আলংকারিক দুই উদ্ভিদের কথা

ময়মনসিংহে লেখকের বাসার টবে ফুলসহ অ্যাগ্লোনেমাছবি: লেখক

অ্যারেসি বা কচু গোত্র একবীজপত্রী উদ্ভিদের একটি গোত্র, যেখানে ফুলগুলো প্যাডিক্স নামে একধরনের পুষ্পমঞ্জরিতে জন্মায়। এ পুষ্পবিন্যাসে মঞ্জরিটি সাধারণত একটি পাতার মতো ব্রাক্ট দিয়ে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে আবৃত থাকে। ইংরেজিতে এ গোত্র অ্যারাম নামেও পরিচিত। এ ছাড়া এই গোত্রের সদস্যদের অ্যারোয়েড নামেও পরিচিতি রয়েছে। এ গোত্রে প্রায় ১১৫টি গণ ও ৩ হাজার ৭৫০টি প্রজাতি রয়েছে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এ গোত্রের উদ্ভিদ সবচেয়ে বৈচিত্র্যময়। কচু এই গোত্রের একটি সদস্য। বিভিন্ন ধরনের কচু হয়। কিছু খাওয়া যায় আর কিছু বিষাক্ত। কচু গোত্রের বেশ কিছু সদস্য তাদের বৈচিত্র্যময় পাতা আর পুষ্পমঞ্জরির জন্য আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে জনপ্রিয়।

এ ধরনের দুটি উদ্ভিদের পরিচিতি তুলে ধরা হলো।

ব্লাশিং ফিলোডেনড্রন

উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম Philodendron erubescens, এটি Araceae বা কচু পরিবারের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি ইংরেজিতে ব্লাশিং ফিলোডেনড্রন বা লাল পাতার ফিলোডেনড্রন নামে পরিচিত। বাগানে বা টবে একে বাহারি উদ্ভিদ হিসেবে লাগানো হয়।

উদ্ভিদটি উচ্চতায় ৩ থেকে ৬ মিটার হতে পারে। এর পাতা হৃৎপিণ্ড আকৃতির। দৈর্ঘ্যে ৪০ সেমি বা ১৬ ইঞ্চি পর্যন্ত। ফুল গভীর লাল। ফুল ফোটে গ্রীষ্ম ও শরৎকালে। ফিলো মানে হচ্ছে ভালোবাসতে হয় আর ডেনড্রন মানে হচ্ছে উদ্ভিদ, erubescens মানে ব্লাশিং, যার বাংলা হচ্ছে রক্তিম। এদের চওড়া, চকচকে সবুজ পাতা রয়েছে, যার নিচের পৃষ্ঠে রয়েছে লালচে-তামাটে আভা। নতুন পাতা এবং কাণ্ডও গাঢ় লাল রঙের হয়। এ জন্যই গাছটির নাম ব্লাশিং ফিলোডেনড্রন। লাল রঙের কাণ্ড এই বিদেশি উদ্ভিদের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এ উদ্ভিদ আরোহীও হতে পারে। উদ্ভিদটির আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা, কলম্বিয়া।

ইনডোর উদ্ভিদ হিসেবেও এটি ভালো। তবে মানুষ ও প্রাণীদের জন্য বিষাক্ত। তাই এ উদ্ভিদকে পোষা প্রাণী ও ছোট বাচ্চাদের থেকে দূরে রাখা উচিত। এটি মুখ ও নাকের মিউকাস টিস্যুতে জ্বালাতন করতে পারে। বাগানে লাগালে গাছ অনেক বড় হয়, কিন্তু টবে তেমন বড় হয় না। যেখানে সূর্যের আলো কম পড়ে, সেখানে এটি ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়।

নেত্রকোনা সরকারি কলেজের বাগানে ব্লাশিং ফিলোডেনড্রন
ছবি: লেখক

হাউসপ্ল্যান্ট অ্যাগ্লোনেমা

অ্যাগ্লোনেমার পাতা রঙিন, আকর্ষণীয় গড়নের। আধুনিক বসার ঘর বা অফিস, আবছা বেডরুম বা আরামদায়ক অধ্যয়নের ঘরে এই উদ্ভিদ স্থাপনের জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত। আর্দ্র ও শুষ্ক উভয় অবস্থায় এরা সহনশীল। অ্যাগ্লোনেমার আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। অ্যাগ্লোনেমার ভ্যারাইটিগুলোকে সাধারণত চায়নিজ গ্রিন বলা হয়। এদের ২০টির বেশি প্রজাতি ও অগণিত জাত রয়েছে।

অ্যাগ্লোনেমা চিরহরিৎ বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এই উদ্ভিদ সহজে তবে ধীরগতিতে বৃদ্ধি পায়। প্রাণবন্ত রঙের জন্য হাউসপ্ল্যান্ট হিসেবে আমাদের দেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

  • চয়ন বিকাশ ভদ্র, অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান প্রকৃতিবিষয়ক লেখক