কারও শীত কষ্টের, কারও উপভোগের
সকাল আর সন্ধ্যায় হালকা কুয়াশা, দুপুরে কড়া রোদ, কখনো একটু-আধটু হিমেল হাওয়া—এই ছিল পৌষের শুরুর চিত্র। কিন্তু শেষ দিকে এসে বাংলা মাসটি হাজির আপন বৈশিষ্ট্যে। বেলা গড়ালেই বাড়ছে কুয়াশা, পুরো সকালে থাকছে সেই দাপট। শীতল হাওয়ায় দুপুরেও তেজহীন সূর্য। কারও কাছে এটি হয়ে উঠছে উপভোগ্য, আবার কারও কাছে দুর্বিষহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশে শৈত্যপ্রবাহ চলছে। গতকাল রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী তিন-চার দিন তাপমাত্রা প্রায় একই থাকবে।
গতকাল সকালে জমাটি শীত উপেক্ষা করে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারে এসেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী রাইয়ান মাহফুজ। গায়ে গরম জ্যাকেট, গলায় উলের মাফলার। শীতের সবজি ও মাংস কেনা শেষে কিনলেন খেজুরের গুড়। রাইয়ান বলেন, শীত মানেই তো পিঠাপুলির সময়। শীতের সকালে পরিবারের সবাইকে নিয়ে পিঠা খাওয়ার আনন্দই অন্য রকম। বাজারের ব্যাগ নিয়ে গাড়িতে উঠলেন রাইয়ান। গাড়ির দরজায় টোকা দিচ্ছে এক শিশু। গায়ে ময়লা, ছেঁড়া জামা; ঠান্ডায় কালচে মুখ। শীতের কাঁপুনিও শরীরে স্পষ্ট। জানা গেল তার নাম সিয়াম। বয়স ৮-১০ বছর। বাড়ি কিশোরগঞ্জ। বাবা নেই, থাকে মায়ের সঙ্গে মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ি এলাকার বস্তিতে। সিয়ামদের কাছে শীত কষ্টের। প্রথম আলোকে বললও তাই, ‘গরমই ভালা, শীতে কষ্ট লাগে।’
অনেকটা সিয়ামের মতো অবস্থা রহমত আলীর। দিন পাঁচেক আগে এসেছেন গাইবান্ধা থেকে। একটি শার্ট গায়ে দিয়ে রিকশা চালাচ্ছেন তিনি। মিরপুরের একটা গ্যারেজে থাকবেন। রহমত বললেন, ‘রিকশা চালালে শীত লাগে না। তবে রাত কাটানোই কষ্টের। বৃহস্পতিবার রাত কাটিয়েছি আগুনের পাশে বসে থেকে।’
শীতের এমন চিত্র দেখা গেছে কারওয়ান বাজার, কমলাপুর রেলস্টেশন, দোয়েল চত্বর-সংলগ্ন ফুটপাতসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। এসব এলাকায় শীতে অনেককেই গোল হয়ে কাগজ-খড়কুটো পুড়িয়ে উষ্ণতা নিতে দেখা গেছে। আবার পাতলা চাদর মুড়ি দিয়ে ফুটপাতে শুয়েও কাটিয়েছেন অনেকে।
শীতের নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট সীমাহীন হলেও হাসি ফুটেছে দোকানিদের। নিউমার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, গত বছরের মতো এ বছরও শীত তেমন ছিল না। তবে দুই দিন থেকে শীত বাড়ায় শীতের কাপড় বিক্রি বেড়েছে। সেই সঙ্গে দামও কিছুটা বেড়েছে বলে স্বীকার করেছেন তাঁরা।
সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুর রশিদের সঙ্গে। রশিদ বলেন, অন্য জায়গার চেয়ে ক্যাম্পাসে শীত একটু বেশি। পাতলা কম্বলে আর শীত মানছে না। নীলক্ষেতে এসেছিলেন লেপ কিনতে। লেপ বানাতে দেরি হবে। এই ফাঁকে এলিফ্যান্ট রোডে যাচ্ছেন শীতের কাপড় দেখতে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নয়টি আউটলেট আছে ফ্যাশন হাউস ‘ওটু’র। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী জাফর ইকবাল বলেন, গত দুদিন থেকে শীতের কাপড়ের চাহিদা বেড়েছ। তবে গতকাল শুক্রবার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শুধু আমার আউটলেটেই নয়, নয়টি আউটলেটেই গতকাল শীতের কাপড় বেশি বিক্রি হয়েছে।’
শীতের এই ধার কত দিন থাকবে—জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, আগামী তিন-চার দিন এই অবস্থা থাকতে পারে। তবে ঢাকায় যে শীত পড়েছে, এটাকে শৈত্যপ্রবাহ বলা যাবে না। আজও (গতকাল) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। ৬ ডিগ্রির নিচে নামলে তাকে বলা হয় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।