উঁকি দিচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, আসছে শীত

পঞ্চগড়ের রওশনপুর থেকেই দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার। ছবি: ফিরোজ আল সাবার সৌজন্যে
পঞ্চগড়ের রওশনপুর থেকেই দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার। ছবি: ফিরোজ আল সাবার সৌজন্যে

রওশনপুর পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ার একটি ছোট গ্রাম। গ্রামটির পর বাংলাদেশের আর কোনো ভূখণ্ড নেই। রয়েছে ভারতের শিলিগুড়ি। সীমান্তঘেঁষা গ্রাম রওশনপুর অক্টোবর মাস এলেই কেমন যেন বদলে যায়। বাতাসে হিম হিম ভাব। এই হিমেল হাওয়ায় সূর্যের তেজও কমে যায়। আর বিকেল, সন্ধ্যা গড়িয়ে একটু রাতের পালা শুরু হতেই নেমে আসে শীত। তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচেও নেমে আসে। তাই কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমানো ছাড়া উপায় থাকে না রওশনপুরের মানুষের।

এই গ্রামে আগেভাগে শীত নামানোর কারণ হচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। রওশনপুর থেকে হিমালয়ের এই পর্বতশৃঙ্গের দূরত্ব মাত্র ১০০ কিলোমিটার। শত কিলোমিটার দূরে থাকলেও কিন্তু বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ এই পর্বতশৃঙ্গ বসে থাকে না, নিজের সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিতে থাকে। এর ছোঁয়া এসে পড়ে রওশনপুর গ্রামেও। রওশনপুর থেকে এ বছর প্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘার এই রূপের দেখা মেলে মাত্র পাঁচ দিন আগে গত ২৮ অক্টোবর। ভোরবেলা সূর্যের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দিকে থেকে উদয় হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। সূর্যের কোমল আলোর ছোঁয়ায় সোনালি রং ভেসে আসে এই পর্বতশৃঙ্গ। ঘণ্টা চারেক থাকার পর আবার হাওয়ায় মিলিয়ে যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। শ্বেতশুভ্র পর্বতের এই রূপ গত ২৮ অক্টোবর ভোরবেলা ক্যামেরাবন্দী করেন শৌখিন চিত্রশিল্পী ফিরোজ আল সাবা।

মুঠোফোনে প্রথম আলোকে এই চিত্রশিল্পী বলেন, পরিষ্কার নীল আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। ২০১৭ সালে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গিয়েছিল। তখন সকাল থেকে বিকেলের আগ পর্যন্ত পরিষ্কার ফুটে ওঠে পর্বতটি। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে এটি আর দেখা যাচ্ছে না। তবে শীত বেশ ভালোই পড়ছে।

রওশনপুরে আগেভাগে শীত নামিয়ে দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। ছবি: ফিরোজ আল সাবার সৌজন্যে
রওশনপুরে আগেভাগে শীত নামিয়ে দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। ছবি: ফিরোজ আল সাবার সৌজন্যে

প্রায় ১৫ দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও পড়ছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়—এমন তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। নভেম্বর মাসে শীতের এই পরিধি শুধু উত্তরের এই জেলার মধ্যে আবদ্ধ থাকবে না। সারা দেশেই তাপমাত্রা কমে আসবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের নভেম্বর মাসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে। আর প্রতিদিন সূর্যের আলো থাকবে মাত্র সাড়ে ছয় থেকে সাড়ে সাত ঘণ্টা। এর সঙ্গে নদী অববাহিকায় ভোর থেকে মাঝারি মাত্রার কুয়াশা পড়তে পারে।

নভেম্বর মাসে দেশের সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ১৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর সঙ্গে কুয়াশাও পড়ে। আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশে ডিসেম্বর মাস থেকে শীত পড়ে থাকে। তবে অনেক সময় অক্টোবরের শেষ দিক থেকে নভেম্বর মাসে বাতাসের গতি পরিবর্তন করে। এ সময় উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে শীতল বাতাস আসে। আবার দক্ষিণ দিকে থেকে আসা বাতাসে আর্দ্রতা থাকে। দখিনা বাতাসের সঙ্গে উত্তরের বাতাসের মিশ্রণে সাতক্ষীরা, খুলনা, কুষ্টিয়াসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে শীত ও কুয়াশা পড়ে। এখন সেই ধরনের আবহাওয়া রয়েছে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া যেহেতু দেশের উত্তরে, তাই সেখানে আগেভাগে শীত পড়ে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আজ শুক্রবারের পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল বগুড়ায় ৩৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ১৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।