হয়রানিমূলক মামলা ঠেকাতে আইন উপদেষ্টার নতুন চিন্তা

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় হয়রানিমূলক মামলার প্রতিকারে নতুন চিন্তার কথা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি জানিয়েছেন, ডিসি, এসপি, জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে জেলা পর্যায়ে কোনো কমিটি করা যায় কি না, সেই চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এই কমিটি মামলার প্রাথমিক তথ্যবিবরণী (এফআইআর) করার আগে যাচাই করে দেবে।

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা এ কথা জানিয়েছেন। ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন: আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়ের বিগত ১০০ দিনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন তিনি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পূর্বশত্রুতা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা এবং চাঁদাবাজি ও হয়রানি করতেও অনেককে এসব মামলায় আসামি করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মামলায় ‘ইচ্ছেমতো’ আসামি করা নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে।

আইন উপদেষ্টা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হয়রানিমূলক মামলা নিয়ে তাঁরাও বিব্রত। এ নিয়ে নানা রকম প্রতিকার ব্যবস্থার কথা চিন্তা করা হয়েছে। একবার সিদ্ধান্ত হলো ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করে পুলিশকে একটি ক্ষমতা দেওয়া হোক যে তারা এফআইআর করার আগে একটি প্রাথমিক তদন্ত করবেন। তখন বিভিন্ন পক্ষ থেকে বলা হলো, এটা দেওয়া হলে পুলিশকে দ্বিগুণ স্বেচ্ছাচারিতা করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, এখন যেটা চিন্তা করা হচ্ছে, সেটা হলো পুলিশ সুপার (এসপি), জেলা প্রশাসক (ডিসি), জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা—তাঁদের নিয়ে জেলা পর্যায়ে কোনো কমিটি করা যায় কি না। এ ধরনের একটা রূপরেখা তৈরি করা যায় কি না যে মামলার এফআইআর করার আগে এই কমিটি যাচাই করে দেবে।

এটা কেবল চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, এই নিয়ে দু-একজন আইনবিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে, তাদের কোনো প্রস্তাব থাকলে সেটা দিক।

আসিফ নজরুল বলেন, আজ যাঁরা হয়রানিমূলক, মিথ্যা ও বাণিজ্যমূলক মামলা করছেন, কাউকে কাউকে নাকি হুমকিও দেওয়া হচ্ছে যে টাকা না দিলে মামলা করা হবে। তিনি বলেন, ‘আপনারা (হয়রানিমূলক মামলাকারী) মনে রাখেন, আমি যদি এই মন্ত্রণালয়ে থাকি, আপনাদের কীভাবে শাস্তি দেওয়া যায়, সেটির আইন খুঁজে বের করব।’

এ ধরনের মামলা নিয়ে গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ভুক্তভোগী ব্যক্তি যদি মামলা করেন, তাহলে তাঁকে মানা করা যায় না উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেছিলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই, দ্রুত তদন্ত করে তাঁদের নাম বাদ দিতে বলা হয়েছে। পুলিশকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ১২ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও ঢালাও মামলার বিষয়ে কথা বলেছিলেন। দেশে ঢালাও মামলার প্রবণতা দেখা দিয়েছে, যা বিব্রতকর বলে উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, আইনগতভাবে বিষয়টি কীভাবে সামাল (ট্যাকল) দেওয়া যায়, সে বিষয়ে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে।

মামলার বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর এই নির্দেশনায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য ঘটনা ঘিরে যেসব মামলা হচ্ছে, সেগুলোর প্রাথমিক তদন্তে কোনো আসামির সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে মামলা থেকে তাঁর নাম প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল। একই সঙ্গে সঠিক তথ্য–প্রমাণ ছাড়া এসব মামলায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা যাবে না বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তবে এখনো এ ধরনের মামলা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি বলে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা রয়েছে।