পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকায় ও দূষণের দায়ে ঢাকার সাভারের চামড়াশিল্প নগরীর ১৯টি ট্যানারি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে ১৪১ ট্যানারি আছে। এসব ট্যানারি থেকে দৈনিক ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদিত হয়। কিন্তু সক্ষমতা আছে শুধু ২৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার। এ ছাড়া কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থাই নেই।
সাভারে স্থানান্তর করার আগে এসব ট্যানারি ছিল ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায়। সেখানে ট্যানারিগুলো দিনে প্রায় ২১ হাজার ৬০০ ঘনমিটার তরল বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলত। এ ছাড়া পশুর চামড়ার উচ্ছিষ্ট বেড়িবাঁধের পাশে, খালে, জলাধারে ও রাস্তার পাশে ফেলা হতো। এতে ব্যাপক দূষণের কবলে পড়ে বুড়িগঙ্গা। এই সমস্যার সমাধানে শিল্প মন্ত্রণালয় ২০০৩ সালে চামড়াশিল্প নগর প্রকল্প হাতে নেয়। ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকার এই প্রকল্পের অধীনে সাভারের হেমায়েতপুরে ১৯৯ একর জমি অধিগ্রহণ করে ১৫৪টি ট্যানারিকে প্লট দেওয়া হয়। তবে সেখানে যথাযথ মান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
দফায় দফায় সময় বেঁধে দেওয়ার পরও সিইটিপি প্রস্তুত নয়—এমন যুক্তিতে মালিকেরা ট্যানারি সাভার শিল্পনগরে নিতে চাইছিলেন না। ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল সেবা-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ট্যানারিগুলোকে হাজারীবাগ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। কিন্তু সাভারে স্থানান্তরের পরে ট্যানারির বর্জ্যে দূষণের কবলে পড়ে ধলেশ্বরী ও বংশী নদী।
দূষণের দায়ে গত বছরের আগস্টে শিল্পনগরী আপাতত বন্ধ রাখার সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। এরপর দূষণ বন্ধে একাধিকবার ট্যানারি বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করে কমিটি। কিন্তু এতেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে গত সেপ্টেম্বরে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ট্যানারি কারখানাগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হবে। একটি ভাগে থাকবে যেসব প্রতিষ্ঠান নিজেরা বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করেছে। আরেকটি ভাগ হবে, যেসব প্রতিষ্ঠান কখনো পরিবেশগত ছাড়পত্রের আবেদন করেনি, জোড়াতালি দিয়ে চলছে এবং যাদের কমপ্লায়েন্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর অন্য ট্যানারিগুলো থাকবে তৃতীয় ভাগে।
সংসদীয় কমিটির সূত্র জানায়, যেসব ট্যানারি বন্ধ হবে, সেগুলো হলো নিশাত ট্যানারি, ইব্রাহিম ট্যানারি, সিটি লেদার, সবুজ করপোরেশন, এমএ লেদার, মেট্রো ট্যানারি, মুন ট্যানারি, লিয়েন এন্টারপ্রাইজ, ইন্টারন্যাশনাল ট্যানারি, মমতাজ ট্যানারি, জিন্দাবাদ ট্যানারি, গোল্ডেন লেদার, জামান ট্যানারি, সাহী ট্যানারি, ফালু লেদার করপোরেশন, হাইটেক লেদার, ইসমাইল লেদার, এস অ্যান্ড এস ট্যানারি এবং জহির ট্যানারি।
বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, যে ১৯টি ট্যানারি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে, এসব ট্যানারি কখনোই পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি। এসব ট্যানারির কমপ্লায়েন্ট হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা দেখছে না কমিটি। তাই বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সাবের হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, এ ছাড়া ১৯টি ট্যানারি আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কমপ্লায়েন্ট হওয়ার শর্ত পূরণ করায় সাময়িক ছাড়পত্র দেওয়া হবে। আরও ১০৩টি ট্যানারি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা কতটা মেনে চলছে, সে বিষয়ে আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এরপর এসব ট্যানারির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এ ছাড়া প্রতিদিন ২০ হাজার ঘনমিটারের বেশি বর্জ্য পরিশোধন না করার জন্য বলেছে কমিটি।
সংসদীয় কমিটির ট্যানারি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানেন না। সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী পাওয়ার পর এ নিয়ে কর্মপন্থা বা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সাভারে স্থানান্তর করার আগে এসব ট্যানারি ছিল ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায়। সেখানে ট্যানারিগুলো দিনে প্রায় ২১ হাজার ৬০০ ঘনমিটার তরল বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলত। এ ছাড়া পশুর চামড়ার উচ্ছিষ্ট বেড়িবাঁধের পাশে, খালে, জলাধারে ও রাস্তার পাশে ফেলা হতো। এতে ব্যাপক দূষণের কবলে পড়ে বুড়িগঙ্গা। এই সমস্যার সমাধানে শিল্প মন্ত্রণালয় ২০০৩ সালে চামড়াশিল্প নগর প্রকল্প হাতে নেয়। ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকার এই প্রকল্পের অধীনে সাভারের হেমায়েতপুরে ১৯৯ একর জমি অধিগ্রহণ করে ১৫৪টি ট্যানারিকে প্লট দেওয়া হয়। তবে সেখানে যথাযথ মান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
দফায় দফায় সময় বেঁধে দেওয়ার পরও সিইটিপি প্রস্তুত নয়—এমন যুক্তিতে মালিকেরা ট্যানারি সাভার শিল্পনগরে নিতে চাইছিলেন না। ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল সেবা-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ট্যানারিগুলোকে হাজারীবাগ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। কিন্তু সাভারে স্থানান্তরের পরে ট্যানারির বর্জ্যে দূষণের কবলে পড়ে ধলেশ্বরী নদী।