শেখ হাসিনা যা করেছেন, তা হিটলারের চেয়ে কম নয়: সলিমুল্লাহ খান
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে যা করেছেন, সেটি হিটলারের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় বলে মন্তব্য করেছেন লেখক-অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য তাঁর অপরাধ রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে বিবেচিত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আজ দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব মন্তব্য করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‘পাথুরে প্রমাণ অথবা ইতিহাস কেন দিগ্বিজয়ের কাহিনি নয়’। বক্তৃতা শেষে সলিমুল্লাহ খান উপস্থিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আমাদের দেশ স্বাধীন, আমাদের অধিকার সংবিধানে দেওয়া আছে। তিনি (শেখ হাসিনা) প্রতি পদে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। জঙ্গি নামে হোক অথবা দেশদ্রোহী নামে হোক, আমাকে বিনা বিচারে যদি ২৪ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়, আমাকে যদি গোপন করা হয়, সেটা হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহের সমান অপরাধ। কারণ, রাষ্ট্রের মালিক হচ্ছে প্রত্যেকটি নাগরিক। প্রত্যেকের বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহ মানে হচ্ছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা।’
অনুষ্ঠানে দেশের শিক্ষা খাতের সমালোচনা করেন সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সকল সরকারের সবচেয়ে অবহেলিত দিক হচ্ছে বিদ্যাচর্চা। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মাত্র জাতীয় আয়ের ২ ভাগ, যেখানে জাতিসংঘ বহু বছর আগে বলেছে কমপক্ষে ৬ ভাগ করতে হবে। আমাদের সকল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দরিদ্রতম মন্ত্রণালয় হচ্ছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।’
সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা খাতে লাইব্রেরি হচ্ছে সবচেয়ে অবহেলিত। গ্রন্থাগারের সঙ্গে যদি খাওয়ার ঘর না থাকে, ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে কীভাবে? এটা তো পরিকল্পনার মধ্যে থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে গবেষকদের জন্য একটিমাত্র কক্ষ রয়েছে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ হাজার শিক্ষার্থী, সেই হিসাবে শতকরা কতজন এখানে পড়তে আসবে, আপনারা বলেন।’
সলিমুল্লাহ খান আরও বলেন, ‘ইউরোপ–আমেরিকাতেও দেখা যাচ্ছে আজকাল জাদুঘরে বেশি লোক আসে না। কারণ, অনেকে জানেন না এগুলোর মানে কী। এ জন্য জাদুঘর পরিচালনায় অনেক অধ্যাপক থাকতে হবে বুঝিয়ে বলার জন্য। আমি মনে করি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের সব জায়গার মতো নবচিন্তার সূত্রপাত হয়েছে। কিন্তু এটাকে নবজাগরণ বলা যাবে কি না, সেটা দেখতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা ইংরেজিতে দেওয়ার জন্য আপনার কাছে অনেকগুলো যুক্তি আছে। কিন্তু আপনি কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চাদের স্কুলে ইংরেজিতে পড়াচ্ছেন কেন? আমার আপত্তি ইংরেজিতে নয়, আমার আপত্তি হচ্ছে ইংরেজিকে একমাত্র করা।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের সাম্প্রতিক কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জাদুঘরের বিভিন্ন সংগ্রহ আমরা অনলাইনে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছি। আমরা চাই, আমাদের প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসের বাইরে নতুন কিছু পাওয়া যায় কি না। আমরা বুদ্ধিভিত্তিক বিতর্ক হোক সেটা চাই।’