বৃষ্টি আরও কমবে, কিছুটা উন্নতি হতে পারে বন্যার

আবহাওয়া অধিদপ্তরছবি: অধিদপ্তরের ফেসবুক থেকে নেওয়া

দেশের বন্যা উপদ্রুত এলাকা ও সীমান্তবর্তী ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমে এসেছে। এসব অঞ্চলে আজ শনিবার বৃষ্টির পরিমাণ আরও কমতে পারে। এর ফলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি ধীরগতিতে কমছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় ভারী বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়নি। উজানে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে।

আজ শনিবার উজানে (বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতীয় অঞ্চল) ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকায় মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই ও ধলাই নদসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। একইভাবে কিছুটা উন্নতি হতে পারে ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, ফেনী, হালদা, গোমতী নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিও।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল থেকে বন্যা পরিস্থিতির ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে। আজ শনিবার পানি আরেকটু দ্রুত সরতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সন্ধ্যায় জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ু দেশের ওপর সক্রিয় রয়েছে। এর প্রভাবে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

গতকাল দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদীতে, ১৭৬ মিলিমিটার। তারপর লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ৭৫ মিলিমিটার, নোয়াখালীর হাতিয়ায় ৬৩ মিলিমিটার, বাগেরহাটের মংলায় ৬২ মিলিমিটার, গোপালগঞ্জে ৬০ মিলিমিটার, পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ৫৮ মিলিমিটার, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ৫৫ মিলিমিটার ও সাতক্ষীরায় ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ শনিবার দেশে বৃষ্টিপাত কম হতে পারে। বৃষ্টিপাতের তীব্রতা ও এলাকা কমে আসবে।

উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল ও গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে দেশের ১১ জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বন্যাক্রান্ত জেলাগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ।

যদিও বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের হিসাবে বন্যায় আক্রান্ত জেলাগুলো হলো মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রাম। কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা এখন পর্যন্ত এসব জেলার তথ্য পেয়েছেন। সব এলাকার তথ্য তাঁরা পাচ্ছেন না।

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের হিসাবে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সিলেটের অমলশিদ পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার, শেরপুর–সিলেটে ১০ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জের মারকুলীতে ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু নদের পানি মৌলভীবাজারের মনু রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার এবং মৌলভীবাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে; খোয়াই নদের পানি হবিগঞ্জের বাল্লায় ১৯৯ সেন্টিমিটার ও হবিগঞ্জে ১৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফেনী, হালদা ও গোমতী নদীর পানিও বিপৎসীমার বেশ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে গোমতীর পানি কুমিল্লার দেবীদ্বারে ৫৩ সেন্টিমিটার ও কুমিল্লা পয়েন্টে ১১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে; ফেনী নদীর পানি চট্টগ্রামের রামগড় পয়েন্টে ২০০ সেন্টিমিটার এবং হালদার পানি চট্টগ্রামের নারায়ণহাটে ১১০ সেন্টিমিটার ও পাঁচপুকুরিয়ায় ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় মুহুরি নদীর ফেনীর পরশুরাম পয়েন্টের প্রবাহ তুলে ধরতে পারেনি বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।