প্রচণ্ড গরম দেশজুড়ে, ৩ দিনের সতর্কতা
আগামী তিন দিন তাপমাত্রা বাড়তে পারে। পাশাপাশি জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিও বাড়তে পারে।
রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ২ ডিগ্রি।
মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহের এলাকা বাড়তে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
কেউ জ্ঞান হারালে শরীরে ঢালতে হবে ঠান্ডা পানি।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সুবদিয়া এলাকার একটি চাতালে ভুট্টা শুকানোর কাজ করছিলেন তিনজন। গতকাল শুক্রবার দুপুরের তীব্র রোদের মধ্যেই তাঁরা মাথায় গামছা বেঁধে এ কাজ করছিলেন। ভুট্টার মালিক রাজু মিয়া বলেন, ‘কদ্দিন ধইরে য্যারাম করে গরম বাড়চে, তাতে মুনিষ পাওয়াই যাচ্চে না। ভুট্টোগুনু ঘরে তুলার জন্নি অনেক অনুরোদ কইরে দুইজনকে ডাইকে আনিচি।’
প্রচণ্ড গরম সারা দেশে। এর মধ্যেই শ্রমজীবী মানুষকে কাজ করতে হচ্ছে মাঠে–ঘাটে। তাঁদের কষ্ট অপেক্ষাকৃত বেশি। তবে গরমে অতিষ্ঠ সবাই।
আগামী তিন দিন তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা কম; বরং এটি বাড়তে পারে। আসলে এপ্রিল মাসজুড়েই তাপপ্রবাহ থাকবে।মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক, আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ
যে চুয়াডাঙ্গার কথা দিয়ে প্রতিবেদন শুরু হলো, গতকাল সেখানেই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়—৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এ বছরের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। চুয়াডাঙ্গা পড়েছে খুলনা বিভাগের মধ্যে। গতকাল এ বিভাগে বয়ে গেছে তীব্র তাপপ্রবাহ।
কোনো এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য করা হয়। খুলনা বিভাগের পাশাপাশি রাজশাহী, টাঙ্গাইল ও পাবনা জেলায় বয়ে গেছে তীব্র তাপপ্রবাহ। দেশের আরও নানা স্থানে ছিল মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। রাজধানী ঢাকায় বয়ে গেছে মাঝারি তাপপ্রবাহ।
এমন পরিস্থিতিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল পরবর্তী তিন দিনের জন্য দেশে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে। এ সতর্কতা জারি করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আগামী তিন দিন তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা কম; বরং এটি বাড়তে পারে। আসলে এপ্রিল মাসজুড়েই তাপপ্রবাহ থাকবে। তবে সময়ভেদে এর মাত্রা কমবেশি হতে পারে। পাশাপাশি জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিও বাড়তে পারে।
কোনো এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য করা হয়।
এ মাসে অতি তীব্র তাপপ্রবাহের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেননি এই আবহাওয়াবিদ। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়ে গেলে তখন তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। গত বছরের ১৭ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা হয়েছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি ছিল গতবারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
এপ্রিল দেশের উষ্ণতম মাস। এ মাসে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের ৪৪টি স্টেশনের আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রতিদিন তা তুলে ধরে। গতকাল সন্ধ্যায় দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গতকাল এই ৪৪টি স্টেশনের মধ্যে শুধু নেত্রকোনা ও সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ছিল। সিলেটে তাপমাত্রা কম থাকার কারণ, গতকাল সেখানে বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে সিলেটেই—১৩ মিলিমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ খুলনা বিভাগসহ দেশের যেসব অঞ্চল দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর পাশাপাশি চাঁদপুর, মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থাও আজ একই থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহের এলাকা শনিবার (আজ) হয়তো বাড়বে না। তবে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহের এলাকা বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ খুলনা বিভাগসহ দেশের যেসব অঞ্চল দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে।
মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহের বাইরে আছে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগ। আজও এই দুই বিভাগে এমন অবস্থা থাকতে পারে বলে জানান আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক।
তবে এই গরমের মধ্যেও কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সে অনুযায়ী কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু–এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
গতকাল রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের ২৪ ঘণ্টায় এ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজধানীতে তাপমাত্রা বেড়েছে ২ ডিগ্রি
গতকাল রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের ২৪ ঘণ্টায় এ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, এই তাপপ্রবাহের সময় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। ঘাম ঝরে বেশি। আর সে জন্য মানুষের ভেতরে অস্বস্তির বোধ হয়।
এমন পরিস্থিতিতে প্রচুর পানি পান, রঙিন কাপড় না পরা এবং লবণমিশ্রিত পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, যত দূর সম্ভব রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। তবে শ্রমজীবী মানুষকে রোদে থাকতেই হয়। তাঁদের চেষ্টা করতে হবে একটানা রোদে না থেকে ছায়ার আশ্রয় নেওয়া।
এ সময়টায় হিটস্ট্রোক হতে পারে বলেও সাবধান করেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে রোদে থাকলে, বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ, বয়স্ক এবং শিশুদের এ সমস্যা হতে পারে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা]