৬০০ কোটির বেশি টাকা কর দাবি, গ্রামীণ কল্যাণের রিট খারিজের আদেশ প্রত্যাহার
পুনর্মূল্যায়নের পর পাঁচ করবর্ষের বিপরীতে ৬০০ কোটির বেশি টাকা প্রদেয় কর দাবি নিয়ে কর কমিশনারের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে গ্রামীণ কল্যাণের করা পৃথক রিট খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে দেওয়া রায় প্রত্যাহার করে নিয়েছেন হাইকোর্ট। এ-সংক্রান্ত নথি প্রধান বিচারপতির দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৪ আগস্ট রিট খারিজ করে রায় দিয়েছিলেন। গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান ছিলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রিট খারিজ করে গত ৪ আগস্ট দেওয়া রায় প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রামীণ কল্যাণের আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন। তিনি বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, গত ৪ আগস্ট রায় ঘোষণার পর আদেশ রিকল (প্রত্যাহার) করার জন্য গ্রামীণ কল্যাণের রিট দুটি গত ৮ আগস্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় আসে। তারপর গত ২৯ আগস্ট রিকল করেন আদালত। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, দ্বৈত বেঞ্চের দ্বিতীয় বিচারক একসময় এই মামলায় সরকারপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। যেহেতু উনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, সুতরাং রায়টি ডিফেকটিভ (ত্রুটিপূর্ণ) হবে। তাই রায় প্রত্যাহার করেছেন বলে আদেশ দিয়েছেন। পুনরায় কোর্ট নির্ধারণের জন্য মামলাটি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়েছেন। এখন প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিলে সেখানে রুলের ওপর নতুন করে শুনানি হবে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন আরও বলেন, ‘মামলাটি এই বিচারক ছয় মাস যাবৎ শুনলেন। দ্বিতীয় বিচারকও জানেন, তিনি সরকারপক্ষে আইনজীবী ছিলেন। এখন উনি বিচারক। উনি শুনতে পারেন না। এটা কোর্টও জানেন। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন এখানে হয়রানিগ্রস্ত হলাম। পরিস্থিতির কারণে গত ৪ আগস্ট সময় চাওয়া হয়। রায় দিলেন। আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে, জনগণের কাছে একটা ভুল বার্তা গিয়েছে।’
পুনর্মূল্যায়নের পর ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭—এই করবর্ষের জন্য গ্রামীণ কল্যাণের কাছে প্রদেয় কর দাবি ঘিরে গ্রামীণ কল্যাণ ২০১৭ সালে পৃথক দুটি রিট করে। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ অক্টোবর হাইকোর্ট রায় দেন।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে এনবিআর গত বছর পৃথক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। আপিল বিভাগ গত ১১ মার্চ লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টে মূল বিষয়বস্তুর ওপর শুনানির নির্দেশ দেন। শুনানি শেষে গত ৪ আগস্ট রিট খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন, যা প্রত্যাহার হলো।
রায়ের পর গত ৪ আগস্ট তৎকালীন সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছিলেন, পাঁচটি করবর্ষের জন্য গ্রামীণ কল্যাণের কাছে কর বাবদ ৬৬৬ কোটি টাকা দাবি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রিট খারিজ হওয়ায় আয়কর বাবদ গ্রামীণ কল্যাণের কাছ থেকে ওই অর্থ আদায় করতে পারবে এনবিআর।