সিলেটে দখল হটিয়ে হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন পার্ক
একদিকে টিলাভূমি, অন্যদিকে সুরমা নদী। এ রকম পরিবেশে সিলেট নগরীর উত্তর দিক থেকে ১২টি ছড়া-খাল গিয়ে মিশেছে দক্ষিণ দিকের সুরমায়। এসব ছড়া-খালের তীর দখলমুক্ত করে হাঁটাপথ (ওয়াক ওয়ে) নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
এ কাজ করতে গিয়ে ছড়া দখলমুক্ত করায় বের হয়েছে একটি উদ্যান। সিটি করপোরেশন উদ্যানটিকে ‘পার্কে’ রূপ দিতে আলাদাভাবে দেয়াল দিয়ে ঘিরে রেখেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে সেখানে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। সিলেট নগরীতে ছড়ার দখল হটিয়ে এটি প্রথম পার্ক হবে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
ওয়াক ওয়ে প্রকল্পের এই উদ্যানের অবস্থান হচ্ছে নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকার গোয়ালীছড়ার উৎসমুখ এলাকায়। ওই দিন বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ‘এই পার্ক সাময়িকভাবে বন্ধ থাকিবে’ লেখা একটি নির্দেশনা টাঙিয়ে মানুষের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
ওয়াক ওয়ে প্রকল্পকাজ চলাকালে সড়কের পাশে অবৈধ দখলে থাকা কিছু জায়গা বের হয়। এই জায়গা ঘিরে নির্মাণ করা হচ্ছে উদ্যান।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, নগরীর ১২টি ছড়া-খাল সংরক্ষণ ও প্রতিরক্ষাদেয়াল (রেটেইনিং ওয়াল) নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২৫ কিলোমিটার ছড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে গত দুই অর্থবছরের উন্নয়ন পরিকল্পনায় ছড়া-খালের তীরের দখল হটিয়ে সাড়ে চার কিলোমিটার প্রতিরক্ষাদেয়াল নির্মাণ করা হয়। একই এলাকায় ওয়াক ওয়ে প্রকল্পে চার কিলোমিটার দীর্ঘ হাঁটাপথ তৈরি করা হচ্ছে।
কাজের প্রায় ৭০ ভাগ শেষ হওয়ায় নগরীর পাঠানটুলার উপকণ্ঠে তারাপুর চা-বাগানের পাশের গোয়াবাড়ির কালীবাড়ি ছড়া, শাহী ঈদগাহ, সোবহানীঘাট, শাহজালাল উপশহরসহ নগরীর মধ্যভাগ এলাকায় নতুন হাঁটপথ দৃশ্যমান হয়। এ নিয়ে গত ১০ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘ছড়া ঘিরে দৃষ্টিনন্দন হাঁটপথ’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়।
এ হাঁটাপথের সঙ্গে উদ্যান হচ্ছে শাহী ঈদগাহ এলাকায় গোয়ালীছড়ার উৎসমুখ এলাকায়। ছড়াটি নগরীর উত্তর–পূর্ব দিকের চা-বাগান ও টিলাভূমি থেকে নেমে সিটি করপোরেশনের ছয়টি ওয়ার্ডের শতাধিক মহল্লা ঘুরে দক্ষিণ দিকে সুরমা নদীতে গিয়ে মিশেছে। ছড়াটি এলাকার পানি প্রাকৃতিকভাবে নিষ্কাশনে ভূমিকা রাখছে।
নগরীতে ছড়ার তীর দখলমুক্ত করার নিদর্শন হিসেবে সেখানে একটি কফি হাউস, সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আলোকে কিছু স্মারকচিত্র নির্মাণ করা হবে।
ছড়ার উৎসমুখ এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, গোয়ালীছড়ার উৎসমুখে পড়েছে শাহী ঈদগাহ এলাকাসহ এমসি কলেজের উত্তর-পশ্চিম দিকের বিভিন্ন মহল্লা। সেখানে দখল ও দূষণে ছড়াটি কোনো কোনো জায়গায় ছোট নালায় রূপ নেয়। সিটি করপোরেশন সুরমা নদীতে মিলিত হওয়া গোয়ালীছড়ার একটি অংশ দখলমুক্ত করার পর পানির প্রবাহ ফেরাতে উৎসমুখ এলাকায় নজর দেয়। প্রায় ছয় মাসের চেষ্টায় শাহী ঈদগাহ, টিবিগেট, বালুচর, আরামবাগসহ বিভিন্ন বসতি এলাকার দখল থেকে মুক্ত করা হয় ছড়ার উৎসমুখের প্রায় এক কিলোমিটার অংশ। এর মধ্যে শাহী ঈদগাহ-টিলাগড় সড়কের পাশে দখল থেকে মুক্ত করা হয় ছড়ার বেশ কিছু জায়গা।
সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, ওয়াক ওয়ে প্রকল্পকাজ চলাকালে সড়কের পাশে অবৈধ দখলে থাকা কিছু জায়গা বের হয়। এই জায়গা ঘিরে নির্মাণ করা হচ্ছে উদ্যান।
মেয়র আরিফুল হক বলেন, উৎসমুখের পানির প্রবাহ সচল রাখতে ছড়ার তীর দখলমুক্ত করা হয়। তখন বেশ কিছু জায়গা পাওয়া যায়। ওয়াক ওয়ের জন্য সেখানে লোক সমাগম হওয়ায় এখন সেই স্থান পার্ক হিসেবে গড়তে আপাতত মানুষের যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে।
আরিফুল হক আরও বলেন, নগরীতে ছড়ার তীর দখলমুক্ত করার নিদর্শন হিসেবে সেখানে একটি কফি হাউস, সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আলোকে কিছু স্মারকচিত্র নির্মাণ করা হবে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা ও পাহারাদার রাখার ব্যবস্থা করে উন্মুক্ত করা হবে পার্কটি।