ডিসেম্বরে প্রতিবেদন চূড়ান্ত হবে

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত নৃশংসতার ঘটনা তদন্ত করছে তথ্যানুসন্ধান দল। ডিসেম্বরে তারা প্রতিবেদন চূড়ান্ত করবে বলে আশা ফলকার টুর্কের।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। গতকাল রাজধানীতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়েপিআইডি

দেশে জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত নৃশংসতার ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন) কাজ চলমান। আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তথ্যানুসন্ধান দল তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করবে। গতকাল বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে এ আশা প্রকাশ করেন জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক।

দুই দিনের ঢাকা সফরের শেষ দিন গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন ফলকার টুর্ক। এ সময় তিনি জাতিসংঘ তথ্যানুসন্ধান দলের কাজ এবং ঢাকায় সফরকালে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান, সংস্কার কমিশনের প্রধান, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, যা বিপ্লবের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত করছে, তার কাজ নিয়েও আলোচনা করেন। পাশাপাশি দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশন নিয়েও আলোচনা করেন ফলকার টুর্ক।

গুমের ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টাকে জানান ফলকার টুর্ক। প্রধান উপদেষ্টাকে তিনি বলেন, ‘এমন অনেক কিছু আছে, যা ঠিক করা দরকার।’ গুমের ঘটনা তদন্তে তাঁর কার্যালয় তদন্ত কমিশনকে সহায়তা করছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে ‘স্বাধীন ও সম্পূর্ণ কার্যকর’ করে শক্তিশালী করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান ফলকার টুর্ক।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর ঢাকায় তাদের উপস্থিতি জোরদার করতে চায় বলে প্রধান উপদেষ্টাকে জানান ফলকার টুর্ক। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধানকে বাংলাদেশ সফর করার জন্য এবং বিপ্লবের সময় তাঁর সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা। ড. মুহম্মদ ইউনূস তাঁকে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আপনার সফরে খুশি। তাঁরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, তাঁর সরকার প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং উন্নয়ন ও মানবাধিকার যেন একসঙ্গে চলতে পারে, তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁর সরকার আগের সরকারের ভুল ও অপরাধের ‘পুনরাবৃত্তি’ করবে না।

রোহিঙ্গা–সংকট বিশেষ করে মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সহিংসতার মুখে পালিয়ে নতুন করে কয়েক হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রসঙ্গেও আলোচনা করেন ড. ইউনূস ও ফলকার টুর্ক। এ সময় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আরও আন্তর্জাতিক সমর্থন ও সংকট সমাধানে অব্যাহত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান।

মানবাধিকার দপ্তর খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর চালুর বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দপ্তরটি খুলতে দেওয়া হবে না, এটাও বলা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে।

গতকাল দুপুরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। এর আগে গতকাল সকালে নিজের দপ্তরে তিনি ফলকার টুর্কের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) খোলার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার সম্মতি দিয়েছে, সম্প্রতি এমন একটি খবর গণমাধ্যমে এসেছে। আবার সরকারের অসম্মতি এবং এখনই এই দপ্তর চালু হচ্ছে না, এমন খবরও গণমাধ্যমে এসেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সম্মতি ও অসম্মতি তো একসঙ্গে হতে পারে না। যখন সম্মতি ও অসম্মতির প্রশ্ন আসে, তখন বুঝতে হবে যে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। অথবা এটা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এটাই প্রকৃত অবস্থা। আসলে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে (ওএইচসিএইচআরের) অফিস দেওয়া নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দেওয়া হবে না, এটাও বলা হয়নি। আমরা বিষয়টি এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি।’