জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫ পরামর্শ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু বাস্তুচ্যুতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ভবিষ্যৎ মানবসংকটের মুখোমুখি হওয়া থেকে তাদের রক্ষায় মানবগতিশীলতার পাঁচটি বিষয়ের ওপর নজর দেওয়া দরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, বেশির ভাগ জলবায়ু স্থানচ্যুতি জাতীয় সীমানার মধ্যে এবং কিছু ভয়ানক পরিস্থিতিতে সীমান্তের ওপারে ঘটে। এ ধরনের পরিস্থিতি যাতে মানবিক সংকটে পরিণত না হয়, সে জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সংহতি প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) সদর দপ্তরে তিন দিনব্যাপী ১১৪তম অধিবেশনে ‘মানবগতিশীলতার ওপর জলবায়ুর প্রভাব: সমাধানের জন্য বৈশ্বিক আহ্বান’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সম্প্রচারিত একটি ভিডিও বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যাঁরা বাস্তুচ্যুত বা আটকে পড়েছেন, তাঁদের মৌলিক পরিষেবা, সামাজিক সুরক্ষা ও জীবিকার বিকল্পগুলোয় প্রবেশাধিকার থাকা দরকার। তাঁদের আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের ওপর বিরূপ প্রভাবগুলোও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতিতে মোকাবিলা করা দরকার।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এটি অনুমান করা হয়েছে যে জলবায়ু পরিবর্তন ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২১ কোটি ৬০ লোককে বাস্তুচ্যুত করতে পারে, এর মধ্যে ৪ কোটি এককভাবে দক্ষিণ এশিয়ার। বাংলাদেশে আমাদের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করে।’
প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ, ঘন ঘন বন্যা ও প্রবল ঘূর্ণিঝড় তাঁদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। এ ধরনের স্থানচ্যুতি আমরা যা ভাবি, তার চেয়ে দ্রুতগতিতে ঘটছে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে এখন মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আগত ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। এই লোকদের মধ্যে কিছু লোক পাচার নেটওয়ার্কের শিকার হয়, যার সঙ্গে সমগ্র অঞ্চলের নিরাপত্তাঝুঁকি রয়েছে। এ ধরনের মিশ্র অভিবাসনপ্রবাহ জলবায়ু গতিশীলতার সমস্যাটিকে আরও বেশি সমস্যাযুক্ত করে তোলে।’
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে মানবগতিশীলতার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আন্তর্জাতিক আলোচ্যসূচিতে উচ্চস্থান দেওয়া উচিত।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিষয়টির কার্যকর সমাধানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে আইওএম এবং অন্য অংশীদারদের সঙ্গে একত্রে কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত বোধ করছি যে অনেক ছোট দ্বীপের উন্নয়নশীল দেশগুলোও এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা সন্তুষ্ট যে কপ-২৮, জিএফএমডি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরাম এটিকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও জলবায়ু–অভিবাসীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ শুরু করেছে। এ বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ু পুনর্বাসন প্রকল্পটি স্থানীয় মাছ ধরা, পর্যটন ও বায়ুশক্তিকেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের চলাফেরায় যে প্রভাব পড়ছে, তা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছেন।
এগুলো হচ্ছে—প্রথমত, আমাদের নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসনের জন্য গ্লোবাল কমপ্যাক্টের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অধিকারভিত্তিক পদ্ধতিতে মানবগতিশীলতার ওপর জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, জলবায়ু–অভিবাসীদের অভিঘাত ও ক্ষতির প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট সমাধান খুঁজে বের করার জন্য জলবায়ু ন্যায্যতার আলোকে পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে।
তৃতীয়ত, অভিবাসনকে জলবায়ু অভিযোজন কৌশল হিসেবে দেখার জন্য স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে প্রস্তুত হতে হবে, যেখানে এটি সর্বোত্তম সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে প্রমাণিত হবে।
চতুর্থত, জলবায়ু–অভিবাসী, বিশেষ করে নারী, শিশু ও অন্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর পুনরুদ্ধারের জন্য বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সুরক্ষামান পর্যালোচনা করতে হবে।
পঞ্চমত, সংকীর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে এটির জন্য একটি গঠনমূলক অবস্থান তৈরিতে মানবগতিশীলতার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিষয়ে উন্নত গবেষণা ডেটা এবং প্রমাণের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করা উচিত।