কোটার আন্দোলন সংঘাতে ঠেলে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে: ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় আজছবি: ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সৌজন্যে

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বলেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন সংঘাতে ঠেলে দিয়ে দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে।

নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আজ বুধবার এক সভায় এ মন্তব্য করা হয়। কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জামায়াত-বিএনপি চক্রের অনুপ্রবেশ, রাজাকারদের পক্ষে স্লোগান এবং উদ্ভূত সংঘাতময় পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠক হয়। এতে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র প্রতিনিধিরাও ছিলেন।

নির্মূল কমিটির সভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী সভায় সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদসন্তান আসিফ মুনীর।

সভায় কোটা সংস্কারের ন্যায্যতা, সংক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীদের আবেগ ও অনুভূতিকে পুঁজি করে তাঁদের আন্দোলনে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির অনুপ্রবেশ, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করে একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী গণহত্যাকারী, নারী ধর্ষণকারী রাজাকারদের মহিমান্বিত করে স্লোগান দেওয়া, ১৬ জুলাই ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষে ছয়জনের মৃত্যু এবং শত শত শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, ‘সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের জন্য ছাত্রছাত্রীদের চলমান আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে আরম্ভ হলেও সুযোগ বুঝে বিএনপি-জামায়াত চক্র বাইরে থেকে সমর্থনের কথা বলে তরুণদের একটি ন্যায়সংগত ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণতি করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এতে অনুপ্রবেশ করে। জামায়াত-বিএনপির ছাত্রকর্মীরা দলনিরপেক্ষ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগে বিভিন্ন সময় সড়ক অবরোধ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিরোধ ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ১৫ জুলাই গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলোচনাকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজাকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রাজাকারদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় জামায়াত-বিএনপির ছাত্রকর্মীরা মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাস থেকে বেরিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাদীপ্ত একটি ঐতিহাসিক স্লোগানকে বিকৃত করে “তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার” স্লোগান দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক বিভিন্ন সংগঠনের শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা শাহবাগ চত্বরে সমবেত হয়ে মিছিল করেছে।’

প্রস্তাবে বলা হয়, ‘১৬ জুলাই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয় এবং উভয় পক্ষের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। দুর্ভাগ্যজনক এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রয়োজন। আমরা এ ধরনের সংঘাতে অত্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা কখনো ছাত্রদের হাতে অস্ত্র দেখতে চাই না। গত এক যুগেরও অধিক সময় আমরা লক্ষ করছি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি-জামায়াত চক্র সংঘাত ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি প্রভুদের সহযোগিতায় ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। বিভিন্ন সময়ে ছাত্র ও জনতার বিভিন্ন ন্যায়সংগত ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনে তারা অনুপ্রবেশ করে সেগুলোকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে একাত্তরে পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের পাশাপাশি বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানাতে চাইছে।’

প্রস্তাবে বলা হয়, ‘কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিনাশী অপশক্তি তাদের ন্যায়সংগত ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকে যাতে কোনোভাবে দেশের অর্থনীতি ও জনজীবন বিপর্যস্ত করে সরকার পতনের উদ্দেশ্যে যেন ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে নেতৃবৃন্দকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবন, পরিবারের নিরাপত্তা সবকিছু বাজি রেখে মরণপণ যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের ২৪ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন বলেই এ দেশ আজ অর্থসামাজিক উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে অনেক পেছনে ফেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে। একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক কোনো অবস্থায় যাঁদের কারণে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করতে পারেন না।’

প্রস্তাবে বলা হয়, ‘সর্বস্তরের নাগরিকদের সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কোটার প্রয়োজন হয়। দেশ যত উন্নত হবে, কোটার প্রয়োজন তত কমতে থাকবে। বর্তমান সংকট সমাধানের লক্ষ্যে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের জন্য আমরা মনে করি, সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারকের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিশন গঠন করে তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে বৈষম্যমুক্ত সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিক সমাজ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দাবি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে, এটা স্বাভাবিক। সেই আন্দোলন যাতে জনজীবন বিপর্যস্ত করে দেশকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’

সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, শহীদসন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী, তাপস কান্তি বল, লেখক ব্লগার মারুফ রসূল, চারুশিল্পী ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী, চলচ্চিত্র নির্মাতা ইসমাত জাহান, সংস্কৃতিকর্মী শাহীন উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।