন। তাঁরা উভয় দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান গভীর বন্ধুত্বের বন্ধন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে এবং বিকাশ লাভ করবে। এ জন্য দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে ঘনিষ্ঠ হওয়া এবং আমাদের জনগণের পারস্পরিক সমৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করা উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ব্যবসায়ীদের সমাবেশে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে দুই দেশের ব্যবসায়ীনেতাদের মধ্যে আলোচনা ও ধারণা বিনিময়ের সুযোগ করে দেয়। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সফল উদ্যোগ নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ীনেতাদের একে অপরকে জানার, ধারণার বিনিময় এবং নিজেদের অগ্রাধিকার, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলোর জানাবোঝার সুযোগ করে দেয়। এ সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ দুটির মধ্যে ব্যবসা–বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতিফলন ঘটাবে।’ তিনি আরও বলেন, সন্দেহ নেই যে কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী পণ্য ও জ্বালানির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। এর কারণে বিদ্যমান সরবরাহব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। এতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ অনেক দেশ তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তবে এটি আনন্দের বিষয় যে চলমান চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম। অনেক বিশেষজ্ঞ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, বর্তমানে বিশ্বের ষষ্ঠ অর্থনীতি ভারত ২০৫০ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠতে পারে। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং আইএমএফ ভারতকে ২০২১-২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতি হিসেবে তুলে ধরেছে।
দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী গঙ্গাপুরম কিষান রেড্ডি, সিপিআইয়ের মহাপরিচালক চন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ও সিআইআইয়ের সভাপতি সঞ্জীব বাজাজ। দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকও বিনিময় হয়।