ফুলেই প্রথম ভালোবাসা

ফার্স্ট লাভ নামের এই ফুলের কোনো ঘ্রাণ নেই। খুলনার ডালিয়া নার্সারি থেকে তোলা
ছবি: লেখক

ফুলের নাম ফার্স্ট লাভ—মানে প্রথম প্রেম। লাইলাক, সূর্যমুখী, প্রিমরোজ, ক্যামেলিয়া, পিওনি, কারনেশন, জিপসোফিলা, অর্কিড, ব্লিডিং হার্ট প্রভৃতি ফুলকে ধরা হয় ভালোবাসা প্রকাশের প্রতীক হিসেবে। পাশ্চাত্যে প্রথম ভালোবাসা প্রকাশের প্রতীক হিসেবে থোকা ধরা বেগুনি রঙের লাইলাক ফুলগুলোর চেয়ে আর কোনো ভালো উপহার নাকি হয় না।

কিন্তু এই ফুলের নাম ফার্স্ট লাভ কেন যে হলো কে জানে। কেউ কাউকে কখনো এই ফুল দিয়ে ভালোবাসার কথা বলে না। তবু ফুলের নাম ফার্স্ট লাভ। তবে টাঙ্গাইলের করটিয়ায় সরকারি সা’দত কলেজের ছোট্ট বাগিচায় দুটো ধিঙ্গি গাছে এ বছরের জানুয়ারিতে থোকা ধরে ফুটে থাকা ফুলগুলোকে যখন দেখি, তখন এই ফুল নিয়ে মনের মধ্যে একটা আগ্রহ তৈরি হয়। সে ফুলগুলোর রং ছিল লাল। সে জন্য এই ফুলের আরেক নাম রেড পেন্ডা।

এরপর আরও অনেক জায়গায় দেখা হয় এই ফুলের সঙ্গে। কিন্তু সবই দেখি দেশের বিভিন্ন নার্সারি ও বৃক্ষমেলায়। ফুলের চেয়ে নার্সারির লোকেরা এর নাম দিয়েই যেন ক্রেতাদের বেশি আকৃষ্ট করেন। এই ফুলের গাছ রয়েছে ঢাকায় বোটানিক্যাল গার্ডেনের নার্সারিতেও।

খুলনার ডালিয়া নার্সারির আবু মাসুদ ও সাভারের ডিসি নার্সারির বিপ্লব—দুজনই বললেন এই গাছ দুই-তিন বছর হলো এ দেশে এসেছে ভারত থেকে। কিন্তু দিব্যি মানিয়ে গেছে আমাদের জল–হাওয়া ও মাটিতে। সা’দত কলেজের বাগানের গাছ দুটোকে বেশ বয়স্ক মনে হলো; ৯-১০ ফুট লম্বা।

তার মানে দু–এক বছর নয়, এ দেশে গাছটা এসেছে আরও কয়েক বছর আগে। ফুলের বৈচিত্র্য থাকলেও খুব আকর্ষণীয় না হওয়ায় হয়তো ফুলপ্রেমিকদের কাছে ততটা সমাদর পায়নি ফার্স্ট লাভ। সা’দত কলেজের গাছটাতে লাল ফুলের দেখা পেলেও নার্সারিগুলোতে পেয়েছি সোনালি হলুদ ফুলের দেখা। এই রঙের ফুলগুলো দেখতে লালের চেয়ে সুন্দর—পাতার সঙ্গে রঙের দারুণ মিল।

ফুলের ছোট্ট চাকতি বা বাটির মতো একটি অঙ্গ থেকে পুরুষ কেশরগুলো সূর্যের রশ্মির মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, ডালের আগায় থোকায় একসঙ্গে কয়েকটা ফুল ফোটে। ফুলের কোনো ঘ্রাণ নেই, ফুলটি ফোটে গ্রীষ্ম থেকে শরৎ পর্যন্ত। নার্সারির লোকেরা বললেন, শীত ছাড়া বছরের প্রায় সব সময়ই ফুল ফোটে। মধুপায়ী অনেক পোকামাকড় ফুলের মধু খেতে আসে ও পরাগায়ন ঘটায়।

বীজ থেকে গাছ হয়, বীজের গাছে দুই থেকে তিন বছর পর ফুল ফোটে। কিন্তু ডালে গুটি কলম করে চারা তৈরি করে লাগালে পরের বছর থেকেই ফুল ফোটে। পাতাগুলো দেখতে কিছুটা গোলাপজামের পাতার মতো হলেও আকারে ছোট, চকচকে সবুজ, ঘন, পাতার আগা সুচালো ও কিনারা মসৃণ।

ফুল না থাকলেও শুধু ঘন পত্রপল্লবে ঠাসা গাছও দেখতে সুন্দর লাগে, বাগানে লাগানো যায়। টবেও দু-তিন বছর রাখা যায়, তেমন যত্নের দরকার হয় না। বুনো পরিবেশে গাছ ৪৯ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এ গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Xanthostemon chrysanthus ও পরিবার মির্টেসি। তার মানে এই গাছ জাম ও গোলাপজামের সহোদর। ফার্স্ট লাভ এসেছে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড থেকে।

মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ প্রকৃতিবিষয়ক লেখক