ইলিশ যেভাবে জাতীয় মাছ হলো

ইলিশ মাছ
ফাইল ছবি

বর্ষার বৃষ্টি এবার বেশ দেরি করে শুরু হয়েছে। জুনে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে যখন বর্ষা বিদায় নেয়, এবার তখনই টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাই জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়তেও দেরি হয়েছে। দেশের অন্য যেকোনো মাছের চেয়ে ইলিশের দাম চড়া। এরপরও বর্ষায় ইলিশ কিনে খেতে চায় না, এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন। দেশের জাতীয় মাছ হিসেবে স্বীকৃতি ছাড়াও এই মাছ নিয়ে এ দেশের মানুষের আবেগ-উৎসাহের শেষ নেই।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশে প্রায় ৭৩৫ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ইলিশ কেন জাতীয় মাছ হলো—তা নিয়ে এখনো কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা সরকারি বা বেসরকারি নথি বা ইতিহাস গ্রন্থে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের সাগর-নদী, জলাশয় এবং মাছের আন্তসম্পর্কের ইতিহাস খুঁজতে গেলে উজান থেকে নেমে আসা ব্রহ্মপুত্র নদ আর গঙ্গার মতো বিশাল নদীর প্রসঙ্গ আসবে। ওই দুই অববাহিকা থেকে সৃষ্টি হওয়া হাজারো ছোট-বড় নদী বঙ্গোপসাগরে মিশে যাওয়ার ভৌগোলিক কার্যকারণ উঠে আসবে। এসব জলাশয়ে ঘুরে বেড়ানো মাছের মধ্যে ইলিশের পাশাপাশি চিতল মাছের পেটি, পাঙাশ মাছের ঝোল আর রুই মাছের মাথা নিয়েও বাঙালির আবেগ আর ভোজন রসিকতার অনেক প্রমাণ পাওয়া যাবে।

১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন দেশের জাতীয় মাছ হিসেবে ইলিশকে কেন নির্বাচন করা হলো, সে ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে কথা বলা হয় ১৯৭১ ও ১৯৭২ সালে প্রশাসন ও গবেষণার দায়িত্বে থাকা দেশের শীর্ষস্থানীয় ও প্রবীণ মৎস্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। যাঁদের অনেকেই ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ, ফল, ফুল, প্রাণীসহ নানা কিছু নির্বাচনের সময়ের সাক্ষী হয়ে আছেন। তবে তাঁদের অধিকাংশই ইলিশকে জাতীয় মাছ করার একক কোনো কারণ বলতে পারেননি। কারণ, ঐতিহাসিকভাবে দেশের নদ-নদীতে ইলিশ ছাড়াও রুই, কাতলা, বোয়াল, কই, চিংড়ি, পোয়া থেকে শুরু করে পুঁটি-ট্যাংরা মাছও জনপ্রিয় ছিল। ওই সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা এসব ব্যক্তিরা একটি ব্যাপারে একই ধরনের মতামত দিয়েছেন, তা হচ্ছে এই সময়ে এসে ইলিশ নিয়ে যতটা মাতামাতি দেখা যায়, ষাট বা সত্তরের দশকে ততটা ছিল না। ইলিশ জনপ্রিয় ছিল বটে, তবে একই ধরনের জনপ্রিয় মাছ আরও ছিল।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনে কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছিল এত মাছ থাকতে ইলিশ কেন জাতীয় মাছ হলো। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করা এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় মাছের তালিকায় ইলিশ যে প্রথম দিকে ছিল তা বলা যাবে না। বঙ্গবন্ধুর খাবারের পাতে বেশির ভাগ সময় পুঁটি, ট্যাংরা, মলা ও পাবদা থাকত। কালেভদ্রে ইলিশ খেতেন।

আরও পড়ুন

তবে বঙ্গবন্ধুর এই ঘনিষ্ঠ সহচর মনে করেন, শত শত বছর ধরে পদ্মার ইলিশের স্বাদ ছিল বিখ্যাত। দেখতে উজ্জ্বল আর বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। কোনো চাষাবাদ ছাড়াই এই মাছ সহজে ধরা যায়। এসব বিবেচনা করে বঙ্গবন্ধু ইলিশকে জাতীয় মাছ করতে পারেন।

ফরাসউদ্দিনের মতে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের খাদ্য উৎপাদন ও মজুত ছিল নাজুক অবস্থায়। কৃষকের গোলায় জমা থাকা সামান্য ধান আর সবজি ছাড়া খাবারের পর্যাপ্ত জোগান ছিল না। ওই সময়ে দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে ইলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৭২ সালে নদ-নদীগুলোতে ব্যাপক ইলিশ পাওয়া গিয়েছিল। গ্রামের দরিদ্র মানুষ ওই ইলিশ ধরে খেতেন। তাই বঙ্গবন্ধু এই মাছকে জাতীয় মাছ নির্বাচন করেছিলেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবদুল ওহাবের বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশে জাতীয় মাছ নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি খেয়াল রাখা হয় তা হলো, ওই মাছটি ওই দেশে বেশি পাওয়া যায় কি না। সেই অর্থে বিশ্বের মোট ইলিশের বেশির ভাগই বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারে পাওয়া যেত। এখন এককভাবে বাংলাদেশে বিশ্বের ৮৫ শতাংশ ইলিশ পাওয়া যায়। এই বিষয়টি ইলিশকে জাতীয় মাছ করার পেছনে বড় যুক্তি হিসেবে কাজ করেছে, যা পরবর্তী সময়ে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।

ইলিশ
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

ইলিশের জনপ্রিয়তার শুরু

১৯৮৩ সালে রমনা বটমূলে পয়লা বৈশাখের উৎসবে প্রথমবারের মতো পান্তা-ইলিশ খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়। আশির দশকের শুরুটা বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ বিন্যাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দশক। তৈরি পোশাক খাতের বিকাশ, প্রবাসী আয় ও দেশীয় শিল্পের বিকাশের সঙ্গে মধ্যবিত্তের পরিধিও তখন বাড়ছিল। একদিকে পিতৃপুরুষের ফেলে আসা গ্রামের স্মৃতি আর অন্যদিকে শহরে নতুন করে বাঙালি সংস্কৃতিকে পুনর্নির্মাণের চেষ্টা চলছে ঢাকা শহরে। বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বিশ্বায়নের সংস্কৃতির হাতছানিও তখন বাড়ছিল।

ঢাকা শহরকেন্দ্রিক এমন এক পালাবদলের সময়ে বাঙালি সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে পয়লা বৈশাখ পালন উদীয়মান মধ্যবিত্তের পরিচিতি নির্মাণের উপলক্ষ হয়ে ওঠে। ১৯৮৩ সালের এক ভোরে একদল তরুণ রমনা বটমূল এবং চারুকলা ইনস্টিটিউটের খোলা চত্বরে পান্তা-ইলিশের কয়েকটি অস্থায়ী দোকান দেন। মধ্যবিত্তের গ্রাম আর শহুরে সংস্কৃতিকে মেলানোর ওই অভিনব চর্চা এর পরের বছরগুলোতে ডালপালা মেলতে থাকে। উৎসবের  ওই পান্তা-ইলিশের প্রচলন মধ্যবিত্তের রান্নাঘর আর বৈঠকখানায় স্থান পেতে শুরু করে।

আরও পড়ুন

মধ্যবিত্ত যত বেশি ইলিশের দিকে ঝুঁকতে থাকে ইলিশের চাহিদা তত বাড়তে থাকে। অন্যদিকে দেশজুড়ে তখন চলছে মধ্যবিত্তের শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার চেষ্টাও।

শহুরে মধ্যবিত্তের বিকাশের সঙ্গে ইলিশের সম্পর্ক আছে। আশির দশকের শুরু থেকে এই ২০২২ সাল পর্যন্ত মধ্যবিত্তের বিকাশ চলছে। সেই সঙ্গে চলছে তাদের আত্মপরিচয় নির্মাণের ভাঙাগড়া। আশি ও নব্বই দশকের শুরুতে মধ্যবিত্তের অর্থনৈতিক বনিয়াদ গড়ে দেয় পোশাক কারখানা, ছোট ও মাঝারি শিল্প আর উপকূলজুড়ে একসময় সাদা সোনা হিসেবে চিহ্নিত চিংড়ি চাষের বিস্তার। ৯০-এরপর নতুনভাবে গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের ঘোরে বিভোর হয়ে পড়ে মধ্যবিত্ত মানুষ। শহরের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাচ্ছে, হাতে নগদ টাকা আসায় মধ্যবিত্তের ঘরে খাবার শীতল রাখার যন্ত্র রেফ্রিজারেটর শোভা বাড়াচ্ছে। বিশ্বায়নের নানা প্রভাবের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেশীয় সংস্কৃতির উপাদান হিসেবে ইলিশ মাছ খাওয়া, বাংলা পল্লিগীতিকে ফোক মিউজিক হিসেবে চর্চা করা, পয়লা বৈশাখ, পয়লা ফাল্গুন, একুশে ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস পালন হয়ে ওঠে বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়ের স্মারক।

তবে বাংলা অঞ্চল, যাকে আগে পূর্ব বাংলা বলা হতো—সেই সময়ের ঐতিহাসিক বই, লেখালেখি বা সাহিত্য-সংগীতে পয়লা বৈশাখে ইলিশ-পান্তা খাওয়া বা বছরের অন্যান্য সময়ে আয়োজন করে ইলিশ খাওয়ার চর্চা কিন্তু দেখা যায় না। বরং এই সময় অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিলে বাংলার কৃষকের ঘরে খোরাকির খাবার জোগাড় করাই কঠিন হয়ে যেত। অন্যদিকে বছরের ওই সময়টাতে ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌসুম। তখন ইলিশ মাছ ধরাও বরং ওই সুস্বাদু মাছটির বংশবিস্তার বা সংখ্যা বাড়ানোর পথে মস্ত বড় বাধা।

আশির দশক থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ইলিশের জন্য ক্রান্তিকালই বলা যাবে। কারণ এই সময় দেশে ধারাবাহিকভাবে ইলিশের উৎপাদন কমেছে। দেশের নদীর তীরে একের পর এক শিল্পকারখানা ও শহরের বিস্তার দূষণ বাড়াচ্ছিল। আর অন্যদিকে ফারাক্কার প্রভাবে পদ্মা নদী দিয়ে ইলিশের বিচরণও বন্ধ হয়ে যায়। একদিকে সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবে ইলিশের চাহিদা বাড়ছে, আবার অন্যদিকে নদীতে দূষণ আর পলি পড়ায় ইলিশের সংখ্যা কমছে। এই পরিস্থিতিতে ইলিশের দাম দ্রুত বাড়তে থাকে। ইলিশ যত দুষ্প্রাপ্য হতে থাকে একে নিয়ে মধ্যবিত্তের উৎসাহও বাড়তে থাকে।

দেশভাগের স্মৃতি ও বাঙালদের ইলিশ বন্দনা

তবে ইলিশ নিয়ে এই উৎসাহ-উন্মাদনা সেই ৫০-এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে আছে। ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর পর ৫০-এর দশকে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা চলচ্চিত্রগুলোতে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের ঘটি আর পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিমবঙ্গে যাওয়া বাঙালিদের বাঙাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কলকাতায় ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ চলচ্চিত্রে ঘটিরা চিংড়ি আর বাঙালের ইলিশ নাম নিয়ে ঝগড়ায় মেতে ওঠা প্রতীকী অর্থেও একটি বড় সত্যকে সামনে নিয়ে আসে। তা হচ্ছে, দেশভাগের সময় জন্মভূমি ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে যাওয়া পূর্ববাংলার বাঙালিরা সঙ্গে করে ইলিশের স্মৃতিও নিয়ে যায়।

ইলিশ
ছবি: প্রথম আলো

পদ্মা নদীর পাড়ে বড় হওয়া রাজশাহী, যশোর, খুলনা, বরিশাল, চাঁদপুর আর বিক্রমপুরের বাঙালদের ইলিশের স্মৃতি তাঁদের চলচ্চিত্র, সাহিত্য ও কবিতায় ঠাঁই পায়।

যে কারণে বুদ্ধদেব বসুর ইলিশকে ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’ নামে চিহ্নিত করে কবিতা লেখা আর আনন্দবাজার পত্রিকায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ইলিশ নিয়ে হাহাকার করে একের পর এক লেখা ছাপা হয়। এসব লেখা সেই দেশভাগের স্মৃতিকে যেন উসকে দেওয়ার কথাই মনে করে দেয়। এখনো বর্ষায় পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকা আর টেলিভিশন চ্যানেলে ইলিশ বন্দনা করা হয়।

মধ্যবিত্তের অর্থনীতি ও ইলিশের বৃদ্ধি

ইতিহাস থেকে এবার বর্তমানে ফেরা যাক। বর্তমানে এসে ২০০০ সালের পর সরকারের ইলিশ রক্ষায় নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। ৮০-এর দশক থেকে সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা ইলিশ মাছ রক্ষায় সরকার একের পর এক উদ্যোগ নিতে থাকে। ইলিশের জন্য অভয়াশ্রম ঘোষণা ও জাটকা রক্ষার মতো উদ্যোগের সুফল আসতে শুরু করে ২০১০ সাল থেকে। দেশে ইলিশের উৎপাদন দ্রুত বাড়তে থাকে। ওই সময়ে দেশে মানুষের আয় আর বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়তে শুরু করে। ঢাকা ছাড়াও বড় শহরগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ আর রেফ্রিজারেটর সমান তালে বাড়ে। দ্রুত পচনশীল এই মাছ সহজেই সংরক্ষিত রাখা যেত ওই রেফ্রিজারেটরে।

ইলিশের অবতরণ কেন্দ্র বা ঘাটগুলোতে বরফ কলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, ইলিশ সংরক্ষণে হিমাগার তৈরি হওয়ার মতো অবকাঠামোগুলো বেসরকারি খাতের মাধ্যমে দ্রুত সম্প্রসারিত হতে থাকে। একদিকে অবকাঠামোর বিস্তার, অন্যদিকে মানুষের আয় বেড়ে যাওয়া আর ভালো দাম পাওয়ায় ইলিশের পেছনে মৎস্যশিকারি ও ফড়িয়াদের বিনিয়োগ বাড়তে থাকে। ফলে সমুদ্রে বড় জাহাজ ও নৌকায় করে ইলিশ ধরতে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। ২০০৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দেশে ইলিশের উৎপাদন দুই লাখ টন থেকে প্রায় ছয় লাখ টনে পৌঁছায়। ঢাকা শহরের মধ্যবিত্তের পাশাপাশি মফস্বলের মধ্যবিত্ত, এমনকি গ্রামীণ মধ্যবিত্তের পাতে ইলিশ স্থান পেতে থাকে। এভাবে ৭০-এর দশকের শুরুতে দেশের দরিদ্র মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হওয়া ইলিশ এক সময় উচ্চবিত্তের মৎস্য বিলাসে পরিণত হয়। ২০১৫ সালের পর ইলিশের উৎপাদন বেড়ে, দামও কিছু কমে গিয়ে তা মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে চলে আসে। বাংলাদেশের মানুষের আত্মপরিচয়ের প্রতীক ও জাতীয়তাবাদী গর্বের উপাদান হয়ে ওঠা ইলিশ সত্যিকার অর্থে জাতীয় মাছ হয়ে ওঠে।

এ ব্যাপারে গবেষণা সংস্থা পিপিআরসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বেশ কয়েকটি গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সম্পর্ক আছে। কারণ, সরকার এই মাছ রক্ষায় অনেক অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে। বছরের কয়েকটি নির্দিষ্ট সময়ে মা মাছ ও জাটকা ধরা নিষিদ্ধ করেছে। আর মৎস্যশিকারিদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা তৈরি করছে। যে কারণে দেশে ইলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই মাছ এখনো দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে আসেনি। কারণ, এই মাছ ধরা থেকে শুরু করে পুরো বিপণনব্যবস্থা একটি সামন্তচক্রের হাতে বন্দী। এ কারণে ইলিশের দাম কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। ওই চক্র ভাঙতে পারলে জাতীয় এই মাছ সবার ক্রয়সীমার মধ্যে আসবে।