জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে বাকুতে কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ২৯ (কপ২৯) সম্মেলনের শেষ দিনেও মতৈক্য হয়নি, চলছে দর–কষাকষি। তাই জাতিসংঘের বার্ষিক এই জলবায়ু সম্মেলনের সময় আরও এক দিন বেড়েছে। তবে আজ শনিবারের মধ্যেও সম্মেলনে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আসবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্মেলনকেন্দ্রে তুলে ধরা হলো ফেনী-নোয়াখালীর বন্যাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চলতি বছর বাংলাদেশে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির চিত্র।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, সম্মেলনের শেষ দিনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তায় বছরে ২৫০ বিলিয়ন (২৫ হাজার কোটি) ডলার দিতে রাজি হয় উন্নত দেশগুলো। তবে খসড়া প্রস্তাবে এ পরিমাণ বরাদ্দের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গেই এর প্রতিবাদ জানায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো। এতে করে সম্মেলন স্থানীয় সময় শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা বেড়ে আজ গড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ২৫০ বিলিয়ন ডলারের তহবিলকে অপ্রতুল উল্লেখ করে তারা আরও বেশি বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে। দেশগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি দূষণ ছড়াচ্ছে উন্নত দেশগুলো। কিন্তু ক্ষতিপূরণ হিসেবে তারা যে পরিমাণ বরাদ্দ দিতে চাইছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এদিকে উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে যুক্তি দিয়ে বলা হচ্ছে, এর চেয়েও বেশি বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি রাজনৈতিকভাবে বাস্তবসম্মত নয়।
ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে দেশগুলোর মধ্যে দর–কষাকষি হয়েছে। এরপর সম্মেলনের শেষ দিন খসড়া প্রস্তাবে এবারের সম্মেলনের আয়োজক আজারবাইজানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বছরে ২৫০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে উন্নত দেশগুলো। খসড়া প্রস্তাবে ২০৩৫ সালের মধ্যে বরাদ্দ বাড়িয়ে বছরের ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
প্রস্তাবে ২৫০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের বিষয়টি দেখে সবার আগে প্রতিবাদ জানায় আফ্রিকান গ্রুপ অব নেগোশিয়েটর। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে কাজ করা আফ্রিকার দেশগুলোর এই সংগঠনের চেয়ারম্যান আলী মোহাম্মদ বলেন, ‘এই বরাদ্দ অপ্রতুল ও একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এই পরিমাণ বরাদ্দে আফ্রিকাসহ বিশ্বজুড়ে অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে না, যা অগ্রহণযোগ্য। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিপদের মুখে ঠেলে দেবে।’
তুলে ধরা হলো বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনে গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশের ২০টি নাগরিক সংগঠনের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে শুরু করে ছয়বারের বন্যা আর ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন বেসরকারি সংস্থা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) নির্বাহী পরিচালক মনজুরুল হান্নান খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।
মনজুরুল হান্নান খান বলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘ উপকূলে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ বাস করে। উপকূলের অধিবাসীরা প্রতিবছর লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা ধরনের দুর্যোগের মুখে পড়ছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের পর এ বছর স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বন্যা আঘাত হানে ফেনী-নোয়াখালীতে। এ বছর ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে দুই কোটি উপকূলবাসী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হতে পারে।