আগে পুলিশের নাম শুনলে মানুষ ভয় পেত; এখন জানে, পুলিশ সেবা দেয় : প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ পুলিশকে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্বমানের ‘স্মার্ট পুলিশ’ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সেবার মাধ্যমে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। করোনা মহামারির কারণে দুই বছরের ব্যবধানে সশরীর উপস্থিত হয়ে এবার ছয় দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন তিনি।
লক্ষ্য ‘স্মার্ট পুলিশ’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একটি দক্ষ এবং বিশ্বমানের স্মার্ট পুলিশ গড়ে তোলা।’ তিনি বলেন, পুলিশে ইতিমধ্যে ডিএনএ ল্যাব, আধুনিক ফরেনসিক ল্যাব, অটোমেটেড ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন এবং আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রতিটি বিভাগীয় সদর দপ্তরে এ ধরনের ল্যাব স্থাপন করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় আমরা সিআইডিতে একটি “সাইবার পুলিশ সেন্টার স্থাপন” করেছি। এ ছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) “সিটিটিসি”সহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও সাইবার অপরাধ দমনে কাজ করছে। অচিরেই আমরা বাংলাদেশ পুলিশে একটি পূর্ণাঙ্গ সাইবার পুলিশ ইউনিট স্থাপন করব এবং জেলা পর্যায় পর্যন্ত এ ইউনিটের শাখা বিস্তৃত করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ বাহিনীকে সরকার ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যানবাহন সরবরাহ করেছে। পুলিশের গতিশীলতা ত্রিমাত্রিক পর্যায়ে উন্নীত করতে রাশিয়া থেকে দুটি হেলিকপ্টার কেনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যাভিয়েশন ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
পুলিশ হবে জনগণের, শোষকের নয়
পুলিশ সম্পর্কে জনগণের ভীতি দূর করে বাহিনী হিসেবে জনগণের সেবা এবং ভালো কাজগুলো চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা অটুট রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করুন।’
আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী পুলিশ হবে জনগণের, শোষকের নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সর্বদা এ দেশের পুলিশকে “জনগণের পুলিশ” হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। আমি ধন্যবাদ জানাই, আমাদের পুলিশ বাহিনী এখন জনগণের পুলিশ হিসেবেই তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আগে পুলিশের নাম শুনলে মানুষ ভয় পেত; এখন জানে, পুলিশ সেবা দেয় ও তাদের পাশে দাঁড়ায়।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মানুষের, তথা জনগণের আস্থা অর্জন করা যেকোনো বাহিনীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনারা তা করে যাচ্ছেন। অত্যন্ত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই আপনারা এই সেবা করে যাবেন। জনগণের মনে পুলিশের প্রতি যে আস্থা সৃষ্টি হয়েছে, সেটা যেন অক্ষুণ্ন থাকে। আমরা চাই, আমাদের পুলিশ বাহিনী জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী হিসেবেই জাতির পিতার সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে।’
পুলিশ বাহিনীও রেহাই পায়নি
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপদ-আপদে পুলিশ সব সময় মানুষের পাশে আছে। পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগেও পুলিশের ভূমিকা রয়েছে। মানুষের জানমাল বাঁচানোর জন্য পুলিশ সদস্যরা নিজের জীবনও উৎসর্গ করেন। যেকোনো ঝুঁকি নিতে পিছপা না হওয়াটাই পুলিশের কাজ এবং সেটা তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই করে যাচ্ছে।
এ জন্য পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার সময় পুলিশ সদস্যদের বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ অগ্নিদগ্ধ এবং ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছিল। পুলিশ বাহিনীও রেহাই পায়নি। ২৯ জন পুলিশ সদস্যও নির্দয় নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন এবং অনেকে আহত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, খুব নির্দয়ভাবে পুলিশকে বিএনপি-জামায়াত-শিবিররা যেভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করেছে, তা কোথাও দেখা যায় না। তাদের হামলায় সাড়ে ৩ হাজার বাস-ট্রাক, ১৯টি ট্রেন, ৯টি লঞ্চ পুড়ে ধ্বংস হয়। ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাঙচুর করে এবং ৬টি ভূমি অফিস সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়।
এ ছাড়া জঙ্গি প্রতিরোধে পুলিশ সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করে হোলি আর্টিজান বেকারির জঙ্গি হামলার ঘটনায় আত্মদানকারী দুই পুলিশ সদস্যকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন সরকারপ্রধান।
পদক পেলেন ১১৫ পুলিশ কর্মকর্তা
এর আগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন তাঁকে স্বাগত জানান।
প্রধানমন্ত্রী একটি খোলা জিপে করে বাংলাদেশ পুলিশের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। পুলিশের বিভিন্ন দল বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করে।
পরে প্রধানমন্ত্রী ১১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) সাহসিকতা, রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) সাহসিকতা, বিপিএম সেবা এবং পিপিএম সেবা প্রদান করেন।
এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য ও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।