ভোলায় একটি ‘নাগলিঙ্গম’গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে। বৃক্ষপ্রেমী কবি আল মনির বছর তিনেক আগে গাছটি প্রথম দেখেন জাইল্লাবাড়ির ঘাট এলাকায়। সেটি ভোলা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর চরনোবাদ গ্রামের শেষ প্রান্ত। বাড়িটি খুব চেনা। এলাকার বিশিষ্টজন মো. লোকমান মিয়ার বাগানবাড়ি। এ বাড়িতে বর্তমানে র্যাব-৮-এর ভোলা ক্যাম্প। বাগানে অনেক গাছ। লোকমান মিয়া নিজ হাতেই বেশির ভাগ লাগিয়েছেন। যদিও তিনি বেঁচে নেই।
আল মনিরকে নিয়ে জুন মাসের প্রথম দিকে গাছটির কাছে পৌঁছালাম। তখন দেখি, নানা রকম বনজ লতা গাছটিকে জাপটে ধরেছে। ওই লতার মধ্যে গাছের গোড়া থেকে মাথা অবধি ফুল আর ফুল। গাছের কাছে যাওয়ার আগেই ফুলের মনমাতানো সুবাস নাকে আসে। সবুজ লতার ফাঁকে ফাঁকে লাল–গোলাপি ফুল আর কলি।
দেখা যায়, গাছের নিচে ছড়িয়ে আছে অনেক ফুলের পাপড়ি ও রেণু। কবি আল মনির জাপটে ধরা লতাগুলো দা দিয়ে কেটে দিলেন।
বাগানবাড়ির পাহারায় থাকা এক নারী জানান, এ গাছ নজির মিয়ার হাতে লাগানো। তাঁরা গাছের নাম জানেন না। প্রতিবছর দীর্ঘ সময় ধরে গাছটিতে ফুল ধরে, গন্ধ বিলায়, দু-একটি ফলও ধরে; কিন্তু কখনো ফল মাটিতে পড়তে দেখেননি।
আমরা ছবি তুললাম। ফুলগুলো লতার নিচে ঢেকে থাকায় আর আলো কমে আসায় ওই দিন ভালো ছবি পেলাম না।
জুলাই মাসের শেষ দিকে গাছটি আবার দেখে এলাম। জাপটে ধরা লতাগুলো শুকিয়ে গেছে। এখন ফুলগুলো স্পষ্ট বোঝা যায়। দেখা যায়, ৫০-৫৫ হাত লম্বা একটি গাছ। গাছের মাথায় ছড়ানো ডালপালায় লম্বাটে সবুজ পাতাগুলো গুচ্ছ আকারের। পাতাগুলোর আয়তন ২৮ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার। সাধারণত অন্যান্য প্রজাতির গাছের শাখা বা পাতার পাশ থেকে ফুল-ফল জন্মায়; কিন্তু এ গাছে লটকন কিংবা যজ্ঞডুমুরের মতো গাছের মূল কাণ্ড থেকে সরাসরি ফুল ও কলি জন্মেছে। ফুলের পাপড়ির রং লালচে গোলাপি। কেন্দ্র বা ভেতরটা হালকা গোলাপি। ফুলের আকৃতি অনেকটা ফণা তোলা সাপের মতো। গোলাকার ফুলের দিকে তাকালে মনে হয়, ফলবতী কোনো গাছ এই নাগলিঙ্গম।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সবুজ পাতার বৃহদাকৃতির গাছ নাগলিঙ্গমের আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল। এর ইংরেজি নাম Cannonball Tree আর বৈজ্ঞানিক নাম Couroupita guianensis।
ঢাকায় জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, কার্জন হল, বলধা গার্ডেনসহ কিছু স্থানে নাগলিঙ্গমগাছ আছে।
ভোলা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ভোলায় নাগলিঙ্গমগাছ আছে কি না, তাঁর জানা ছিল না। এটি ন্যূনতম বিপদগ্রস্তের তালিকাভুক্ত একটি উদ্ভিদ।
তপন কুমার দের লেখা বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় গাছ-গাছড়া বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, নাগলিঙ্গমের ভেষজ গুণও অনন্য। ফুল, পাতা ও বাকলের নির্যাস থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি হয়। অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এর নির্যাস। এই গাছ থেকে তৈরি ওষুধ পেটের পীড়া দূর করে। পাতার রস ত্বকের নানা সমস্যায় কাজ দেয়। ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে নাগলিঙ্গমের পাতার রস ব্যবহৃত হয়। সনাতন ধর্মের মানুষ শিবপূজায় নাগলিঙ্গম ফুল ব্যবহার করেন।
ভোলা উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মো. জহিরুল হকের মতে, গাছটি মূলত পাহাড়ি অঞ্চলের। ভোলার মাটি পরীক্ষা করে যদি এ গাছের বনায়ন সম্ভব হয়, তাহলে ভবিষ্যতে চারা তৈরি করে নাগলিঙ্গম বিস্তার করা যেতে পারে।