হাওরাঞ্চল
খারাপ নয়, ভালো খবরের নাম হোক হাওর
হাওরের পানি আসা ও বের হয়ে যাওয়ার সময়ের হেরফের হলেই আমাদের নাজুক উৎপাদনপ্রক্রিয়া মুখ থুবড়ে পড়তে পারে, চাষিরা নিঃস্ব থেকে আরও নিঃস্ব হয়ে যেতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা লক্ষ করেছেন সাধারণত প্রতি তিন বছরে একবার মার্চ মাসের চৈতালি ঢল আর এপ্রিল মাসের বৈশাখী ঢলে হাওর এলাকার ফসল তলিয়ে যায়। লোকজ্ঞানও সে রকম আভাস দেয়। হাওর এলাকায় সাড়ে ১২ লাখ হেক্টর জমিতে বছরে কেবল একটিই ফসল হয়। কিন্তু পাহাড়ি ঢলের কারণে কোনো বছর সেটা তলিয়ে গেলে সারা দেশের খাদ্যনিরাপত্তার শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যায়। হুমকিতে পড়ে জীবন–জীবিকা ও শিশুদের লেখাপড়া। আফালে আফালে (হাওরের ঢেউ) বাড়তে থাকে বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম, অভ্যন্তরীণ অভিবাসন।
তবে ২০১৭ সালের পর গত চার–পাঁচ বছর হাওরে বড় ধরনের কোনো বালা–মুসিবত নজরে পড়েনি। ‘ঠাডা’য় (বজ্রপাত) মানুষের মৃত্যুর হার বাড়লেও ফসলের তেমন ক্ষয়ক্ষতির আলামত ছিল না। চৈতালি বা বৈশাখী ঢলের আসর ঠেকানোর জন্য হাওরে প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে ফসল রক্ষা বাঁধ দিতে হয়, মেরামত করতে হয় ফেব্রুয়ারির মধ্যেই। মার্চ তথা চৈত্র মাস থেকে আচমকা বানের ফাড়া শুরু, উত্তরের পাহাড়ে আগাম বৃষ্টিবাদল শুরু হলেই পানির ঢল নামে হাওরে। তাই পানি মে মাস পর্যন্ত সামাল দেওয়ার জন্য এই বাঁধ ব্যবস্থাপনা।
একসময় হাওরের সব কৃষিজমি পানির নিচে চলে যাবে এবং স্থায়ীভাবে পুরোটা জলাভূমিতে পরিণত হবে। হাওরের ধান তথা কৃষি বন্ধ হয়ে যাবে। হাওরের শস্যভান্ডরের তকমা মুছে যাবে।
গত পাঁচ বছর যে বাঁধের জোরে হাওরের ফসল ঘরে উঠেছে, সেটা নয়। অনেক জায়গায় ঠিকমতো কাজ হয়নি। বাঁধ বাধা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে, দেরি হয়েছে, ধরপাকড়, মামলা ইত্যাদি সবই চলেছে ধারাবাহিকভাবে। বলতে গেলে আমরা স্রেফ কপালের জোরে পাহাড়ে আগাম বাদল না হওয়ার কারণে বেঁচে গাছি। আমরা জানি হাওরের পানি আসা ও বের হয়ে যাওয়ার সময়ের রকমফের হলেই আমাদের নাজুক উৎপাদনপ্রক্রিয়া মুখ থুবড়ে পড়তে পারে, মাজা ভেঙে চাষিরা নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতম হয়ে যেতে পারে।
এসব কারণে হাওরের বাঁধগুলো যাতে নকশা অনুযায়ী সঠিক মানের এবং সময়মতো তৈরি হয়, সেটা নিশ্চিত করা খুব জরুরি। নির্মাণের সময় নিরপেক্ষ নজরদারির অভাবের অভিযোগ রয়েছে। বাঁধের নির্মাণ ব্যবস্থাপনাকে নজরে রাখার জন্য হাওরের বিভিন্ন জনপদে গণকমিটি গড়ে উঠছে। সুনামগঞ্জের এমনই একটি গণসংগঠন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা সম্প্রতি হাওরের বাঁধগুলোর হাল নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে। দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৭২২টি বাঁধের মধ্যে ১০৮টি বাঁধ তারা পরিদর্শন করে। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ পর্যন্ত (সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের শতভাগ কাজ সম্পন্ন করার কথা) মাত্র ৮ শতাংশ বাঁধে মাটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঘাস লাগানো হয়েছে ৩ শতাংশ বাঁধে।
সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, ৫০ মিটার দূর থেকে বাঁধের মাটি আনার কথা থাকলেও ৩৫ শতাংশ বাঁধে এই নিয়ম মানা হয়নি। নির্মাণাধীন বাঁধে দুরমুজ ও নকশা এবং বিধিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ঢাল বজায় রাখার কাজও সঠিকভাবে হয়নি। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের এই গণকমিটি জরিপের ফল নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব গাফিলতির কারণ জানার চেষ্টা করছিল। অনুসন্ধানে যেসব কারণ তারা জানতে পেরেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ১. প্রকল্প প্রাক্কলন ও পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) গঠনে বিলম্ব ২. অর্থ ছাড়ে বিলম্ব ৩. হাওর থেকে দেরিতে পানি নামা ৪. ড্রেজারের স্বল্পতা ৫. বাঁধের মাটির দুষ্প্রাপ্যতা ৬. প্রকল্প গঠনে অনিয়ম।
‘হাওরে যেভাবে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব আছে। চলনবিল দিয়ে সড়ক নির্মাণের ফলেও একই প্রভাব পড়েছে।’
ওই ছয়টি কারণের পাঁচটিই সর্বকালের ‘সাবেক’ কারণ, অর্থাৎ জানা কথা। ৩ নম্বর কারণটি (হাওর থেকে দেরিতে পানি নামা) অপেক্ষাকৃত নতুন। অন্য কারণগুলো মানুষের মুঠোর মধ্যে। নিয়ত ভালো থাকলে এগুলোর সমাধান নখের ময়লা। কিন্তু হাওরে পানি না সরলে, পানি আটকে থাকলে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে সেই বিষ নামানোর ওঝা মিলবে কোথায়? হাওরের পানি ভৈরববাজারের কাছে মেঘনা দিয়ে চাঁদপুর হয়ে সাগরে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কথিত ‘আবুরা’ বা অল ওয়েদার সড়কের (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের মধ্যে প্রায় ২৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার) কারণে হাওরে পানি আগের মতো গতিতে আর সাগরে যাচ্ছে না। জমে থাকছে। জমে থাকা পানি থেকে পলি নয়, বালু পড়ছে জমিতে। অষ্টগ্রামে বালুময় পতিত জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ার খবর ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। ৮৭৪ কোটি টাকা খরচ করে কথিত ‘দৃষ্টিনন্দন’ অল ওয়েদার সড়ক ক্রমশ স্বাভাবিক পানিপ্রবাহকে বিঘ্নিত করছে। সড়ক নির্মাণের আগে যেখানে বর্ষা মৌসুমে এই ২৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার জায়গা দিয়ে পানি মুক্তভাবে প্রবাহিত হতো। এখন সড়ক করার পর তিনটি বড় সেতুসহ ১৪টি ছোট বড় কালভার্ট ও আরসিসি পুল দিয়ে পানি বেরোতে পারছে, যার মোট দৈর্ঘ্য ১ কিলোমিটারের কম। মানে পানির সনাতন ২৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের রাস্তা এখন কমে মাত্র ৮০০ মিটার।
বছর কয়েক আগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন হিসাব করে বলেছিলেন, এ রকম এক সরু পথে এক বছরের পানি প্রবাহিত হতে ১৮ বছর লাগবে। তাঁর কথা অনুযায়ী, প্রতিবছর সব পানি বের হয়ে যাবে না এবং প্রতিবছর পানি জমতে থাকবে। একসময় হাওরের সব কৃষিজমি পানির নিচে চলে যাবে এবং স্থায়ীভাবে পুরোটা জলাভূমিতে পরিণত হবে। হাওরের ধান তথা কৃষি বন্ধ হয়ে যাবে। হাওরের শস্যভান্ডরের তকমা মুছে যাবে। তিনি আরও বলেছিলেন, যখন প্রতিটি জনপদ এ রকম সড়ক দিয়ে সংযুক্ত করা হবে, তখন হাওর খণ্ডবিখণ্ড আবদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হবে, যার পানি কখনো নেমে যাবে না। বরং প্রতিবছর বেড়ে গিয়ে মারাত্মক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। সৃষ্টি হবে মানবিক বিপর্যয়।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক খান এম আমানত প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘হাওরে যেভাবে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব আছে। চলনবিল দিয়ে সড়ক নির্মাণের ফলেও একই প্রভাব পড়েছে।’
আশার বিষয়, নীতিনির্ধারকেরা বিশেষজ্ঞদের কথায় কান দিতে শুরু করেছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে আর আবুরা নয়, এখন হবে উড়ালসেতু। হাওরের পানির প্রবাহ, জীববৈচিত্র্য ঠিক রেখে গাড়িতে চড়তে হলে উড়ালপথ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তবে ব্যয়বহুল উড়ালপথের খরচ পথ থেকে উঠিয়ে আনার সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ আর্থিকভাবে প্রকল্পটিকে কোনোভাবেই যৌক্তিক বলা যাবে না। বিপুল অর্থ বিনিয়োগের অর্থনৈতিক সুফল কী হবে, সেটাও কেউ জানে না। এ ধরনের অনিশ্চিত প্রকল্পে বিদেশিরা অর্থায়ন করে না। তাই সরকারের রাজস্ব খাত থেকেই ব্যয় করতে হবে।
বলা বাহুল্য আবুরা সড়কের খরচও রাজস্ব খাত থেকেই মেটানো হয়েছে। যেভাবেই হোক হাওরকে রক্ষা করতে হলে সেখানে পানি জমতে দেওয়া ঠিক হবে না।
বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরভিত্তিক গণসংগঠন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারাও বাঁধের কাজে অনিয়ম আর ধীরগতিতে অসন্তুষ্ট। তাঁরা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরাবরই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করে না। ফলে এ নিয়ে লাখ লাখ কৃষক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কে থাকেন। তবে তাঁদের পর্যবেক্ষণে অন্য যে বিষয়টি বড় উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, সেটা হচ্ছে হাওরসংলগ্ন পাটলাই নদের পাড় কেটে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কাটায় নদী ও নদীর পাড়ের (কান্দার) সারিবদ্ধ হিজলগাছগুলো হুমকিতে পড়েছে। শিকড় আলগা হয়ে যাওয়া এসব গাছ আগামী বর্ষায় টিকবে না। ফলে ভাঙন হবে দ্রুত আর অনিবার্য। টাঙ্গুয়ার হাওরপারের মন্দিয়াতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সানজু মিয়া সংবাদকর্মীদের জানিয়েছেন, ‘প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা কান্দার মাটি কেটে বরং ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে হাওরের ফসল রক্ষা স্থায়ী বাঁধকেই। বাঁধে মাটি দেওয়ার জন্য আমরা চাই পরিবেশবান্ধব কাজ। কিন্তু যেভাবে কান্দা কেটে নেওয়া হচ্ছে, তাতে দু-এক বছরের মধ্যেই বাঁধে দেওয়ার মাটি নিতে উঁচু জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর মাটি কাটায় এক্সকাভেটর ব্যবহার করে হাওরের উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যকে আরও ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে।’
বাঁধ নির্মাণে নানা অনিয়মের খবর প্রচারিত হলে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পাথারচাউলি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। কাজের অগ্রগতি দেখে সন্তোষ প্রকাশও করেছিলেন তিনি। তাঁর পরিদর্শনের তিন দিনের মাথায় বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। ফলে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। এ অবস্থায় হাওরের ১৫০ হেক্টর জমির বোরো ধান হুমকিতে পড়েছে।
হাওরে ইজারাদারদের আরেকটি উপদ্রব হচ্ছে মেশিন দিয়ে পানি শুকিয়ে নদী ও খাল–বিলের মাছ নিধন।
উপায় কী হতে পারে?
গত বছর হাকালুকি হাওর এলাকায় বাঁধ নির্মাণের নামে বিভিন্ন প্রজাতির আনুমানিক ২০ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়। বলা বাহুল্য, ২০ হাজার গাছ চোখের নিমেষে কেটে ফেলা সম্ভব না কিন্তু খবর আসে ২০ হাজার গাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর। খবরদারি আর নজরদারিতে পরিকল্পিত গাফিলতি না থাকলে এমনটি হওয়ার কথা নয়। সেই সময় ঢাকাভিত্তিক পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এ ঘটনায় সরকারিভাবে একটা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবিসহ পাঁচ দফা সুপারিশ করেছিল। সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল ১. হাওরের বৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় সব ইজারা বাতিল করা; ২. হাওরের জলাভূমি ও প্রাণবৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনায় হাওরবাসীকে যুক্ত করা ও জনগোষ্ঠীভিত্তিক সংরক্ষণ উদ্যোগ নেওয়া; ৩. হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া ও ইকোসিস্টেম বজায় রাখতে হাওরের পানি, উদ্ভিদ, ধান, ভাসমান এবং ক্ষুদ্র অণুজীবদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং ৪. যেখানে গাছ কাটা হয়েছে সেখানে আবার নতুন করে গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করা ও সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা।
এসব সুপারিশের পাশাপাশি বাঁধ নির্মাণের স্বচ্ছ ও সমাজভিত্তিক উপায় আমাদের অনুসন্ধান করতে হবে। আশির দশকে দেশি–বিদেশি বিভিন্ন একাধিক সংস্থার মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করে বাঁধ নির্মাণের একটা সফল প্রক্রিয়া চালু ছিল। বাঁধ নির্মাণে টাকা ছাড়ের নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সে ব্যবস্থা এখন ইতিহাস। তবে তখন বাঁধ নির্মাণে অবহেলা দুর্নীতির কথা তেমন শোনা যেত না। বাঁধ মেরামত ও তৈরি হয়ে যেত সময়মতো। বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে অনেকেরই এখন সেই যোগ্যতা আছে। সওদাগরি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের করপোরেট দায় মেটাতে পারে সেই উদ্যোগের মাধ্যমে।
ধান গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা আগাম বর্ষার আগেই ধান কাটার উপযোগী করে তোলার জন্য নিরলস গবেষণা করে যাচ্ছেন। হাওরের কৃষকদের প্রয়োজন স্বল্প জীবনকালসম্পন্ন (১২০-১৪০ দিন), ঠান্ডাসহিষ্ণু ও উচ্চফলনশীল ধান, যার ফসল আগাম বন্যার আগেই ঘরে তোলা যায়। হাওরাঞ্চলের জন্য স্বল্প জীবনকালসম্পন্ন, ঠান্ডাসহিষ্ণু ও উচ্চফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ব্রি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও নেপাল থেকে ঠান্ডাসহিষ্ণু জাতের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করেছে। চলমান গবেষণা ইতিমধ্যেই নতুন এক জাতের সন্ধান দিতে পেরেছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে উদ্ভাবিত জাতটির নাম দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু ধান ১০০। হবিগঞ্জের নাগুড়ায় ব্রির জমিতে এই ধানের চারা উদ্ভাবন করা হয়েছে। ‘পরীক্ষণ প্লট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কিশোরগঞ্জের নিকলি হাওর, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা বাকাটিয়ার হাওর, বানিয়াচং উপজেলার মকার হাওর, নবীগঞ্জ উপজেলার গুঙ্গিয়াজুরী হাওর, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর হাওর, শনির হাওর ও মাটিয়ান হাওর।’ এটি ব্রি-২৮ ধানের মতো দেড় শ দিনে ফসল কাটার উপযোগী হবে। অক্টোবরেই এর বীজতলা তৈরি করা যাবে। শীতে কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু পানি নামতে দেরি হলে এই উদ্ভাবন–গবেষণা হাওরের উপকারে লাগবে কি?
লেখক গবেষক: [email protected]