দেশে নদীদূষণের কারণে বছরে ক্ষতি হয় ২৮৩ কোটি ডলার

দূষিত কালো পানির ওপর চলছে নৌকা। দেশের নদ–নদীগুলোর দশা এমনই। কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে নদীদূষণের কারণে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বেফাইল ছবি: প্রথম আলো

বুড়িগঙ্গা নদীর ২৫৮টি পয়েন্ট দিয়ে গৃহস্থালি পয়োবর্জ্য ও শিল্পবর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে। তুরাগ নদের ২৬৯টি এবং বালু নদের ১০৪টি ও টঙ্গী খালের ৬২টি পয়েন্ট দিয়ে কঠিনবর্জ্য এবং পয়োবর্জ্য নিঃসরিত হচ্ছে। এ ছাড়া আরও অনেক দূষণ পয়েন্ট রয়েছে।

আজ রোববার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘দূষণে বিপর্যস্ত ঢাকার নদ-নদী: সমস্যা ও সমাধান’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী এসব তথ্য জানান।

কমিশনের সরেজমিন পরিদর্শনের তথ্য থেকে এসব তথ্য উঠে এসেছে উল্লেখ করে মনজুর আহমেদ বলেন, নদীতীরে গড়ে ওঠা অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্যও নদীতে পড়ছে। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে নদীদূষণের মোট আর্থিক বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ ২৮৩ কোটি ডলার। এ পরিস্থিতি নিরসনে কার্যকরী উদ্যোগ না নেওয়া হলে, এই ক্ষতির পরিমাণ আগামী ২০ বছরে ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে। খালগুলো দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে নদ-নদীগুলো জৈব ও রাসায়নিক দূষণে মৃতপ্রায়।

সভায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নদী, পানিদূষণবিষয়ক সব আইন আওয়ামী লীগ সরকারে আমলে পাস হয়েছে। নদীর দখল দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অন্য কোনো সরকার পদক্ষেপ নেয়নি। পুরোনো মতবাদ ছিল, ‘যা নষ্ট তা পানিতে ফেলে দাও’—এ ধারণা থেকে ফিরে আসতে হবে। নদী-নালা দখলরোধে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে নদী রক্ষা কমিটিকে আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। নদী–নালা, খাল–বিল রক্ষা করে দেশকে রক্ষা করতে হবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাকালীন নদী রক্ষা কমিশনের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। মাঠপর্যায়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি হলো স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা। তাঁরা নদীর দূষণ ও দখল রোধ করে নদীর পরিবেশ রক্ষা করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেন। এ বিষয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পরামর্শ ও সক্রিয় উপস্থিতি আশা করব। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আর এক দিনও সময় নষ্ট করতে চাই না। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন তথ্য চাইলে সে তথ্য কেন দেওয়া হয় না, সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

মতবিনিময় সভায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার উপস্থিত ছিলেন। সভায় সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।