শেষ হলো বৃক্ষমেলা, ১৬ কোটি টাকার গাছ বিক্রি
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পুরোনো বাণিজ্য মেলা মাঠে বিচিত্র ধরনের তরুলতার বিপুল সমারোহ নিয়ে শুরু হওয়া বৃক্ষমেলা আজ শনিবার শেষ হলো। এবার ১৬ কোটি টাকার বেশি গাছ বিক্রি হয়েছে মেলায়। বিক্রি নিয়ে নার্সারিমালিকেরা বেশ সন্তুষ্ট।
প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ৫ জুন থেকে জাতীয় বৃক্ষমেলা শুরু হয়েছিল বন বিভাগের আয়োজনে। জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযানের অন্যতম আয়োজন এই মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার মেলার স্লোগান ছিল ‘বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ, সমৃদ্ধ করি বাংলাদেশ’। মেলায় সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টল ছিল ১১৮টি, এর মধ্য ৭৫টি ছিল বেসরকারি নার্সারির স্টল।
একে তো ছুটির দিন, তার ওপর আবহাওয়া ভালো থাকায় শেষ দিনের সকাল থেকেই মেলায় লোকসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকেলে থেকে প্রায় উপচে পড়া ভিড়।
প্রবেশপথের সামনের খোলা জায়গা এবং সড়কের পাশ দিয়ে চারা নেওয়ার জন্য পিকআপ, ছোট ট্রাক, রিকশা ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনের সারি পড়ে যায়।
আজ সমাপনী দিনের বিকেলে মেলার তথ্যকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী বনসংরক্ষক ব্রজগোপাল রাজবংশী প্রথম আলোকে জানালেন, সমাপনী দিনের বিক্রির হিসাব মেলা ভাঙার পরে পাওয়া যাবে। সর্বশেষ আগের দিনের হিসাব অনুসারে ৩০ লাখ ৫০ হাজার চারা বিক্রি হয়েছে। টাকার অঙ্কে ১৬ কোটির বেশি।
এবার মেলায় সর্বোচ্চ দাম ৪ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে একটি ‘চায়না বট’–এর বনসাই। বন কর্মকর্তা ব্রজগোপাল রাজবংশী জানালেন তথ্যকেন্দ্রে পাওয়া তথ্য অনুসারে ৩৫ বছর বয়সের এই বনসাইটি বিক্রি হয়েছে আশুলিয়া গার্ডেন সেন্টারের স্টল থেকে। এক দিনের সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছে গত ২৫ জুন। সেদিন বিক্রি হয়েছে ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার ১৩১ টাকার ১ লাখ ২১ হাজার ৬৯৩টি গাছ। তবে আজ যত লোকসমাগম হচ্ছে, তাতে শেষ দিনেই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হবে বলে তাঁদের ধারণা।
জনসাধারণের মধ্যে বৃক্ষরোপণে আগ্রহ সৃষ্টি ও গাছের চারাসহ প্রয়োজনীয় কৃষি সরঞ্জাম সহজলভ্য করে তোলার জন্য বন বিভাগের আয়োজনে রাজধানীতে প্রথম বৃক্ষমেলা শুরু হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। প্রথম মেলাতেই ব্যাপক জনসমাগম হওয়ায় পরের বছর থেকে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে বৃক্ষমেলার আয়োজন শুরু হয়। জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে দেশের প্রতিটি বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে এমনকি অনেক উপজেলা পর্যায়েও সরকারি ব্যবস্থাপনায় বৃক্ষমেলা আয়োজিত হচ্ছে।
ছিল গাছ চেনা প্রতিযোগিতা
এবার রাজধানীতে বৃক্ষমেলায় নতুন সংযোজন হয়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গাছ চেনার প্রতিযোগিতা। বন অধিদপ্তর থেকে ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে শিক্ষার্থীদের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ১০ জুলাই প্রতিযোগিতায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। তাদের জন্য ছিল দুপুরের খাবার ও পুরস্কারের ব্যবস্থা। তথ্যকেন্দ্রের বন কর্মকর্তা জানালেন শিক্ষার্থীরা যে গভীর আনন্দের সঙ্গে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে, তাতে তারা অভিভূত। আগামী বছর থেকে মেলায় প্রতি শুক্রবারে গাছ চেনা প্রতিযোগিতা করা হবে এবং পুরস্কারের পাশাপাশি তাদের জন্য গাছের চারা উপহার দেওয়ারও ব্যবস্থা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
মেলার বিক্রি নিয়ে নার্সারিমালিকেরা বেশ সন্তুষ্ট। সাধারণ মেলার মেয়াদ থাকে এক মাস। এবার মাঝখানে পবিত্র ঈদুল আজহা থাকায় সময় বাড়িয়ে ৩৯ দিন করা হয়েছিল। তবে শেষ দিকে এসে কয়েক দিন অতিবৃষ্টি ও শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা আন্দোলনে কারণে লোকসমাগম কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে বলে মন্তব্য করলেন গ্রিন স্পেস নার্সারির ব্যবস্থাপক মিনহাজুল ফেরদৌস। তিনি জানালেন সাধারণত ছাদে লাগানোর উপযোগী ফলগাছ ও ঘরের শোভাবর্ধন করে এমন গাছ এই মেলায় বেশি বিক্রি হয়। এবার ফলের মধ্য আমগাছ বিক্রি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
কথা হলো পটুয়াখালী নার্সারির মইনুল ইসলাম, জান্নাত নার্সারির খন্দকার রাকিব, অমনি গ্রিনের কুদরত আলী, হোসেন নার্সারির নূর হোসেনসহ অনেকে সঙ্গে। তাঁরা জানালেন মেলায় যথেষ্ট লোকসমাগম হয়েছে। গাছের দামের খুব বেশি তারতম্য হয় না, মেলায় অনেক রকম গাছ ও সার, বীজ, কৃষি উপকরণ একসঙ্গে পাওয়া যায় বলে লোকজন এখানে কেনাকাটা করতেই আসেন। ফলে বিক্রি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট।
শেষ দিনের মেলায় দরদাম একটু কম হবে, এমন ধারণা করে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন মিরপুরের ১৪ নম্বরের আইডিয়াল স্কুলের গ্রন্থগারিক পারভিন আক্তার। ঝাঁকাভর্তি আম, কাঁঠাল, করমচা, জলপাইয়ের চারা মাথায় নিয়ে তাঁকে অনুসরণ করছিলেন মিন্তি। তিনি কুমিল্লায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে রোপণের জন্য এসব ফলের চারা কিনে ঝাঁকা ভর্তি করাচ্ছিলেন। জানালেন প্রতিবছরই বৃক্ষমেলা থেকে নানা রকম গাছের চারা কেনেন। গ্রামের বাড়িটিকে তিনি বাগানবাড়ি করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। চারা গাছ বড় করে তোলার একটা আলাদা আনন্দ আছে বললেন তিনি। এমন আনন্দ পেতেই বৃক্ষানুরাগীরা আসছেন বৃক্ষমেলায় গাছের চারা কিনতে। তাঁদের এই আনন্দ দেশের প্রকৃতিকে সবুজ করে তোলার ক্ষত্রেও রাখছে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা।