পানি ব্যবস্থাপনা
রংপুরের রেকর্ড বৃষ্টি কী বার্তা দিচ্ছে
গত ২৬ সেপ্টেম্বর রংপুরে রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছিল। এর আগেও একাধিকবার ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা অববাহিকায় ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু পানি আটকে থাকেনি।
গেল মাসের শেষ সপ্তাহে রংপুরের রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টির রেশ এখনো কাটেনি। দেশের উত্তরের ওই জনপদের কয়েকটি এলাকায় পানি জমে আছে। নদীগুলোর পানিও ওঠানামা করছে। অসময়ের এই বন্যা ও জলাবদ্ধতায় অপ্রস্তুত এক বিড়ম্বনায় পড়েছে এই জনপদের মানুষ।
গত ২৬ সেপ্টেম্বরের ৪৪৭ মিলিমিটারের ওই বৃষ্টি কি রংপুরে একদমই নতুন ঘটনা, এখানে আগে কি এমন বৃষ্টি হয়নি—ইতিহাসের পাতায় এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলাম। পেলাম একবার না, একাধিকবার ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা অববাহিকায় ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এখানকার সাতটি নদী ও খালের প্রাকৃতিক প্রবাহের কারণে পানি জমতে পারেনি। বসতি এলাকা থেকে পানি দ্রুত সরে গেছে। আর ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত রংপুর ছিল একটি নিচু ও জলা এলাকা। কিন্তু বিশ শতকে এসে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর চেহারা পাল্টাতে থাকে। বিশেষ করে শহরগুলোতে একের পর এক অবকাঠামো ও নদীগুলোতে নানা নিয়ন্ত্রণমূলক কাঠামো নির্মাণ হতে থাকে। ফলে এখানকার প্রাকৃতিক পানিনিষ্কাশনব্যবস্থা বদলে যায়। দেশের অন্য শহরগুলোতেও অবশ্য একই ঘটনা ঘটে।
এসব পুরোনো কথা পরে হবে। সম্প্রতি রংপুরে যা ঘটে গেল, সে বিষয়ে আগে আসি। এবার বাংলাদেশে বৃষ্টির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অন্য বছরের চেয়ে অনেক বেশি। এর মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বছরের শুরুতে একবার ভারী বৃষ্টি হলো, আবার শেষের দিকে এসেও সেই ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। টানা মুষলধারায় বৃষ্টিতে এখানকার শহর-বন্দর, বাজার–ঘাট, ফসলি মাঠসহ জনপদগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এই এলাকায় বসবাসকারী কয়েক কোটি মানুষ হঠাৎ করেই অসহনীয় এই পানিবন্দী অবস্থায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ঘটনাগুলোর অন্তত দেড় সপ্তাহ আগে থেকে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা ও করতোয়া ভরে ওঠে। ভারতের গণমাধ্যমগুলো ইতিমধ্যে জলপাইগুড়ির বন্যা ও প্লাবনের খবর প্রচার করতে শুরু করেছে।
এর মধ্যেই ঘটল ২৬ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। রংপুরের মানুষেরা দেখল দিগন্তবিস্তৃত এলাকায় কালো মেঘের ভ্রুকুটি। ভয়াবহ এক মেঘের বিস্ফোরণ ঘটে গেল। রাত থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিয়ে বিরতিহীনভাবে পরের দিন সকাল পর্যন্ত গড়ায়, যা স্মরণকালে ঘটেনি। এই সময়ে বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে ৪৪৭ দশমিক ৩ মিলিমিটার। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, বিগত এক শতাব্দীতে এমন বৃষ্টির রেকর্ড নেই।
রংপুরে প্লাবনের ইতিহাস
রংপুরের প্রাচীন রেকর্ড থেকে জানা যাচ্ছে, ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দে তিস্তা-করতোয়া অববাহিকায় যে ভয়াবহ বৃষ্টি ও বন্যা হয়েছে, সেটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ঘটনা হয়ে আছে। ওই বছরের ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি একনাগাড়ে চার মাস চলেছিল। ফলে সৃষ্টি হয়েছিল বর্তমান সময়ের যমুনা নদী।
তিস্তার ওই প্লাবনের ফলে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের (বৃহত্তর ঢাকা, ফরিদপুর, পাবনা) অনেক নদ-নদীতে পরিবর্তন ঘটে। হঠাৎ করেই প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণে রংপুর বিভাগের তিস্তা-করতোয়া অববাহিকার ব্যাপক অঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়।
রংপুর শহরের পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ঊনবিংশ শতাব্দীর সরকারি নথিপত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য রয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে রংপুর ছিল অস্বাস্থ্যকর, নিচু জলাশয় আর ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ একটি শহর। ডা. কৃষ্ণধন ঘোষ (ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা অরবিন্দ ঘোষের পিতা) ছিলেন তৎকালীন রংপুর জেলার সিভিল সার্জন। তিনি রংপুর শহরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দূর করার উদ্দেশ্যে ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে নিজ উদ্যোগে সাত মাইল দীর্ঘ একটি খাল খনন করেন। খালটি উত্তরের চিকলি ও কুকরুল বিল এবং শহর থেকে পাঁচ মাইল পশ্চিমে ঘাঘট নদের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এর ফলে ওই বিল দুটির অতিরিক্ত পানি এবং শহরের যাবতীয় তরল বর্জ্য এবং অতিরিক্ত আবদ্ধ পানি নির্গমনে সহায়ক হয়েছিল। প্রায় একই সময়ে রংপুরে কর্মরত কালেক্টর মিস্টার স্ক্রাইন উদ্যোগ গ্রহণ করে শহরে আরেকটি খাল খনন করালেন। প্রথম খালটির নাম ঘোষের খাল এবং দ্বিতীয়টি স্ক্রাইনি খাল নামে পরিচিত। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে এই দুই খালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরবর্তী সময়ে ঘোষের খাল পুনঃ খননের পর সেটি শ্যামাসুন্দরী খাল নামে পরিচিতি পায়। ডিমলার জমিদার এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে রংপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান জানকী বল্লভ সেনের মায়ের নামে খালটির নাম রাখা হয়।
ঘোষের খালটির উত্তর–পূর্ব দিকের অংশটি বর্তমানে কেডি খাল নামে পরিচিত। শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালগুলো চলমান থাকায় রংপুর শহরে জনস্বাস্থ্যের বেশ উন্নতি হয়।
১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন বঙ্গ প্রদেশের যে পঞ্চবার্ষিক জরিপ হয়েছিল, তাতে রংপুর শহরকে সরকারিভাবে সমগ্র বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর শহর হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। পরিসংখ্যানে উল্লেখ রয়েছে, ১৯০৮ সালে পুরো বঙ্গ প্রদেশের শহরগুলোতে প্রতি বর্গমাইলে বার্ষিক মৃত্যুর গড় হার ছিল ২৪ দশমিক ১ জন। আর রংপুর শহরে প্রতি বর্গমাইলে যা ছিল ১৯ দশমিক ৯ জন।
(সূত্র: Eastern Bengal and Assam District Gazetteers, Rangpur, 1911, p.10, 49,150)
নিচু এলাকা হওয়া সত্ত্বেও সঠিক নিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে এই সফলতা এসেছিল। তাহলে খুব সহজেই প্রশ্ন উঠবে, তা কীভাবে নষ্ট হলো?
অন্যদের অশনিসংকেত দিচ্ছে রংপুর
তিস্তা-করতোয়া, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, মাথাভাঙ্গা-ভৈরব-কপোতাক্ষ এবং সুরমা-কুশিয়ারা এই অববাহিকাগুলো অত্যধিক বন্যাপ্রবণ। এর মধ্যে তিস্তা-করতোয়া-আত্রাই অববাহিকার বন্যা ও তজ্জনিত প্লাবন আমাদের মাঝেমধ্যেই ভাবিয়ে তোলে। এই অববাহিকার আলোচ্য জেলাগুলোতে অতীতে এবং বর্তমান সময়ে যে বান-বন্যা ও প্লাবনের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো ছিল প্রধানত বৃষ্টিপাতজনিত এবং মৌসুমি বন্যা। এর মধ্যে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে বন্যা ও প্লাবনের ঘটনাগুলোই ছিল মুখ্য।
রংপুরের ঘটনা আমাদের জন্য অশনিসংকেত। ভবিষ্যতেও প্রকৃতির এমন আচরণের পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকবে। এই দুর্ভোগ হয়তো এতটা পোহাতে হতো না, যদি এই শহরের পানি নির্গমন ব্যবস্থাপনা নিয়ে সঠিক গবেষণা এবং কর্মপরিকল্পনা থাকত। শহরের তরল বর্জ্যনিকাশি ব্যবস্থায় উদাসীনতার কারণে তথা শহরের নর্দমা এবং খালগুলো পানি নিঃসরণে অনুপযোগী হওয়ার ফলে এই মহাদুর্ভোগের শিকার হয়েছেন শহরের ১০ লাখ মানুষ।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুতে রংপুর জেলা ও শহরের প্রশাসক যে কাজগুলো সাফল্যের সঙ্গে করতে পেরেছেন—একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে এসে তথ্য প্রযুক্তিগত ব্যাপক সুবিধা আর অর্থের অঢেল জোগান থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন পারলাম না এই বিপর্যয় মোকাবিলা করতে? অথচ রংপুর শহরে সঠিক কাজটি করার সুযোগ ছিল প্রচুর।
সাত নদী-খাল কাজে এল না
রংপুর শহরে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম প্রবাহ মিলে মোট সাতটি নদী ও খাল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক প্রবাহ বা নদ–নদী হলো ঘাঘট, খোকশাঘাঘট, ইছামতী, বুরাইল ও আলাইকুমারী। কৃত্রিম প্রবাহ দুটি হচ্ছে শ্যামাসুন্দরী ও কেডিখাল। পানি নির্গমনের এত বেশি প্রাকৃতিক ব্যবস্থা বাংলাদেশের অন্য কোনো জেলা শহরে নেই।
হঠাৎ করেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে গিয়ে রংপুর শহরের পানি নির্গমন ব্যবস্থাপনা ষোলো আনা ভেঙে পড়েছে, যা আমরা চেয়ে চেয়ে দেখলাম। দেশের অন্যান্য শহরে হঠাৎ করেই এজাতীয় প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে গেলে একই দুরবস্থার সম্মুখীন হবেন নিজ নিজ পৌর পিতা এবং সেখানকার নাগরিকেরা।
বাংলাদেশে এর কারণ খুঁজতে বেশি দূর যেতে হবে না। বাংলাদেশের প্রতিটি মহানগর, জেলা ও উপজেলা শহরগুলোর মধ্য দিয়ে কিংবা আশপাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কোনো না কোনো নদী বা খাল। শহরের যাবতীয় তরল বর্জ্য ছোট বড় নর্দমা ও খালের মাধ্যমে নদীতে গিয়ে পড়ছে। এই নদ-নদীগুলো আগের চেহারায় এখন আর নেই। চিরবহতা বাংলাদেশের অধিকাংশ নদ-নদীর তলদেশ ভরাট হয়েছে এবং ভরাটের পর্যায়ে রয়েছে। এই অবস্থা সৃষ্টির প্রধান কারণ শতাধিক অভিন্ন নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার, যেটি ঘটে চলেছে দীর্ঘ চার দশক ধরে। ফলে এগুলোর এখন আর ক্ষমতা নেই হঠাৎ করেই বৃষ্টি বা বন্যার অতিরিক্ত পানি ধারণ করার।
রংপুর শহরের নিকাশি ব্যবস্থার যে চিত্র, একই অবস্থা বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি শহরের। এটি এক দিনে ঘটেনি। উন্নয়ন আর নগরায়ণের নামে বিগত প্রায় চার দশকের মধ্যে বাংলাদেশের শত শত শহর–বন্দরে কত হাজার হেক্টর মৃত নদ-নদী, খাল ও জলাভূমি ভরাট করে প্রকৃতিকে ভারসাম্যহীন করে ফেলা হয়েছে, এর সঠিক হিসাব আমাদের জানা নেই। এর পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে নদীর উৎসমুখ চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অপরিকল্পিত শত শত রেগুলেটর, স্লুইসগেট, ক্রস ড্যাম, রাবার ড্যাম ইত্যাদি স্থাপনা করে প্রবহমান নদীকে মেরে ফেলা হয়েছে। নগরায়ণ, শিল্পায়ন তথা উন্নয়নের নামে স্রোতস্বিনী নদ-নদীসহ প্রায় বিলুপ্ত অসংখ্য নদী ভরাট করা হয়েছে। এরূপ অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ড এখনো অব্যাহত রয়েছে। নগরায়ণ ও শিল্পায়নের দোহাই দিয়ে যখন যেভাবে খুশি গড়ে তোলা হচ্ছে অবকাঠামো। এতে করে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে চিরায়ত প্রকৃতি-পরিবেশ এবং প্রতিবেশের জীবনীশক্তি।
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতো স্রোতস্বিনী নদী বা খাল। প্রতিটি শহর বন্দর ঘিরে ছিল নদী, খাল, বিল হাওরসহ উন্মুক্ত জলাশয়। ছিল বুকভরে নিশ্বাস নেওয়ার মতো উন্মুক্ত প্রান্তর। সেই বাতাবরণ এখন আর নেই। তথাকথিত উন্নয়নের লাগামহীন ঘোড়া ছুটে চলেছে অবিরাম গতিতে। আগের চেয়ে পানির ব্যবহার বেড়েছে অনেক গুণ। স্বাভাবিকভাবে শহরের মধ্যে নির্মিত পাকা নর্দমা দিয়ে তরল বর্জ্য প্রবাহের মাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে। হঠাৎ করেই অতিবর্ষণ শুরু হলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই জনজীবন প্রায় স্তব্ধ হয়ে পড়ে। শহরের পানি গড়িয়ে যেতে সময় নেয় কয়েক ঘণ্টা কিংবা দু–তিন দিন।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সব থেকে সুন্দর-পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব শহরের নাম রাজশাহী। এখানে নেই কোনো যানজট, শব্দ বা পরিবেশদূষণের যন্ত্রণা। কিন্তু দেশের অন্যান্য শহরের মতো এখানে রয়েছে প্রচণ্ড রকমের জলাবদ্ধতা। হঠাৎ করেই একটানা ৩০ মিনিটের বৃষ্টিতে এই মহানগরীর অন্তত ১০০টি স্থানে পানি জমে গিয়ে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।
সমাধানের পথ
এই সমস্যা উত্তরণে আমাদের সুপারিশগুলো তুলে ধরছি:
১. বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী ও খালগুলোকে গভীর এবং প্রশস্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রথম চট্টগ্রাম শহরের চাক্তাই খাল; রংপুরের শ্যামাসুন্দরী খাল, কেডিখাল; দিনাজপুরের ঘাগড়া খাল; বগুড়ার করতোয়া নদী; রাজশাহীর বারাহী নদী; পাবনার ইছামতী নদী; টাঙ্গাইলের লৌহজংয়ের মতো নদী-খালের প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম প্রবাহগুলোকে বেছে নিয়ে কাজ শুরু করা জরুরি।
২. আন্তবিভাগীয় সমন্বয়হীনতার কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীর নাব্যতা হারিয়ে গেছে। ভবিষ্যতে নদীসংশ্লিষ্ট যেকোনো প্রকল্প প্রণয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি, মৎস্য, নৌপরিবহন, সড়ক ও জনপদ, বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো এবং নদী বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির চূড়ান্ত মতামত গ্রহণ করতে হবে।
৩. শহরের নর্দমায় পলিথিনসহ কঠিন বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক সংগঠনের উদ্যোগ জরুরি।
৪. রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় প্রভাবশালীরা অপরিকল্পিতভাবে নদীর তীর থেকে বালু উত্তোলন করছে। এর ফলে নদীর মধ্য স্রোত নদীর তীরমুখী হয়ে ভাঙন আরও তীব্রতর হচ্ছে। বালু উত্তোলনে একটি নীতিমালা প্রণয়ন প্রয়োজন। সরকারি নিয়ন্ত্রণে ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শের ভিত্তিতে বালু উত্তোলন করতে হবে।
৫. প্রবহমান নদীর মুখে স্লুইসগেট নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। চলমান নদীতে ক্রস ড্যাম ও রাবার ড্যাম নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।
৬. চলমান নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ না করে লো লিফট পাম্পের সাহায্যে পানি উত্তোলনপূর্বক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
● মাহবুব সিদ্দিকী, লেখক ও গবেষক