গায়ের রং উজ্জ্বল কমলা, পিঠের রং ধূসর। মুখ, মাথা ও লেজে কালচে ধূসর ভাব। লেজ শরীরের তুলনায় বেশ লম্বা। দেশে পাওয়া যায়, এমন ১০ প্রজাতির বানরের মধ্যে অন্যতম এটি। নাম মুখপোড়া হনুমান। অনেকে লালচে হনুমান বলেও ডাকে। বিপন্ন এই প্রজাতির সবচেয়ে বড় আবাসস্থল টাঙ্গাইলের মধুপুরের প্রাকৃতিক বন। তবে বন উজাড়ের কারণে খাবারের সংকটে পড়েছে এখানকার হনুমানরা।
মধুপুর জাতীয় উদ্যান ও বনের আশপাশের এলাকায় থাকা মুখপোড়া হনুমানের খাদ্যতালিকা ও খাদ্যাভ্যাসের ওপর সম্প্রতি একটি গবেষণা হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, মুখপোড়া হনুমানের প্রধান খাবার গাছের ফুল–পাতা–ফল, গাছের বাকল, কচি বাঁশ ইত্যাদি। ৩ থেকে ১৪টি হনুমান দল বেঁধে গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়, খাবার খায়। এরা চলাফেরা ও খাবারের জন্য পুরোপুরি প্রাকৃতিক বনের ওপর নির্ভরশীল।
কিন্তু মধুপুর বনে গাছের সংখ্যা দিন দিন কমছে। গ্রীষ্ম ও বর্ষার সময় মুখপোড়া হনুমান এই বনের ফুল–পাতা–ফল–বাকল খেয়ে থাকে। পত্রঝরা বনাঞ্চল হওয়ায় শীতে যখন গাছের পাতা ঝরে যায়, তখন প্রাকৃতিক বনে দেখা দেয় খাবারের তীব্র সংকট। তখন বনের আশপাশের এলাকায় হনুমানের দল খাবারের জন্য হানা দেয়। তখন শুরু হয় হনুমান ও মানুষের সংঘাত।
জাতীয় জাদুঘরের প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগের সহকারী কিপার শওকত ইমাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ফিরোজ জামান ও উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন গবেষণাটি করেছেন।
গবেষকেরা মধুপুর বন উজাড় হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। সেগুলো হলো প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে একই ধরনের গাছ, বিদেশি গাছ এবং শুধু ঔষধি গাছ লাগানো, বনের জমিতে বাণিজ্যিকভাবে আনারস, কলা, লেবুসহ ফল ও সবজি চাষ এবং জ্বালানি ও আসবাবপত্রের জন্য নির্বিচার গাছ কাটা।
অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সুন্দরবনসহ দেশের সব বনাঞ্চলে একসময় মুখপোড়া হনুমান ছিল। এমনকি গ্রাম ও শহরেও এদের দেখা পাওয়া যেত। এখন মধুপুরসহ দেশের কয়েকটি জায়গায় মুখপোড়া হনুমান টিকে আছে। কিন্তু সেখানেও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। মধুপুর বনকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো গেলে মুখপোড়া হনুমানসহ সেখানকার অন্যান্য প্রাণী রক্ষা পাবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বাণিজ্যিক চাষের জন্য আগুন লাগিয়ে বন পরিষ্কার করা হয়। এতে হুমকিতে পড়েছে মুখপোড়া হনুমানের আবাস ও খাবারের উৎস। এ জন্য বনের জমিতে দেশীয় প্রজাতির ও ফলদ গাছ লাগানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোল্লা রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা মধুপুর বন, যশোরের কেশবপুর ও ভাওয়াল বনে বানরের খাওয়ার উপযোগী ফলদ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছি।’